নিজ শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে গৃহবধূর আত্মহত্যার চেষ্টা
প্রকাশ: ২১ এপ্রিল ২০২১, ০৮:৪৩ | আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:১২
শ্রীনগরে সুমি আক্তার (২০) নামে এক গৃহবধূ নিজ গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনায় দগ্ধ হয়ে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসাধীন আছে। এঘটনায় ওই গৃহবধূর শরীরের প্রায় ৭০ ভাগ পুড়ে যায়। গত ১৭ এপ্রিল শনিবার সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে উপজেলার কোলাপাড়া ইউনিয়নের ব্রাহ্মনপাইকশা গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। সুমি আক্তার ওই গ্রামের মাছ বিক্রেতা আব্দুল খালেকের পুত্রবধূ ও আল-আমিনের স্ত্রী। খবর পেয়ে স্বামী আল-আমিন ও আহত স্ত্রীকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য সরাসরি ঢাকায় নিয়ে যান। অপরদিকে একটি অদৃশ্য পক্ষের কারসাজিতে এঘটনায় সুমির স্বামী ও তার পরিবারকে ফাসাতে ষড়যন্ত্র শুরু করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
প্রতিবেশী সূত্রে জানা যায়, গৃহবধূর ভাই ও বাবার সাথে অভিমান করে নিজের শরীরে কেরোসিন ঢেলে নিজেই আগুন লাগিয়ে দেয়। এসময় সে বাচার জন্য বাড়ির পাশে একটি পুকুরে ঝাপ দেন। পরে তাকে উদ্ধার করে দ্রুত ঢাকায় নেওয়া হয়। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন সুমির বাবা শিবচর এলাকার লুৎফর ফকির মাদবর ও সুমির ভাই সোহেল। তারা জানান, একটি মোবাইল সেটকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা ঘটে। বড় ভাই সোহেল বলেন, ঘটনার আগের দিন আমি সুমির শশুর বাড়িতে গিয়ে বিরোধপূর্ণ মোবাইল সেটটি নিয়ে যাই। এসময় সুমির সাথে আমার কথা কাটাকাটি হয়েছিল।
স্থানীয় মহিলা ইউপি সদস্য শিখা বেগম বলেন, খবর শুনে ওই বাড়িতে গিয়ে জানতে পারি সুমি নিজেই গায়ে আগুন দেয়। কোলাপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শ্রী গোপীনাথ দাস বলেন, সকালে আল-আমিনের কাছ থেকে মাছ কিনেছি। ঘটনার খবর পেয়ে আল-আমিন বাড়িতে যায়।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, খবর পেয়ে শ্রীনগর থানার এসআই আজিজ ও এসআই আব্দুল মালেক আগুনে দগ্ধ ওই গৃহবধূকে দেখতে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ণ প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে যান। এসময় চিকিৎসাধীন গৃহবধূ সুমি নিজের গায়ে নিজেই আগুন দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। এবং স্বামীর কোন দূষ নেই বলে উল্লেখ করেন। অভিমান থেকেই এমনটা করেছেন। সুমি জানতেন না বন্ধুর কাছ থেকে উপহার সরুপ পাওয়া মোবাইলটি যে, একটি চোরাই মোবাইল। প্রায় ২ বছর আগে পারিবারিকভাবে সুমি ও আল-আমিনে বিয়ে হয়। তাদের সংসারে কোন সন্তান নেই। জানা যায় শ্রীনগর থানা পুলিশের পক্ষ থেকে সুমির চিকিৎসার জন্য সাহায্য সযোগিতার হাত বাড়ানো হয়েছে। ওই গৃহবধূর চিকিৎসার জন্য শ্রীনগর থানা পুলিশের পক্ষ থেকে আর্থিক সাহায্য সহযোগিতা করার কথা বলা হয়েছে।
সুমির স্বামী আল-আমিন জানায়, ঘটনার পরে জানতে পারি কিছুদিন আগে সুমির এক পরিচিত ছেলে বন্ধু সুমিকে একটি মোবাইল সেট উপহার দেয়। ওই মোবাইলে সুমি আমার শশুরের নামে নবায়নকৃত একটি সিমকার্ড ব্যবহার করে আসছিল। আরো জানতে পারি এই সিমকার্ডে সূত্র ধরে মোবাইল চুরির ঘটনায় শশুর লুৎফর ফকির মাদবরকে শিবচরের পুলিশ গ্রেফতার করে। পরে শশুর মুচলেকা দিয়ে মুক্তি পায়। এই মোবাইলকে কেন্দ্র করে সুমির সাথে তাদের কথা কাটাকাটি হয়েছিল জানতে পারি। ঘটনার দিন আমিসহ বাবা স্থানীয় বাজারে মাছ বিক্রি করছিলাম হঠাৎ শুনতে পাই সুমি গায়ে আগুন লেগেছে। ভাড়িতে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে সরাসরি ঢাকায় চলে আসি। এখানে সার্বক্ষনিক সুমির চিকিৎসার খোঁজখবর নিচ্ছি। তিনি বলেন, ঘটনার পরে তিনি জানতে পারেন মোবাইল সংক্রান্ত বিষয়টি। খবর পেয়ে শ্রীনগর থানা পুলিশও এখানে এসে সুমির সাথে কথা বলে গেছে। অথচ অতিদুঃখের বিষয় একটি মহল ঘটনাটিকে অন্যদিকে নেওয়ার চেষ্টা করছে। স্ত্রীর কিছু হলে তিনি প্রকৃত দূষিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান। এব্যাপারে শ্রীনগর থানার ওসি মো.হেদায়াতুল ইসলাম ভূঞা জানান, গৃহবধূ আত্মহত্যার চেষ্টা করে। তার খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। সে চিকিৎসাধীন আছে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত