ভাঙছে ঘরবাড়ি

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মুন্সীগঞ্জের তালতলা-গৌরগঞ্জ খালে বাল্কহেড

  মুন্সীগঞ্জ প্রতি‌নি‌ধিঃ

প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:২৭ |  আপডেট  : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৫৭


মুন্সীগঞ্জের তালতলা-গৌরগঞ্জ খালে অবাধে চলছে শত শত বাল্কহেড। ২০২৩ সালের ৫ আগস্ট ওই খালে বাল্কহেডের ধাক্কায় একটি ট্রলার ডুবে নারী ও শিশুসহ ১০ জন নিহতের পর এই পথে বাল্কহেড চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন। কিন্তু একটি চক্র বাল্কহেড মালিকদের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে ওই খাল পারাপারে সহায়তা করে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রতিদিন বালু নিয়ে বাল্কহেডগুলো এই খাল হয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। বাল্কহেডের ঢেউয়ে খালের দুপাড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর প্রতিকার চেয়ে প্রশাসনের কাছে বারবার চিঠি দিয়েও কোনও সমাধান পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা। এ বছর বর্ষার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই খালে বাড়তে থাকে বাল্কহেড চলাচল। এতে ওই খালের দুপাশে ভাঙনের দেখা দিয়েছে। এছাড়া ফের বড় কোনও দুর্ঘটনার আশঙ্কাও করছেন স্থানীয়রা।

জানা গেছে, লৌহজং উপজেলার শামুরবাড়ি গ্রামের একটি চক্র দীর্ঘদিন খালে চাঁদাবাজির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ওই চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠে আরেকটি গ্রুপ।  

এই খালে চলাচলরত বাল্কহেড থেকে বালু নেওয়া একাধিক ড্রেজার চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ওই খালে বাল্কহেড চালকদের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে চলাচল করতে দেওয়া হয়। আগে সামুরবাড়ি এলাকার একটি গ্রুপ চাঁদাবাজি করলেও এখন  ডহরি গ্রামের একটি চক্র চাঁদাবাজি দখল নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। চালক ও মালিকদের কাজ হতে দুই থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা নিয়ে এসব বাল্কহেড চলাচলে সহায়তা করছে চক্রটি।

এদিকে প্রশাসনের অভিযান না থাকায় এ খালে বাড়ছে বাল্কহেড চলাচল। ভাঙছে খালের দুপাড়ে মানুষের বাড়িঘর। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ খালটি পদ্মা নদীর গৌরগঞ্জ এলাকা থেকে মুন্সীগঞ্জ জেলার তিনটি উপজেলা লৌহজং টঙ্গীবাড়ী সিরাজদিখান হয়ে তালতলা এলাকায় ধলেশ্বরী নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। এ খালের দৈর্ঘ্য প্রায় ১০ কিলোমিটার হবে। 

চলাচলরত বাল্কহেড শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই খাল দিয়ে পদ্মা ও যমুনা নদী থেকে বালু নিয়ে সহজেই ঢাকা নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর জেলায় যাওয়া যায়। এই খাল দিয়ে বাল্কহেড চালিয়ে গেলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চাঁদাবাজদের ১০০০-১৫০০ টাকা দিতে হয়। আর বালু ভর্তি বাল্কহেড চালিয়ে গেলে দিতে হয় ২০০০ টাকা। এছাড়া ওই খালের ডহরি ও কুন্ডের বাজার এলাকায় রয়েছে বিআইডব্লিউটিএ এর দুটি অফিস। সেখানেও ৭০০-১০০০ টাকা রসিদ ছাড়াই চাঁদা নিচ্ছেন তারা।

ইমরান নামে একজন বাল্কহেড মালিক ইমরান বলেন, আমার বাড়ি বরিশাল জেলায়। গভীর রাতে আমি ওই খাল দিয়ে বাল্কহেড নিয়ে আসার সময় আমার উপর দুবার হামলা হয়। ওই এলাকার লোকজন লাঠি নিয়ে আমার ও আমার ট্রলারের শ্রমিকদের মারধর করে।

আউটশাহী ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা আবুল হাশেম বলেন, এ খালটি মুন্সীগঞ্জের ৩টি উপজেলার মধ্যে দিয়ে প্রবহমান। এ খালে বাল্কহেডের ধ্বাক্কায় ট্রলার ডুবে ১০ জন নারী শিশু মারা গেলে এ খালে বাল্কহেড চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসন। তারপরেও নিয়ম অমান্য করে এ খালে বাল্কহেড চালাচ্ছে একটি চক্র। 

মাওয়া নৌ-পুলিশের ইনচার্জ মাহবুবুর রহমান বলেন, যখন নিষিদ্ধ করেছিল তখন আমি এখানে ছিলাম না। তবে আমি জানতে পেরেছি ওই খালে বাল্কহেড চলাচল সীমিত করেছিল প্রশাসন। 

চাঁদা আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা আমাদের নলেজে নেই। 

টঙ্গিবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসলাম হোসাইন বালেন, ওই খালটি তিনটি উপজেলার মধ্যে দিয়ে প্রবহমান। বাল্কহেড বন্ধে সিরাজদিখান, লৌহজং উপজেলা প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হবে।  

কা/আ

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত