পুলিশ-র‌্যাব ও বিজিবির টহল

পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সালনা জলসা ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা জোড়দার

  পঞ্চগড় প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৭:২৯ |  আপডেট  : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:১১


পঞ্চগড়ে আহমদিয়া জামাত সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানী) বাৎসরিক সালনা জলসা ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা জোড়দার করা হয়েছে। জানা যায় তিনদিনব্যাপি এই জলসা অনুষ্ঠান হওয়ার কথা রয়েছে।  

তবে সালনা জলসার দিনক্ষণ ও তারিখ জানা না গেলেও পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক( সার্বিক) মো. রিয়াজ উদ্দীন স্বাক্ষরিত গত ৯ ফেব্রয়ারি এক চিঠিতে বলা হয়েছে ‘১১ ফেব্রয়ারি থেকে ১৫ ফেব্রয়ারি’ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ন কাজে বাংলাদেশ পুলিশের ইউনিট এ জেলায় অবস্থান করবেন।এ জেলায় তাদের উপযুক্ত পরিবেশে অবস্থানের স্বার্থে জেলার কতিপয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত করা হয়েছে। নির্ধারিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহে পুলিশ সদস্যদের অবস্থানকালে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, খাবার পানি সরবরাহ এবং স্যানিটেশনসহ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। এছাড়া ও সদর উপজেলার স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসাসহ ২৬ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করবেন বলে চিঠিও দিয়েছে জেলা প্রশাসন। যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী অবস্থান করবেন ওই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫ দিন পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এমতাবস্থায় পঞ্চগড় শহর জুড়ে পুলিশ র‌্যাব ও বিজিবি বিভিন্ন এলাকায় ভাগ হয়ে টহল সহ নানা জায়গায় অবস্থান করছে। আগে এমন কঠোর নিরাপত্তা জোড়দার না থাকলেও এবার সেটি করা হয়েছে।

এর আগে গত ১৬ জানুয়ারি পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক বরাবরে ২৩,২৪ ও ২৫ ফেব্রযারি বার্ষিক সালনা (৯৯ তম) জলসা অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনে   মুহাম্মদ মোত্তালিব হোসেন খাঁন প্রেসিডেন্ট আহম্মদ মুসলিম জামাত আহমনগড়,পঞ্চগড় স্বাক্ষরিত একটি পত্র দেওয়া হয়।

এদিকে গত কয়েক বছর ধরেই আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বাৎসরিক জলসা বন্ধ ও তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে আন্দোলন করে আসছিল ইসলাম ধর্মীয় বিভিন্ন সংগঠন। গত বছরের ২ থেকে ৪ মার্চ আহমদিয়া সম্প্রদায়ের উপর হামলা ও তাদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। 

  সংর্ঘষে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মানুষ আহত। ওই ঘটনায় ২ জন নিহত হয়। ঘটনার পর ত্রিশটির অধিক মামলা রুজু হয়।এসব মামলায় ১৫ হাজার জনকে আসামী করা হয়েছে। 

 অপরদিকে এবারও জলসা বন্ধের দাবিতে গত ২৮ জানুয়ারি সম্মিলিত খতমে নবুওয়ত সংরক্ষণ পরিষদ জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছে। 

এছাড়া গত শুক্রবার ঢাকার বাইতুল মোকাররম মসজিদের সামনে বিক্ষোভ করে ইসলাম ধর্মীয় সংগঠনের নেতাকর্মীরা জলসা বন্ধের দাবিতে রোড মার্চের হুশিয়ারি দেয়।

তবে মঙ্গলবার(১৩ ফেব্রয়ারি) সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, পঞ্চগড় শহর ও আশপাশ সহ আহমদিয়া জামাত সম্প্রদায়ের আহমদনগড় এলাকায় পুলিশ-র‌্যাব ও বিজিবির টহল টিমকে টহল এবং বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নিতে দেখা যায়।

এদিকে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মূখপাত্র আহমদ তবশীর চৌধুরী এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করেননি।তিনি শুধু বলেছেন আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চাই এবং আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ধর্মকর্ম পালন করতে চাই। এছাড়া বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল মালেক বলেন, জেলা প্রশাসনের দেয়া চিঠি অনুযায়ি আগামী পাঁচ দিন নির্দিষ্ট কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ থাকবে। তবে বিদ্যালয়ের অন্য সকল কার্যক্রম চলমান থাকবে।

পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা বলেন, এবার আহমদিয়া মুসলিম জামাতের সালানা জলসাকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা সভায় তা আলোচনা হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ফোর্স থাকবে। এর মধ্যেই জলসা অনুষ্ঠিত হবে। বিস্তারিত পরে ব্রিফ করে আমরা জানাবো।
 
এদিকে গত রবিবার জেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, আহমদিয়া জামাতের বার্ষিক সালানা জলসাকে কেন্দ্র করে কোন ধরণের উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রচার করলেই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। যে কোন ধরণের উস্কানি বরদাশত করা হবে না। তারা তাদের নির্ধারিত স্থানে জলসা করবে এতে কারো আপত্তি করা ঠিক হবে না। কে মুসলমান আর কে কাফের এটা বলার ক্ষমতা কাউকে দেয়নি সংবিধান।



 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত