নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে আওয়ামী লীগে অস্বস্তি
প্রকাশ: ৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:১৬ | আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২:০৬
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে এবার দলের মনোনয়নবঞ্চিত নেতা–কর্মীদের স্বতন্ত্র নির্বাচনের সবুজ সংকেত দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হলে মোট ৭৪৭ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছে। এরমধ্যে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীই ৪৪২ জন।
এবারের নির্বাচনে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গেই আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
শরীয়তপুরের নড়িয়ায় নৌকার প্রার্থী হয়েছেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। এবারের নির্বাচনে এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে শামীমের বিপরীতে ভোট করছেন যুবলীগ নেতা খালেদ শওকত আলী।
নির্বাচন সামনে রেখে এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার এই দুই নেতার সমর্থকরা সংঘর্ষে জড়িয়েছেন।
প্রায় একই পরিস্থিতি ফরিদপুর–৪ আসনেও। এখানে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহকে। তাঁর বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আছেন মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন। ভোটের দিন যতো ঘনিয়ে আসছে জাফরউল্লাহ ও নিক্সনের চৌধুরীর বাগযুদ্ধের উত্তাপও ততোই বাড়ছে।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া শেষ হয়েছে গত ৩০ নভেম্বর। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে এই আওয়ামী লীগ–জাতীয় পার্টিসহ ২৯টি রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা এবার নির্বাচনে আসছেন। অন্যদিকে, বিএনপিসহ ১৫টি দলের কোনো প্রার্থী এই নির্বাচনে নেই।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, দেশের ৩০০টি সংসদীয় আসনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নৌকা চেয়েছেন ৩০৩ জন। পাঁচটি আসনে নৌকার বিপরীতে দুজন করে প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এরই মধ্যে শেষ হয়েছে মনোনয়ন পত্র যাচাই বাছাই। গত সোমবার যাচাই–বাছাই শেষে ২ হাজার ৭১২ জন প্রার্থীর মধ্যে ৭৩১ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। আর বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে ১ হাজার ৯৮৫ জনের মনোনয়নপত্র।
যাচাই বাছাই শেষে এ আওয়ামী লীগের ২৪৮ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী ভোটের মাঠে টিকে আছেন। যাদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে তাঁরা নির্বাচন কমিশনে এরই মধ্যে আপিল করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এদের অনেকেই হয়তো শেষ পর্যন্ত প্রার্থীতা ফিরে পাবেন। এ বিপুল সংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে অস্বস্তিতে আছেন নৌকার প্রার্থীরা।
অবশ্য দলটির নীতি নির্ধারকরা বলছেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের স্বার্থেই এ সুযোগ দেয়া হয়েছে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে, কারা নির্বাচনে থাকবেন কারা থাকবেন না।
দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান বলেন, ‘মনোনয়ন বোর্ড একজনকে মনোনয়ন দিয়েছে। অনেকে স্বতন্ত্র হয়েছেন। অতীতেও এমন হয়েছে। দল থেকে নির্দেশনা যাবে উইথড্র করতে। যাকে যাকে উইথড্র করতে বলা হবে তারা না করলে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ৪৭’র ১১ ধারা অনুযায়ী, নির্বাচনে কেউ দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে দাঁড়ালে সরাসরি বহিষ্কার হবেন। প্রার্থী না হয়ে কেউ দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা করলেও বহিষ্কার হবেন তিনি।
১ ভাগ ভোটারের স্বাক্ষরের বিধান পরিবর্তনের দাবি স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ১ ভাগ ভোটারের স্বাক্ষরের বিধান পরিবর্তনের দাবি স্বতন্ত্র প্রার্থীদের
অবশ্য এবারের পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। দলের প্রার্থীতা চূড়ান্ত করার আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নিজেই বলেছিলেন, এবারের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বাধা দেওয়া হবে না।
পরে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও বেশ কয়েকবার একই সিদ্ধান্তের কথা জানান।
গত ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তফসিল অনুযায়ী ভোট হবে আগামী ৭ জানুয়ারি। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর, আর প্রতীক বরাদ্দ হবে ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনের প্রচার শুরু হবে ১৮ ডিসেম্বর থেকে। চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত।
কাআ
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত