পার্ল হারবার আক্রমণের কারণ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৭ ডিসেম্বর ২০২২, ১৩:৩৪ |  আপডেট  : ১৮ মে ২০২৪, ০৯:২৮

পার্ল হারবার আক্রমণ ছিল ইতিহাসের একটি অপ্রত্যাশিত সামরিক অভিযান যা জাপান সাম্রাজ্যের নৌবাহিনী কর্তৃক ৭ ডিসেম্বর, ১৯৪১ সালের ভোরে (জাপানের সময়: ৮ ডিসেম্বর, ১৯৪১) হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের পার্ল হারবারে অবস্থিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমান ও নৌ-ঘাঁটিতে আক্রমণ পরিচালিত হয়। এ আক্রমণটি জাপান সাম্রাজ্যের জেনারেল হেডকোয়ার্টারের অপারেশন জেড-এর পরিকল্পনায় হাওয়াই অপারেশন বা অপারেশন এআই নামে সমধিক পরিচিত।হাওয়াই দ্বীপে ঐ দিনটি ছিল ছুটির দিন। সেখানে আমেরিকান নৌবাহিনীর প্যাসিফিক ফ্লিটকে জাপানী নৌবাহিনীর বিরুদ্ধে আকাশসীমা অবরোধের জন্য ঘাঁটিতে নিয়ে আসা হয়েছিল।

ওয়াহো দ্বীপের পার্ল হারবারে ১৯০৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নৌ-ঘাঁটি স্থাপন করে। তখন থেকেই এটি জাপান সাম্রাজ্যের নৌবাহিনীর চোখে ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পার্ল হারবার নৌ-ঘাঁটি অত্যন্ত সুরক্ষিতভাবে ছিল যা ওয়াহো'র দুর্গ হিসেবে পরিচিত। দুর্গের অভ্যন্তরে যুদ্ধজাহাজের বন্দুকের গুলি, বোমাবর্ষণ ৪০ সে.মি প্রস্থের স্থাপনকৃত দেয়াল ভেদ ভিতরে প্রবেশ করা ছিল অসম্ভব। সেখানে কোন পতিত জমি না রাখায় প্রতিপক্ষের নৌবাহিনীর গোলাবর্ষণ ও অবতরণ করে সাফল্য লাভ করা সম্ভব নয়। কৌশল প্রয়োগ করে জাপানের সামরিক বাহিনী ঐ ঘাঁটিতে অনেক নির্মাণ শ্রমিককে গুপ্তচর হিসেবে প্রেরণ করে। ফলে, জাপান কর্তৃপক্ষ তাদের মাধ্যমে নৌ-ঘাঁটির বিস্তারিত বিবরণ জানতে সক্ষম হয়।

পার্ল হারবার আক্রমণটিতে অনেকগুলো প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে জড়িত করেছিল জাপান।

প্রথমত, আক্রমণের ফলে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমেরিকান যুদ্ধ জাহাজগুলো ধ্বংস হয়। এতে জাপানের দখলকৃত ডাচ ইস্ট ইণ্ডিজ এবং মালয়ে প্যাসিফিক ফ্লিটের হস্তক্ষেপ থেকে দূরে রাখা হয়।
দ্বিতীয়ত, আশা করা হয়েছিল যে, আক্রমণের ফলে জাপান তার সামরিক অবস্থানকে আরো মজবুত ও নৌ-শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাবে। এর ফলে ১৯৪০ সালে স্বাক্ষরিত উইনসন-ওয়ালশ্‌ চুক্তি বাতিল হয়ে যাবে যদি কোনো কারণে জাপান যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বিজয় অর্জন করতে পারে।
সবশেষে, ঐক্যবদ্ধ আমেরিকানদের নৈতিক মনোবল বহুলাংশে হ্রাস পাবে। ফলে মার্কিন সৈন্যরা পশ্চিমের প্রশান্ত মহাসাগর ও ডাচ ইস্ট ইণ্ডিজে অগ্রসর না হয়ে যুদ্ধের চিন্তাধারা থেকে নিজেদেরকে বিচ্যূত করবে।
নীতিগত অবস্থানে থেকে যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করাকেই প্রধান লক্ষ্যবস্তু হিসেবে গ্রহণ করে জাপান। ঐ সময়ে বিশ্বের যেকোনো দেশের নৌবাহিনীর তুলনায় মার্কিনীদের আভিজাত্য ও গর্বের প্রতীক ছিল যুদ্ধজাহাজগুলো। এছাড়াও সামগ্রিকভাবে জাপান দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রবল পরাশক্তি রাষ্ট্র হিসেবে আসীন ছিল।

প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌবহর পার্ল হারবারে নোঙর করার ফলে নির্দিষ্ট দুটি অসুবিধাকে মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়:

শত্রুপক্ষের লক্ষ্যবস্তু হিসেবে আক্রান্ত জাহাজগুলো অগভীর জলে অবস্থান করবে। এতে তুলনামূলকভাবে সহজপন্থায় উদ্ধারকার্যে দ্রুত অংশগ্রহণ করাসহ প্রয়োজনে জাহাজগুলোকে মেরামত করে পুনরায় ব্যবহারোপযোগী করা যাবে। অধিকাংশ নাবিকই আক্রমণকালীন সময়ে নিজেদের প্রাণ রক্ষা করতে পারবেন। অনেকেই হয়তো উপকূল ত্যাগ করবে অথবা হারবার থেকে তাদেরকে উদ্ধার করা হবে।

দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ অসুবিধা হলো সময়জনিত কারণ। জাপানিরা জানতো যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌবহরের অধীনে তিনটি বিমান বহনকারী যুদ্ধ জাহাজ (ইউএসএস এন্টারপ্রাইজ, ইউএসএস লেসিংটন এবং ইউএসএস সারাতোগা) তখনো পার্ল হারবারে প্রবেশ করেনি। অ্যাডমিরাল মাহানের চূড়ান্ত যুদ্ধের মতবাদ - বিশেষ করে সর্বোচ্চসংখ্যক যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করার ঘোষণায় আইজেএন-এর শীর্ষ স্থানীয় কর্মকর্তা ইমামোতো যুদ্ধে যাবার লক্ষ্যে এগিয়ে যান।
জাপানীদের আস্থা ও বিশ্বাস ছিল যে, তাদের সামরিক ক্ষমতা প্রয়োগের ফলে একটি ছোট ও যুদ্ধে সহজভাবে বিজয় অর্জনসহ অন্যান্য লক্ষ্যমাত্রা বিশেষত নৌ জেটি, তেল সংরক্ষণাগার, ডুবোজাহাজ ঘাঁটি নিরাপদে দখল করা যাবে। তাদের সামরিক চিন্তাধারায় উক্ত সমস্ত সম্পদ বৃহৎ যুদ্ধের আগে দখল করা হলে দখলকৃত স্থাপনায় ফেলে যাওয়া সকলপ্রকার সুযোগ-সুবিধার ব্যাপক প্রভাব অনুভূত হবে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত