পদ্মাসেতু অর্থনীতির সেতু, পদ্মাসেতু রাজনীতির সেতু 

  নির্তেশ সি দত্ত

প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২২, ১০:০৭ |  আপডেট  : ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৮

বহু প্রতীক্ষিত পদ্মাসেতু উদ্বোধন হয়ে গেল ২৫ জুন ২০২২। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরের ইতিহাসে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো, সবচেয়ে বড় যোগাযোগ প্রকল্প পদ্মাসেতু। নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ১১ বছরে নির্মিত হয়েছে দুঃসাধ্য এই পদ্মাসেতু। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মাসেতু নির্মাণ করতে মোট ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। সেতু নির্মাণে কস্ট ওভাররান এবং টাইম ওভাররান হয়েছে।

পদ্মাসেতু উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, 'বহু বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে আর ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে প্রমত্তা পদ্মার বুকে আজ বহু- কাঙ্ক্ষিত সেতু দাঁড়িয়ে আছে। এই সেতু শুধু ইট-সিমেন্ট-স্টিল-লোহার কংক্রিটের একটি অবকাঠামো নয়, এ সেতু আমাদের অহংকার, আমাদের গর্ব, আমাদের সক্ষমতা আর মর্যাদার প্রতীক। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের আবেগ, আমাদের সৃজনশীলতা, আমাদের সাহসিকতা, সহনশীলতা আর জেদ।'

অর্থনীতিবিদরা বলছেন- এই সেতু বাংলাদেশের জন্য একটি 'নেশন বিল্ডিং প্রজেক্ট' বা জাতি গঠণের প্রকল্প। কেন পদ্মাসেতু আমাদের জাতি গঠণের প্রকল্প? কারণ, পদ্মাসেতু যেমন অর্থনৈতিক সেতু তেমনি রাজনৈতিক সেতু। এই সেতু শুধু অর্থনীতি উন্নয়ন ঘটাবে- সেজন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, রাজনীতির জন্যও সমান গুরুত্বপূর্ণ। এই রাজনীতি শুধু আওয়ামিলীগের রাজনীতি হিসেবে বিবেচনা করলে সেটা অদূরদর্শীতা হবে। এর বহুবিধ পলিটিকাল মাইলেজ রয়েছে। এই সেতু শুধু বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন রাজনীতির সেতু নয়, ভূরাজনীতির সেতু, বৈশ্বিক রাজনীতির সেতু।

পদ্মাসেতু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। এই সেতুর মাধ্যমে সড়ক ও রেলপথে দেশের দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার প্রায় তিন কোটি মানুষের ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সাথে সড়ক পথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করবে। ফলে এ অঞ্চলের মানুষের একদিকে দীর্ঘদিনের ভোগান্তির লাঘব হবে, অন্যদিকে অর্থনীতি বেগবান হবে। পরিবহন সহজলভ্য হওয়ায় একদিকে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে আরেকদিকে বিনিয়োগ বাড়বে। আশা করা হচ্ছে এ সেতু জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে এক দশমিক দুই থেকে তিন শতাংশ পর্যন্ত অবদান রাখতে সক্ষম হবে এবং প্রতি বছর দশমিক আট থেকে চার শতাংশ পর্যন্ত দারিদ্র বিমোচন ঘটাবে। এছাড়া মংলা বন্দর ব্যবহারের সাপেক্ষে ভারত, নেপাল, ভুটানসহ আরো বেশ কিছু দেশ পদ্মাসেতুর সুবিধা পাবে। অর্থাৎ সেসব দেশেও অর্থনৈতিক উন্নয়নে এই সেতুর ভূমিকা রাখার সম্ভাবনা রয়েছে। চিন বলছে- তাদের বেল্ট রোডে এই সেতুও যুক্ত হবে যদিও বাংলাদেশ এখনো সেকথা বলছে না।

পদ্মাসেতুকে ঘিরে ইতোমধ্যে ইতিবাচক রাজনৈতিক প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। সেতুটি নির্মাণে সরকারকে বিরোধীদলসহ দেশীয় যেসব বিরোধিতার মোকাবেলা করতে হয়েছে তারা এখন সেসব বিরোধিতা থেকে বেরিয়ে এসে পদ্মাসেতুর বাস্তবতাকে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে যা নিশ্চিতভাবেই আওয়ামীলীগের আগামী রাজনীতিতে ভূমিকা রাখবে।

বিশ্বব্যাঙ্ক একসময় মুখ ফিরিয়ে নিলেও এখন বলছে- সেতুর কাজ শেষ হওয়ায় তারা আনন্দিত। বাংলাদেশ এ সেতুর মধ্য দিয়ে লাভবান হবে। বিশ্ব ব্যাঙ্ক দীর্ঘদিনের সহযোগী হিসেবে নিবিড়ভাবে বাংলাদেশের পাশে আছে। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বল বলেছেন, 'এটি একটি আনন্দের খবর। পদ্মা সেতু বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বিরাট অবদান রাখবে। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার এটিই প্রকৃত সময়। দেশীয় অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কাজ সম্পন্ন করায় বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী। আমরা এ সেতুর গুরুত্ব স্বীকার করি। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জনগণ বিপুল অর্থনৈতিক সুবিধা পাবে।'

 এছাড়া পাকিস্তানসহ অন্যান্য রাষ্ট্রও পদ্মাসেতুর ইতিবাচক বাস্তবতা স্বীকার করতে শুরু করেছে।
 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত