পশ্চিমবঙ্গের সাবেক শিক্ষা মন্ত্রীর বান্ধবীর বাংলাদেশ কানেকশন খুঁজছে ইডি
প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২২, ১২:০৮ | আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:০৮
হাওয়ালার গন্ধ আর গোপন নেই। আর হাওয়ালায় টাকা পাচার মানেই ভিন্ দেশের যোগ। নিয়োগ-দুর্নীতি মামলার টাকা পাচারের ক্ষেত্রে তদন্তকারীদের চোখে সেই অন্য দেশটা হল পড়শি বাংলাদেশ। এবং অর্পিতা মুখোপাধ্যায় ছাড়াও হাওয়ালায় সেই টাকা পাচারে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী তথা বর্তমান শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অন্য এক ‘বান্ধবীর’ কথা বলছেন তাঁরা, যে-মহিলা পেশায় শিক্ষিকা এবং যিনি এখন বেপাত্তা।
প্রাথমিক তদন্তের পরে ইডি বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের কিছু কর্তা জানাচ্ছেন, পার্থবাবুর ‘বান্ধবী’ বলে পরিচিত মহিলার মাধ্যমে সেই টাকায় বাংলাদেশে নাকি সম্পত্তিও কেনা হয়েছে। এবং তার সঙ্গে বাংলাদেশের প্রশাসনেরও কিছু শীর্ষ কর্তা জড়িত থাকতে পারেন বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করছে ইডি। তদন্তকারীদের দাবি, বাংলাদেশের ওই সব প্রভাবশালী ব্যক্তির মাধ্যমেই পার্থবাবুর ওই বান্ধবী সে-দেশে জমি ও বাড়ি কিনেছেন।
শুক্রবার শিল্পমন্ত্রীর বাড়িতে ইডি হানার পর থেকেই তাঁর ওই দ্বিতীয় বান্ধবীর মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন উত্তর ভারত দেখাচ্ছে বলে জানান তদন্তকারীরা। তাঁদের অনুমান, ইডি হানার খবর পেয়ে তিনি হয়তো কলকাতা ছেড়ে গা-ঢাকা দিয়েছেন। তদন্তকারীদের দাবি, ওই মহিলার সঙ্গে মন্ত্রীকে নানা অনুষ্ঠানে দেখা গিয়েছে। ওই শিক্ষিকার যে নিয়মিত বাংলাদেশে যাতায়াত রয়েছে, তার অনুকূলে কিছু তথ্যপ্রমাণও মিলেছে। বাংলাদেশের প্রশাসনের বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে বলে দাবি তদন্তকারীদের।
ইডি-র দাবি, অর্পিতার বাড়ি থেকেও এমন কিছু নথি পাওয়া গিয়েছে, যাতে বাংলাদেশের যোগসূত্র স্পষ্ট। তাঁর ফ্ল্যাটে আরও টাকা ছিল এবং তা প্যাকেটে মোড়া অবস্থায় অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জেরায় অর্পিতা নাকি কবুল করেছেন।
তদন্তকারীদের দাবি, স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) ও প্রাথমিক টেট দুর্নীতি কাণ্ডে মূল কার্যালয় ছিল অর্পিতার ডায়মন্ড সিটির ফ্ল্যাট। পার্থবাবু ও অর্পিতার কাছ থেকে দু’জনের নামে একাধিক সংস্থা ও জমির দলিল উদ্ধার হয়েছে। পেশায় শিক্ষিকা অন্য ‘পার্থ-বান্ধবীর’ কাছে জমি, বাড়ি-সহ বহু সম্পত্তির দলিল মিলতে পারে বলে মনে করছে ইডি।
প্রথম থেকেই বলা হচ্ছে, নিয়োগ-দুর্নীতিতে বাজেয়াপ্ত করা অর্থ আসলে হিমশৈলের চূড়া মাত্র। আস্ত সেই হিমশৈলটা কেমন, ক্রমশ তার আঁচ দেওয়ার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। এ-পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে কিছু কম ২২ কোটি টাকা। তাতেই আলোড়িত জনসমাজ। সোমবার আদালতে ইডি-র আইনজীবীর দাবি ছিল, দুর্নীতির অঙ্ক ১০০ কোটি টাকার কাছাকাছি! আর প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে মঙ্গলবার ইডি-র দাবি, টাকার অঙ্কে দুর্নীতির মাত্রা ২০০ থেকে২৫০ কোটি!
যত দিন যাচ্ছে, ততই এমন ভাবে লাফিয়ে বাড়ছে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত অর্থের অঙ্ক। তদন্তকারীদের দাবি, দীর্ঘ পাঁচ-সাত বছর ধরে লক্ষ লক্ষ টাকায় সরকারি চাকরি বিক্রি করা হয়েছে। ফলে টাকার অঙ্কের বেড়ে চলাটা কোনও ভাবেই অস্বাভাবিক নয়।
টাকার অঙ্কের মতো নিয়োগ-দুর্নীতিতে জড়িত লোকের সংখ্যাও বাড়বে বলে ইডি-র ধারণা। শিল্পমন্ত্রী ও অর্পিতার বাড়ি ও ফ্ল্যাট থেকে কিছু নথি ও নগদ টাকা পাওয়া গিয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি, একা পার্থবাবু এই দুর্নীতিতে জড়িত নন। আরও বেশ কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির কাছে টাকার ভাগ পৌঁছেছে। ইডি-র অনুমান, টাকা পৌঁছে থাকতে পারে প্রশাসনের মধ্যস্তরের কিছু ব্যক্তির কাছেও। আবার প্রভাবশালীদের মাধ্যমে ‘অর্পিতা’র মতো বান্ধবীদের কাছেও পৌঁছে থাকতে পারে টাকা। এমনকি অর্পিতা ছাড়াও পার্থবাবুর অন্যান্য সঙ্গীর কাছে টাকা ও সম্পত্তি পাওয়া যেতে পারে বলে মনে করছেন ইডি-কর্তারা। সেই সব টাকা ও সম্পত্তির পরিমাণ একত্র করলে অঙ্কটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে অর্থাৎ হিমশৈলটা কত বড়, আপাতত তার আন্দাজ করতে পারছে না ইডি-ও।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত