নাটকীয় মোড়, ইউক্রেন কোন কোন শর্তে রাজি হওয়ায় হঠাৎ নমনীয় রাশিয়া
প্রকাশ: ৩০ মার্চ ২০২২, ১০:১৫ | আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:১১
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দেশ ইউক্রেনের লুহানস্ক ও ডোনেটস্ক অঞ্চলকে গত ২১ ফেব্রুয়ারি আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় দ্বিতীয় বৃহত্তম পরাশক্তি রাশিয়া। এরপর ওই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রুশ বাহিনী। এরই মধ্যে বুধবার ৩৫তম দিনে গড়িয়েছে রাশিয়ার অভিযান। বিগত ৩৪ দিনে ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি নগরী দখলে নিয়েছে রুশ বাহিনী। তবে নিজেদের সক্ষমতা অনুযায়ী প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টাও করে যাচ্ছে ইউক্রেন।
বিগত সময়ে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের আরেক প্রজাতন্ত্র বেলারুশে চার দফা বৈঠক করে রাশিয়া ও ইউক্রেন। কিন্তু ‘শান্তির পথ’ খোলেনি। অবশেষে মঙ্গলবার তুরস্কের ইস্তাম্বুলে দুই দেশের আলোচনা শুরুর পরই দেখা গেল নাটকীয় পটপরিবর্তন। যুদ্ধের ৩৪তম দিনে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ এবং চেরনিহিভ শহর দখলের অভিযানে আপাতত রাশ টানতে সম্মত হয় ভ্লাদিমির পুতিনের দেশ।
ঘটনাচক্রে, আমেরিকার নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য তুরস্ক। যে ন্যাটোতে যোগদানের জন্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির তৎপরতাকে যুদ্ধের ‘অন্যতম কারণ’ হিসেবে প্রকাশ্যে চিহ্নিত করেছে মস্কো। এই পরিস্থিতিতে কেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন দখলের অভিযানে সাময়িক ইতি টানতে রাজি হলেন, তার নানা ‘ব্যাখ্যা’ শোনা যাচ্ছে কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মুখে। আর সেই সঙ্গে অনিবার্যভাবে উঠে আসছে তুরস্কের ভূমিকার কথা।
দেড় বছর আগেও একইভাবে মস্কোর উপর আঙ্কারার ‘প্রভাব’ দেখা গিয়েছিল। ২০২০ সালের শেষে নাগার্নো কারাবাখের দখল ঘিরে আজেরবাইজান-আর্মেনিয়া যুদ্ধের সময় প্রকাশ্যে আজেরবাইজানকে সামরিক সহযোগিতা দেওয়ার ঘোষণা করেছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান। যদিও পুতিনের সমর্থন ছিল আর্মেনিয়ার দিকে। দুই মাসের যুদ্ধে আর্মেনিয়া কোণঠাসা হয়ে পড়ে শান্তির পথে হাঁটতে বাধ্য হয়েছিল। এবার মস্কো-কিয়েভ আলোচনা চলাকালীনই তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসগলু যেভাবে আগ বাড়িয়ে ‘শান্তির পথে অগ্রগতি’র কথা ঘোষণা করেছেন, তা ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহলের একাংশ।
অনেকের মতে, রাশিয়ার উপর তুরস্কের এই প্রভাবের পিছনে রয়েছে ভৌগলিক অবস্থান। রাশিয়ার দখলে থাকা ক্রিমিয়ার সেবাস্তিপোল বন্দরের সঙ্গে ইউরোপের জলপথ যোগাযোগের একমাত্র পথ হল কৃষ্ণসাগর হয়ে তুর্কী প্রণালীর মাধ্যমে ভূমধ্যসাগরের সাথে সংযোগ ঘটা। এই কৃষ্ণ সাগরের তীরে পূর্ব ইউরোপের এবং ককেশাসের ৭টি দেশ রয়েছে। রাশিয়ার হাতে থাকা এক মাত্র সেবাস্তিপোল বন্দরই উষ্ণ স্রোতের কারণে সারা বছর সচল থাকে। যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে তুর্কি প্রণালী বন্ধ করার জন্য ইতোমধ্যেই তুরস্কের কাছে আবেদন জানিয়েছে ন্যাটোর একাধিক সদস্যরাষ্ট্র। ফলে শঙ্কা ছিল মস্কোর।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোর থেকে ইউক্রেনের মাটিতে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। পুতিনের দাবি ছিল, প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির শাসনামলে ইউক্রেনের মাটিতে ‘রুশ গণহত্যা’ রুখতেই এ হামলা, যেটিকে নাৎসিবাদ মুক্ত করার অভিযান হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন তিনি। আনুষ্ঠানিক সামরিক অভিযানের ঘোষণার তিন দিন আগে ইউক্রেনের সেই ‘গণহত্যাস্থল’ ডোনেটস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলকে (যাদের একত্রে ডনবাস বলা হয়) স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেন পুতিন।
তবে তুরস্কে শান্তি আলোচনার ড্রাফটে ছিল না সেই নাৎসিবাদ মুক্ত করার শর্তের কথা।
একই সঙ্গে বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের দাবি, ডোনবাসকে ‘স্বশাসন’ দেওয়ার রুশ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ায় রাজি হয়েছে কিয়েভ। এছাড়াও ২০১৪ সালে ইউক্রেনের হাত থেকে বেদখল হওয়া ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশ বলে স্বীকৃতি দেওয়া হোক বলেও দাবি করেছিলেন পুতিন। সে বিষয়েও ইতিবাচক ইঙ্গিত মিলেছে। আগামী ১৫ বছর ধরে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির সুরাহা করতে রাজি ইউক্রেন।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত