পঞ্চগড়ে কিনোয়া চাষে এক কৃষকের সফলতা

  মোঃ কামরুল ইসলাম কামু ,:

প্রকাশ: ৩০ মার্চ ২০২৪, ১১:১৪ |  আপডেট  : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩:০৮

পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ দানাদার জাতীয় রবি শষ্য কিনোয়ার চাষ হচ্ছে পঞ্চগড়ে। দক্ষিণ আফ্রিকার এ শষ্যটির চাহিদা রয়েছে বিশ্বজুড়ে। নানাভাবে রান্না করে খাওয়া যায় এই শষ্যটি ডায়াবেটিকসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্তদের জন্য উপকারী খাবার বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। কিনোয়ায় রয়েছে  ঔষধি গুনাগুণ। 

পঞ্চগড় সদর উপজেলার গড়িনাবাড়ি ইউনিয়নের চরোখুড়া এলাকায় আমিনুর রহমান আমিন নামে একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ১২ বিঘা জমিতে কিনোয়ার চাষ করেছেন।  ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ফলনও হয়েছে বাম্পার।অবসরে যাওয়া এই সেনা সদস্য এখন কিনোয়া  চাষ করে বানিজ্যের স্বপ্ন দেখছেন । তবে বাংলাদেশে এই ফসলটির তেমন পরিচিতি না থাকায় বাজারজাত নিয়ে শঙ্কা রয়েছে তার। তিনি জানান ইউটিউবে দেখে এই কিনোয়া চাষে শুরু করেন।গত বছর এক বিঘা জমিতে কিনোয়ার চাষ করলেও এবার পরিধি বাড়িয়ে করেছেন ১২ বিঘায়। তার সফলতা দেখে অনেকে আগ্রহী হয়ে ওঠছেন।

সরেজমিনে ওই চরোখুড়ায় গিয়ে দেখা যায়, কিনোয়া চাষাবাদ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষী আমিনুর রহমান আমিন। বর্তমানে তার জমিতে পাঁকতে শুরু করেছে কিনোয়া। জমি থেকে শষ্যটি কাটা মাড়াইয়ে কাজ করতে দেখা গেছে কয়েকজন শ্রমিককে।

 তারা পরিপক্ক কিনোয়া কেটে মাড়াইয়ের জন্য স্তূপ করে রাখছিলেন পাশের ফাঁকা জায়গায়। ওই এলাকায় গিয়ে জানা গেছে স্বল্প মেয়াদী এই শষ্যটি কম খরচে অধিক লাভজনক। উৎপাদন ভালো হলে বিঘাপ্রতি ৬ থেকে ৭ মণ কিনোয়া পাওয়া যায়। জানা যায়, বিভিন্ন সুপারশপসহ অনলাইনে মানভেদে এই খাবারটি প্রতিকেজি ৬০০ থেকে ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে প্রতিবিঘা জমিতে লাখ টাকার বেশি আয় করা সম্ভব।সর্বোচ্চ তিন মাসের মধ্যে কিনোয়া ঘরে তোলা যায়।জানা গেছে, সুপার ফুড কিনোয়া বাংলাদেশে অপ্রচলিত ও নতুন খাবার হলেও এর চাহিদা রয়েছে ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বজুড়ে। সুপারফুড খ্যাত এই রবি শস্যটিতে রয়েছে হাইপ্রোটিন, মিনারেল, আয়রন, এন্টি অক্সিডেন্ট, পটাশিয়াম, লো গ­াইসিমিকস ইনডেস্কসহ নানা পুষ্টিকর উপাদান। এর কদর রয়েছে সুপারশপ, রেস্টুরেন্টসহ দামি খাবারের দোকানে। পায়েস সহ নানাভাবে রান্না করে খাওয়া যায় খাবারটি। তাই বিশ্ব বাজারে এর চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কৃষক আমিনুর রহমান আমিন বলেন, চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর কৃষি কাজ মনোনিবেশ করি। ইউটিউব ঘাটাঘাটি করে কিনোয়া চাষে উদ্বুদ্ধ হই। প্রথম বছর এক বিঘা জমিতে এই ফসলের আবাদ করে সাফল্য পাই। তাই এবার পরিধি বাড়িয়ে ১২ বিঘা করেছি। এবছর ফলন ভালো হয়েছে। বাজার মূল্য ভালো পেলে আগামী বছর চাষের পরিধি আরও বাড়াবো।তিনি আরও বলেন, কিনোয়া অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি ফসল। এতে ভিটামিন-সি ব্যাতীত সব ধরণের ভিটামিন বিদ্যমান। কিনোয়ার চাষ পদ্ধতিও সহজ। খরচ একেবারেই কম। বিঘা প্রতি ১৫-২০ হাজার টাকা খরচে লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। তবে, এ শষ্যটি  দেশে বাজারজাত করন একটু কঠিন। স্বীনীয় বাজারে একদম নতুন ও অপরিচিত একটি এই কিনোয়া । তবে, অনলাইনে এর ব্যাপক চাহিদার ব্যাপকতা রয়েছে। 

পঞ্চগড় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল মতিন বলেন, কিনোয়া দক্ষিণ আমেরিকার একটি ফসল। এটিকে সুপার ফুড বলা হয়, অনেকে এটিকে নভোচারীদের খাবার ও বলে থাকেন।  কিনোয়া শষ্যটি উপকারী খাবার। কিনোয়া এখন সুপারশপগুলোতে বিক্রি হচ্ছে। আগামীতে এই কিনোয়া চাষের পরিধি বাড়বে বলে আমি মনে করি। 
 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত