দৃষ্টিনন্দন বরগুনার পৌর নাথপট্টি লেকটি এখন বখাটে ও মাদকসেবীদের অভয়ারণ্য

প্রকাশ: ৪ মার্চ ২০২৫, ১৪:১১ | আপডেট : ৫ মার্চ ২০২৫, ২৩:৪২

বরগুনা শহরের প্রাণকেন্দ্রে ৩ কোটি ৫৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত পৌর নাথপট্টি লেকটি সংস্কারের অভাব এবং যত্রতত্র ময়লা ফেলার কারণে পুনরায় ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে। ফলে একসময় দর্শনার্থীদের পদচারণায় পরিপূর্ণ থাকলেও এখন কিশোর গ্যাং, বখাটে ও মাদকসেবীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে লেকটি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লেকের রেলিংগুলো ভাঙা। স্থানীয়রা জানান, এস এস এর মূল্যবান পাইপের রেলিংগুলো সুযোগ পেলেই ভেঙে ভেঙে নিয়ে যাচ্ছে বখাটেরা। ফুলগাছগুলো নষ্টকরা হাড়াও দর্শনার্থীরা লেকে ময়ল আবর্জনা ফেলে নষ্ট করছে পানি। এছাড়াও ঢিল ছুড়ে ভাঙা হয়েছে বৈদ্যুতিক বাতিগুলোকে। ফলে দিনদিন সৌন্দর্য হারাচ্ছে বরগুনাবাসীর অবসর সময় কাটানোর একমাত্র লেকটি। স্থানীয়দের অভিযোগ সিসি ক্যামেরা না থাকায় মাদকসেবীদের দৌরাত্ম্য বেড়ে হরহামেশা সংঘঠিত হচ্ছে অপরাধ। তারা আরও বলছেন, লাইটগুলো ভেঙে ফেলায় পর্যাপ্ত আলোর অভাবে রাতের অন্ধকারে চলছে অসামাজিক কার্যকলাপ। মাদকসেবী বখাটেদের আড্ডা, কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত ও রাতের অসামাজিক কার্যকলাপের কারণে লেকটির পরিবেশ ও সৌন্দর্য এখন বিলুপ্তির পথে।

এ প্রসঙ্গে জানা যায়, এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী নাথপট্টির দিঘীটিতে শহরের শতশত নারী-পুরুষ গোসল থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় কাজ সারতেন। জোয়ারভাটার এই দীঘিটি পলিমাটি পড়ে পড়ে ভরে যাওয়ায় আর খনন করা হয়নি সুদীর্ঘ বছর। সময়ের বিবর্তনে বাসাবাড়ির ময়লা আবর্জনা ফেলে দীঘিটিকে ভাগাড়ে পরিণত করেছিলো বরগুনার শহরবাসী। দীর্ঘদিন এভাবে পড়ে থাকা ময়লার ভাগাড়টি খনন করে লেক তৈরির পরিকল্পনা হাতে নেয় বরগুনা পৌর কর্তৃপক্ষ। তারই ধারাবাহিকতায় ময়লার ভাগাড়টি খনন করে তৈরি করা হয় নয়নাভিরাম পৌর নাথপট্টি লেক। সেই থেকে এক সময়ের দুর্গন্ধ ছড়ানো ভাগাড়টি পরিণত হয় সকল সকল পেশার মানুষের কাছে শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়ার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়।
বরগুনা শহরের বিশিষ্ট স্বর্ণব্যবসায়ী খোকন কর্মকার বলেন, বরগুনা শহরের প্রাণকেন্দ্রে নির্মিত এই লেকটি নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়ার একটা জায়গা। সারাদিনের কর্মব্যস্ততার ব্যস্ততার পর পর আমরা এখানে এসে একটু প্রাণ ফিরে পাই। তবে লেকটি আর আগের মতো নেই। রেলিংগুলো ভেঙে নিয়ে যাচ্ছে। ফুলগাছগুলোর ডালপালা ভেঙে ভেঙে গাছগুলোকে মেরে ফেলেছে।
অবসর প্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা শংকর ০ঁ০শীল বলেন, ডাস্টবিন থাকা সত্বেও লেকের পানিতে ময়লা আবর্জনা ফেলায় পানি দূষিত হচ্ছে। সকালে লেকে হাঁটতে আসা ইউসুফ মিয়া বলেন, প্রতিদিন সকালে অসংখ্য স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ যেমন এখানে হাঁটতে আসেন তেমনি বিকেলে শত শত নারীপুরুষ দর্শনার্থী লেকে আসেন কিছুটা সময় কাটাতে। তবে লেক সংলগ্ন একমাত্র পাবলিক টয়লেটটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় লেকে আগত দর্শনার্থীরা পড়েন বিপাকে।
উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসের কর্মকর্তা সমীরণ বাবু বলেন, পৌর কর্তৃপক্ষ যদি নাথপট্টি লেকে কয়েকটি সিসি ক্যামেরা স্থাপনের ব্যবস্থা করতো তাহলে লেকে কোনো প্রকার অপরাধ সংঘঠিত হতে পারতো না। কমে যেতো অপরাধ এবং কেউ চুরি করতে পারতো না লেকের মালামালও। এ প্রসঙ্গে বরগুনা পৌরসভার প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলাপ্রশাসক (সার্বিক) অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, বরগুনার পৌর
নাথপট্টি লেকটি বরগুনা বাসীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এখানে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ আসেন অবকাশ যাপনে। সম্প্রতি আমি লেকটি পরিদর্শন করেছি। লেকের রেলিং ও লাইটগুলো ভেঙে ফেলেছে। লেকের পানিও নোংরা হয়ে গেছে। আমরা অতি দ্রুত লেকটি মেরামত করে সেখানে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের ব্যবস্থা করবো। আর পাবলিক টয়লেটটি ইতোমধ্যে সংস্কার করা হয়েছে, দুএক সপ্তাহের মধ্যে সেটা ঢালু করা হবে।
কা/আ
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত