প্রস্তুত অর্থমন্ত্রী, ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট পেশ বৃহস্পতিবার
প্রকাশ: ৮ জুন ২০২২, ১১:৪৯ | আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১৭
সবকিছু এখন চূড়ান্ত। বৃহস্পতিবার (৯ জুন) জাতীয় সংসদে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের নতুন বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল। করোনা মহামারির প্রভাব কাটিয়ে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পর্যায়ে শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছে। একইসঙ্গে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নে দেশে ভোগ্যপণ্যের দাম আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট চূড়ান্ত করেছে সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানিয়েছে, আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার যে বাজেট প্রস্তাব করা হচ্ছে, এটি দেশের মোট জিডিপির ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ। প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নে (বৈদেশিক অনুদানসহ) ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর দেবে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এটি জিডিপির ৮ দশমিক ৪ শতাংশ। এনবিআর-বহির্ভূত কর ১৮ হাজার কোটি টাকা। কর-বহির্ভূত আয় বাবদ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। ফলে ঘাটতি বাজেট (অনুদানসহ) হবে ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। আর অনুদান ছাড়া ঘাটতির অঙ্ক দাঁড়াবে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, করোনা মহামারির প্রভাব কাটিয়ে অর্থনীতির পুনরুদ্ধার, শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নে দেশে ভোগ্যপণ্যের দাম আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কার মধ্যে সরকার ভর্তুকি বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মরিয়া। এ জন্য অর্থনীতির সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সরকার ব্যয় কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল নিজেও বলেছেন, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধে তিনি চাপবোধ করছেন। তবে সবশ্রেণির মানুষ যাতে উপকৃত হন, এভাবে তিনি বাজেট প্রণয়ন করছেন। এই বাজেটে ছোট-মাঝারি ও বড় শিল্প উদ্যোক্তারা সবাই উপকৃত হবেন। সাধারণ মানুষের কষ্ট হবে— এমন কিছু তিনি বাজেটে চাপিয়ে দেবেন না বলেও আশ্বস্ত করেছেন।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বর্তমান সরকারের এবারের মেয়াদে আসন্ন বাজেট এই সরকারের একটি পূর্ণাঙ্গ শেষ বাজেট। কারণ, আগামী বছরের জুনে যে বাজেট পেশ হবে, সেটি হবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের। ২০২৩ সালের ১ জুলাই শুরু হওয়া এই অর্থবছর শেষ হবে ২০২৪ সালের ৩০ জুন। এর কমপক্ষে ৬ মাস আগে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে অথবা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে দেশে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সেই বিবেচনায় বর্তমান সরকার এবারই পুরো বাজেট বাস্তবায়নের সুযোগ পাচ্ছে। পরবর্তী বাজেট বাস্তবায়নের সুযোগ পাবে অর্ধেক।
ফলে সরকার এবারের বাজেটে ব্যাপক কর্মসৃজনের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে চাচ্ছে। এজন্য ধরা হয়েছে বিনিয়োগের বড় লক্ষ্যমাত্রা। নতুন জিডিপির ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হয়েছে বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা। এর মধ্যে বেসরকারি বিনিয়োগ ২৪ দশমিক ৯ শতাংশ এবং সরকারি বিনিয়োগ ৬ দশমিক ৬ শতাংশ।
নানাবিধ সংকটের মধ্যে আগামী বছর রাজস্ব আহরণ একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সংশ্লিষ্টরা। নতুন বছরে কর আদায় করতে হবে ৩ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআরের আদায়কৃত কর থেকে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা এবং এনবিআরবহির্ভূত কর থেকে আদায়ের লক্ষ্য ১৮ হাজার কোটি টাকা। এ দুটি খাতের কর ব্যতীত রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা। এ বছর বৈদেশিক অনুদান পাওয়ার আশা করা হচ্ছে ৩ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদান পরিশোধ করতে হয় না। এজন্য এটি সরকারের আয় মনে করা হয়।
এদিকে অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে বিভিন্ন খাতের মোট ভর্তুকি প্রাক্কলন করা হয়েছে ৮২ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১ দশমিক ৯ শতাংশ। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ভর্তুকি ও প্রণোদনা খাতে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৬৬ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১ দশমিক ৭ শতাংশ।
জানা গেছে, নতুন ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে এনবিআর-বহির্ভূত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হবে ১৮ হাজার কোটি টাকা। কর-বহির্ভূত রাজস্ব (এনটিআর) আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪৫ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হচ্ছে। নতুন বাজেটে আদায়ের এই লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে যথাক্রমে ১৩ ও ৫ শতাংশ।
নতুন বাজেটে ঘাটতি জিডিপি ৫-এর ঘরেই থাকছে। নতুন বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এটি জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। জিডিপির তুলনায় ঘাটতি কমলেও টাকার অঙ্কে ঘাটতি বাড়ছে ৩০ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা। ঘাটতি পূরণে আগামী অর্থবছরের বাজেটে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নেওয়ার টার্গেট রয়েছে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়া হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া অন্যান্য খাত থেকে নেওয়া হবে ৫ হাজার ১ কোটি টাকা। এছাড়া বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ ও অনুদান (নিট) গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৫ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত দুবছর করোনার কারণে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড থমকে ছিল। উন্নয়ন ব্যয় কাটছাঁট করে স্বাস্থ্য খাতে অতিরিক্ত ব্যয় করা হয়। তবে এখন কোভিড-১৯ পরবর্তী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল হচ্ছে। এ জন্য সরকার আগামী বছর উন্নয়ন খাতে ব্যয় বেশি করার পরিকল্পনা নিয়েছে। নতুন বাজেটে উন্নয়ন খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি-এডিপি’র আকার ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। এডিপি-বহির্ভূত বিশেষ প্রকল্পে ৭ হাজার ৭২১ কোটি টাকা এবং কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচিতে ব্যয় করা হবে ২ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত