ধানের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে কৃষকরা হতাশ
প্রকাশ: ১০ মে ২০২৪, ২০:০১ | আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০:৫৬
দেশের শস্য ভান্ডার বলে খ্যাত বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলায় পুরোদমে চলছে ইরি-বোরো ধান কাটা-মাড়াই কাজ। এই নতুন ধান বর্তমানে কৃষকের জীবন পাল্টে দিয়েছে। কৃষকরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছে। পাকা ধানের সোনালি রং আর পাকা ফসলের গন্ধে ভরে উঠেছে উপজেলার জনপদ। গ্রামে গ্রামে চলছে ধান তোলার উৎসব। কাক ডাকা ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কৃষক-কৃষানী ধান তোলার কাজে সময় পার করছে। আদমদীঘি উপজেলাতে এবার গত বছরের তুলনায় এবারও রেকর্ড ভঙ্গ করে ইরি-বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু বড় বড় মিল মালিক ও এলাকার ফড়িয়া ধান ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে ধানের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত এমন দাবী করছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা।
জানা যায়, চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে আদমদীঘি উপজেলায় রেকর্ড পরিমাণ জমিতে ধান আবাদ হয়েছে। জমিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ কীটনাশক ব্যবহার ও পরিচর্যার কারণে বিঘা প্রতি ফলন হয়েছে প্রায় ২০ থেকে ২৪ মণ পর্যন্ত। এছাড়া কৃষকদের আঙ্গিনাতে এলাকার ফড়িয়া ধান ব্যবসায়ীরা এসে ধান কিনছে। ধান উৎপাদনে প্রতি বিঘা খরচের ব্যবধানে ধানের ১২শ ৫০ টাকা থেকে ১৩শ টাকা হলে কৃষকরা একটু খুশি হতো। তবে এলাকার কৃষকরা প্রসাশনের পক্ষ থেকে বাজার দর মনিটরিং এর দাবী জানান।
আদমদীঘি উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে এই উপজেলার একটি পৌরসভা ও ছয়টি ইউনিয়ন মিলে এবার ১২ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে ইরি বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। এবার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ায় এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কৃষকরা তাদের চাহিদা মোতাবেক সার, বীজ, পানি সেচ ও বিভিন্ন কৃষি উপকরণ সুষ্ঠ ভাবে পাওয়ার ফলে নির্বিঘেœ ইরি-বোরো ধান উৎপাদন করতে পেরেছে।
উপজেলার কয়েকটি হাট বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চিকন জিরাশাইল জাতের ধানের দাম ১ হাজার ৫০ টাকা থেকে ১১শ টাকা, কাটারী ১১শ টাকা, ৯০ জাতের ধানের দাম ১২ শ টাকা ও অন্যান্য মোট জাতের ধানের দাম ৯শ ৫০ থেকে ১ হাজার টাকা দরে বেচা-কেনা চলছে।
আদমদীঘি উপজেলার গোবিন্দপুর কৃষক আলতাফ হোসেন, বরিয়াবার্তা গ্রামের হাসান আলী, কাশিমিলা গ্রামের বাবলু প্রমানিক, মাঝিপাড়া গ্রামের লিখন চন্দ্র সরকার, নিখিল সিংহ, তালসন গ্রামের আতোয়ার রহমান, জিনইর গ্রামের কৃষক বেলাল হোসেন জানান, ইরি-বোরো আবাদ, বীজ রোপণ, পানি সেচ, আগাছা পরিস্কার ও ধান কাটা মাড়াই করতে বিঘা প্রতি প্রায় ১৬ থেকে হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ধানের ফলনও ভালো হয়েছে, তবে ধানের দাম বেশী হলে কৃষকরা লাভবান হতো। ধানের এই ভরা মৌসুমে মিল মালিকরা ও ফড়িয়া ধান ব্যবসায়ীদের কারণে কৃষকরা ধানের ন্যায্য মূল্য পাবে না, এটা মেনে নেওয়া যায় না। এ অবস্থা চললে আগামীতে ধান আবাদে কৃষকরা আগ্রহ হারাবে।
এ ব্যাপারে আদমদীঘি উপজেলা কৃষি অফিসার ও কৃষিবিদ মিঠু চন্দ্র অধিকারী জানান, সুষম সার ব্যবহার ও ধানে রোগ বালাই কম থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। ধান কাটার সময় আসলে কি কারণে যে ধানের দাম কমে যায় সেটা আমার বোধগম্য নয়। তবে ধানের দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকলে কৃষকরা ধান আবাদে আগ্রহ থাকবে। তিনি আরোও জানান, ইতি মধ্যে উপজেলার বিভিন্ন মাঠে পুরোদমে ধান কাটা মাড়াই শুরু হয়ে গেছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সমস্ত ধান কাটা হয়ে যাবে বলে আশা করছেন।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত