পঞ্চগড়ে কৃষকের জমি দখলের চেষ্টা, তদন্ত কমিটি গঠন

  মোঃ কামরুল ইসলাম কামু

প্রকাশ: ৩ মার্চ ২০২৪, ১৯:১৭ |  আপডেট  : ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩:২৭

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় আবাদি জমি দখল করে নেওয়ার ঘটনায় এ্যাসোনিয়েশন ফর ল্যান্ড ডেপলাপমেন্ট (এএলআরডি) ও বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি,বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এ্যান্ড সার্ভিসেস (বাস্ট) এর একটি প্রতিনিধিদল সংশ্লিষ্ট এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

জানা গেছে সম্প্রতি তেঁতুলিয়া উপজেলা দেবনগড় এলাকার কৃষকদের গম, আলু, পেঁয়াজ ও মরিচ ক্ষেতে ট্রাক্টর দিয়ে হাল চাষ করে জমি দখল করার অপচেষ্টা করা হয়।স্থানীয় গনমাধ্যমকর্মীরা অসহায় ওই কৃষকদের পাশে দাড়ান। তারা এ ধরনের আইনবিরোধী কর্মকান্ড নিয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হয়।ওই প্রতিনিধি দলে ছিলেন এএলআরডির প্রোগ্রাম ম্যানেজার রফিক আহমেদ সিরাজী, বেলার ফিল্ড অ্যান্ড প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর এএমএম মামুন, বেলার আঞ্চলিক সমন্বয়কারী তম্ময় স্যানাল, বাস্ট এর দিনাজপুর প্রতিনিধি অ্যাডভোকেট পিনাক পাণি রায়। প্রতিনিধিদলটি প্রথমে ঘটনাস্থল পারিদর্শন করেন। 

এসময় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের সাথে কথা বলেন।ভূক্তভোগীগন জানান, তারা করতোয়া ও ল্যান্ডকো কোম্পনীর নিকট অনেকে জমি বিক্রি করেছেন। যেই বিক্রি করেছেন সেগুলি তাদের বুঝিয়ে ও দিয়েছেন। খতিয়ানের মালিকদের নিকট থেকে কোম্পানী জমি কিনেছেন। কিন্তু এসব খতিয়ার মালিকরা অনেক আগেই অন্যদের নিকট জমি বিক্রি করেছেন। এই সব খতিয়ানের উত্তরসূরীদের নিকট থেকে জমি কিনে ওই জমি নিজেদের দাবি করে দখলের চেষ্টা করছেন। জমির মালিকরা এসব জমিতে গম, পেঁযাজ, আলু ও মরিচ চাষ করেছেন। ল্যান্ডকো কোম্পানী তিন ফসলী এসব জমিতে চাষ করা আবাদ ভেঙ্গে জোর করে টাক্টর দিয়ে চাষ করে দখল করা চেষ্টা করছে।সোলার পাওয়ার প্লাট স্থাপনে ২০১৭ সাল থেকে করতোয়া ও ল্যান্ডকো সোলার পাওয়ার প্লান্ট নামে একই মালিকানাধীন দুটি প্রতিষ্ঠান পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগড় ইউনিয়নের শেখগছ গ্রামে ২৭৬ একর জমি ক্রয় শুরু করে।তবে অনুমতি ছিল ১৩০ একর জমি ক্রয়ের। এক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটি ওই জমি বুঝে না পাওয়া সেটি দখলে নিতে গেলে বিরোধে জড়ায় উভয়পক্ষ। এতে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আনে উভয়পক্ষ।

২০১৭ সাল থেকে এই এলাকায় করতোয়া পাওয়ার প্লান্ট প্রতিষ্ঠার জন্য স্থানীয় কিছু জমি কেনা বেচার দালালদের মাধ্যমে জমি ক্রয় শুরু করে ওই প্রতিষ্ঠানটি। ওই প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা বলছেন গত কয়েক বছরে তারা এই এলাকায় ২৭৬ একর জমি ক্রয় করেছেন। এর মধ্যে ৫০ একর জমি তাদের দখলে রয়েছে। বর্তমানে বাকি জমি দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করতোয়া পাওয়ার প্লান্টের নামে শর্ত সাপেক্ষে ১৩০ একর জমি ক্রয়ের অনুমতি দেন জেলা প্রশাসন। যার সময় ছিল এক বছরের মধ্যে। সেই মেয়াদ শেষ হওয়ায় ল্যান্ডকো কোম্পানীর নামে জমি কেনা শুরু হয়। এমন প্রতিষ্ঠান স্থাপনে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন ছাড়পত্র নেই। নেই জমি ক্রয়ের কোন অনুমোদন। 

কোম্পানী দুটি যে জমি কিনেছেন। তার মধ্যে মাত্র ২৩ একর জমির খারিজ করতে পেরেছেন। বাকি ক্রয়কৃত জমিগুলো বৈধ কোন মালিকের নিকট থেকে না কেনায় খারিজ পাননি। প্রতিনিধি দলটি এ নিয়ে পঞ্চগড় জেলা বাপার সদস্যদের সাথে মতবিনিময় করেন। প্রতিনিধি দলটি পরদিন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফজলে রাব্বির সাথে সাক্ষাত করেছেন। তিনি জানান ‘জমি বিক্রি না করলেও স্থানীয়দের ফসলি জমি দখল করে নেয়া হচ্ছে এমন খবর পেয়ে তেঁতুলিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ ঘটনাস্থলে যাই। তবে কৃষকদের কেউ জমি বিক্রি না করলে তাদের জমি কেউ দখলে নিতে পারবেনা। 

এ ঘটনায় সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে সেটেলম্যান্ট অফিসার, কৃষি অফিসারকে সদস্য করা হয়েছে। কমিটি জমির মালিকানা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করে রির্পোট দিলেই উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এই সময়টিতে উভয় পক্ষকে নালিশি জমিতে না যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে।’তেঁতুলিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাহবুবুল হাসান বলেন, ১২শ দাগ রয়েছে। তদন্তে একটু সময় লাগবে। আর যত দ্রুত সম্ভব তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করা হবে। এ্যাসোনিয়েশন ফর ল্যান্ড ডেভলাপমেন্ট এর (এএলআরডি) প্রোগ্রাম ম্যানেজার রফিক আহমেদ সিরাজী জানান, গনমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের সত্যতা পাওয়া গেছে। এলাকায় বিভিন্ন পক্ষের সাথে কথা বলেছি। সরকার যদি কোন উদ্যোগ না নেয় তাহলে আমরা
আইনী সহায়তা দিবো।

 

সান

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত