পঞ্চগড়ে বাক-প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জমি দখলের চেষ্টা, পরিবারের নারী সদস্যদের নির্যাতন
প্রকাশ: ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৮:২৬ | আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০:৩০
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার শালডাঙ্গা ইউনিয়নের ছত্র-শিকারপুর এলাকার মৃত রফিজ উদ্দিনের ছেলে বাক প্রতিবন্ধী রাকিবুল ইসলামের নিজ ভোগ-দখলীয় জমি দখল করার চেষ্টা, পরিবারের উপর আক্রমনের ঘটনা ঘটেছে। আহত হয়েছে প্রতিবন্ধির মা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এবং স্ত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে এ অবস্থায় ওই বিরোধপূর্ন জমিতে বোরো ধানের রোপা লাগিয়ে জমি দখলে নিয়েছে আসামী পক্ষ। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার (৩ ফেব্রয়ারি) দুপুর ৩ টার দিকে। মামলা ও ওই পরিবারের অভিযোগ সূত্রে জানা যায় একই এলাকার প্রভাবশালী আব্দুর রশীদ ও হেলালের নেতৃত্বে একটি ভূমিদস্যু চক্র। এসময় প্রতিবন্ধি রাকিবুল ইসলামের বৃদ্ধা মাকে হত্যা করার চেষ্টা, ও তার যুবতী স্ত্রীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করা হয়। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া কর্ণধার প্রতিবন্ধী রাকিবুল ইসলামের ৭ বিঘা জমি বে- দখল করে প্রতিবেশী প্রভাবশালী ব্যাক্তিরা।
এমতাবস্থায় উক্ত ৭ বিঘা জমি অসহায় রাকিবুল কে দখল করে দেওয়ার প্রতিশ্রতি দিয়ে সু-সম্পর্ক গড়ে তোলেন প্রতিবেশী আব্দুর রশীদ ও হেলাল। এমতাবতাবস্থায় রাকিবুলকে সাংসারিক প্রয়োজনে ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা হাওলাত দেন আব্দুর রশীদ। ওই টাকা দেওয়ার সময় স্টাম্পে উল্লেখ করে টাকা দেন । উক্ত স্টাম্পে আগামী ২৮শে ফেব্রয়ারী ২০২৪ ইং তারিখে টাকা ফেরত প্রদানের কথা উল্লেখ থাকে। কিন্তু এরই মাঝে প্রভাবশালী আব্দুর রশীদ ও হেলাল সুকৌশলে টাকার পরিবর্তে জমি দাবী করে, এমতাবস্থায় প্রতিবন্ধী রাকিবুল প্রতিপক্ষ আব্দুর রশীদ ও হেলাল গং দের বলেন স্টাম্পে উল্লেখিত তারিখে আপনাদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে। কিন্তু প্রতিপক্ষ টাকা নয় জমি নিতে চায়।
এজাহার সূত্রে পাওয়া যায়, নিজ ভোগ দখলীয় জমিতে চলতি মৌসুমে ইরি রোপণ করার উদ্দেশ্যে প্রতিবন্ধী রাকিবুল ইসলাম এর মা ও তার স্ত্রী হাজিরা লোকজন সহ জমিতে কাজ চলমান অবস্থায় প্রতিপক্ষ আব্দুর রশীদ ও হেলাল গং এসে রাকিবুল ইসলাম এর মা মোছাঃ রোকেয়া বেগমকে চর-থাপ্পর কিল ঘুষি মারার এক পর্যায়ে ভুক্তভোগী রাকিবুল ইসলাম এর মাকে উক্ত জমিতে কাঁদা মাটির নিচে মাথা ঠেসে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করার চেষ্টা করে। এ সময় রাকিবুলের স্ত্রী মোছাঃ জেসমিন আক্তার জুঁই এসে তার শাশুড়ীকে প্রাণে রক্ষা করে রাকিবুল তার মা কে চিকিৎসার জন্য দেবীগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় রাকিবুলের স্ত্রীকে শ্লীলতাহানি করা হয় মর্মে দেবীগঞ্জ থানায়, চার জনের নাম উল্লেখ করে একটি এজাহার দায়ের করেন রাকিবুল ইসলাম। উক্ত ঘটনার অভিযুক্তরা হলেন মৃত ময়দান আলীর পুত্র মোঃ আব্দুর রশিদ (৪৫), মৃত ধুলু মাসুদের পুত্র মোঃ হেলাল উদ্দীন (৪০),মৃত ময়দান আলীর আরো দুই সন্তান মোঃ আবু তালেব (৫০) ও মোঃ গোলাপ চাঁন (৪৪) সর্বসাং-ছত্র শিকারপুর।
ভূক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসী জানায় উল্লেখিত আব্দুর রশীদ ও হেলাল গং প্রভাবশালী হওয়ায় বার বার হয়রানির শিকার হচ্ছে অসহায় প্রতিবন্ধী রাকিবুল ইসলামের পরিবার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক শিক্ষক বলেন আব্দুর রশীদ ও হেলাল গং ভূমিদস্যু হিসেবে এলাকায় পরিচিত। ইতি পূর্বে তারা এভাবে আরো কয়েকটি অসহায় পরিবারের জমি দখল করে নিয়েছে। অভিযোগ আছে ভূমিদস্যুতায় জড়িত এই চক্রটি সবাইকে ম্যানেজ করেই জোড়পূর্বক অন্যের জমি দখল করে। উক্ত ভূমিদস্যু দের কবল থেকে মুক্তি পাওয়া অসম্ভব। উক্ত ঘটনার বিষয়ে প্রতিবন্ধী রাকিবুল ইসলাম বলেন, আমি অসহায় মানুষ, আইনের আশ্রয় নিয়েছি, আমার মা উক্ত ঘটনার পরদিন থেকে দেবীগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি আমি আছে।আমার মায়ের পাশে সর্বক্ষণ থাকি।
এমতাবস্থায় মামলার এজাহারে উল্লেখিত আসামিগণ পূনরায় সোমবার (৪ ফেব্রয়ারি) দুপুর ১টার দিকে আমার জমিতে হাল চাষ দেন। আমি এই বিষয়টি দেবীগঞ্জ থানায় জানানোর পরেও মঙ্গলবার ভোর রাতে আমি জানতে পারি আমার জমিতে ইরি ধানের চারা রোপন করছেন ৩০/৪০ জন মানুষ নিয়ে আসামিগণ।জরুরী সেবা নিতে ৯৯৯ লাইনে কল করি এবং সকাল ছয়টা ৪৯ মিনিটে দেবীগঞ্জ থানার ডিউটি অফিসারের সাথে কথা বলি ডিউটি অফিসার বলেন আপনার মামলার আইও ঘটনাস্থলে যাচ্ছে এ বলে লাইনটি কেটে দেন। আমার মামলার আইও ঘটনাস্থলে যাওয়ার কথা থাকলেও তিনি ঘটনাস্থলে যাননি। সকালে আমার পরিবারের লোকজন সহ থানায় গিয়ে সরাসরি ওসি স্যারের সাথে কথা বললে, ওসি স্যার বলেন আপনার জমি আপনাকে রক্ষা করতে হবে, আপনারা এখানে ওখানে ঘুরে বেরান, আমরা কি করবো মামলা দিছেন নিছি তো আর কি করতে বলেন। এমতাবস্থায় রাকিবুল আরো বলেন, মামলা হলেও পুলিশ আসামি ধরছে না, অপরাধীরা প্রভাবশালী হওয়ায় টাকা দিয়ে সবাইকে কিনে নিয়েছে, আমার উপর যে অন্যায় করা হয়েছে তার বিচার চাই। উক্ত বিষয়ে অভিযুক্ত আব্দুর রশীদ ও হেলাল গং দের মন্তব্য জানতে বিগত একাধিকবার যোগাযোগ করেও সম্ভব হয়নি।
এদিকে মালমার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) ফারুক রানা মুঠো ফোনে জানান ‘ রাকিবুল ও ই পরিবারের পালিত পূত্র। মৃত রফিজ উদ্দীন নিঃসন্তান দম্পত্তি।ওদের অনেক ঘটনা রাকিবুল ইসলামের পরিবারের কাছে টাকা পায় ‘ ওই টাকা নিয়ে এ সমস্যা। আমি আসামী ধরতে মেম্বার চৌকিদার নিয়ে কতোবার এলাকায় গিয়েছি ‘পাইনি। আজো যাবো। তবে তিনি জমিতে রোপা লাগানোর বিষয়টি এড়িয়ে যান।
সান
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত