দুর্নীতি আড়াল করতে দুইটি 'নিবর্তনমূলক' নীতিমালা করেছে সরকার: ফখরুল
প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২২, ১৫:৪৮ | আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:২৭
প্রস্তাবিত ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া ও ওটিটি প্ল্যাটফর্ম রেগুলেশনের খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে বিএনপি। একই সঙ্গে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আবারও বাতিলের দাবি জানিয়েছে দলটি।
নিজেদের উদ্বেগের কথা জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘এই নতুন নীতিমালা করার উদ্দেশ্য হচ্ছে সত্যকে আড়াল করে মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করা এবং এর মাধ্যমে জনগণের কণ্ঠ রোধ করে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করা।
শনিবার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, ২০১৩ সালে আইসিটি অ্যাক্ট সংশোধন করে ৫৭ ধারা যোগ করে এবং ২০১৮ সালে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট প্রণয়নের মাধ্যমে দেশের জনগণ এবং মিডিয়ার বাকস্বাধীনতা নিয়ন্ত্রিত করার পর এখন অবশিষ্ট সামান্য যে বাকস্বাধীনতাটুকু রয়েছে, সেটুকু পুরোপুরি কেড়ে নেওয়ার জন্য সরকারের দুটি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দুটি নতুন নীতিমালা বা রেগুলেশন জারির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিটিআরসি ও তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের এ দুই নীতিমালাসহ ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট আইন ও নিবর্তনমূলক আইন বাতিল করার দাবি জানান তিনি।
ফখরুল বলেন, নিবর্তনমূলক এ দুটি নীতিমালা কার্যকর করা হলে দেশের সাধারণ মানুষের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি অনলাইনভিত্তিক মিডিয়াগুলোর মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও গোপনীয়তার অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করবে। পাশাপাশি অনলাইন এনক্রিপশনকে অকার্যকর করে নিরাপত্তাকে দুর্বল করে ফেলবে। ফলে মানবাধিকারের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। সাংবাদিক, বিরোধীদলীয় রাজনীতিক, মানবাধিকারকর্মী এবং ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী আরও বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
মির্জা ফখরুল বলেন, অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, কোনো নিবর্তনমূলক আইন দিয়ে তথ্যের প্রচার বন্ধ করা যায় না। সত্য জানার আগ্রহ থেকেই মানুষ সত্য তথ্যটির উৎস খুঁজে বের করে। সেই কারণে সংবাদপত্রের বিকল্প হিসেবে এসেছে ইলেকট্রনিক মিডিয়া। তারপর এসেছে অনলাইন ভিত্তিক বিকল্প সামাজিক মাধ্যম ও ওটিটি প্ল্যাটফর্ম। এ নীতিমালা প্রণয়নের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হচ্ছে সত্যকে আড়াল করে মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে জনগণের কণ্ঠরোধ করে একদলীয় বাকশালী কায়দায় ক্ষমতা চিরস্থায়ী করা।
মির্জা ফখরুল বলেন, সোজা কথায় বলা যায়, এ নিবর্তনমূলক নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি, অপশাসন, ভোটডাকাতি, তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়গুলোর প্রচার ঠেকাতে। এমনকি এ বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক কোনো মিডিয়াতে প্রচার হলে সেগুলো বাংলাদেশের জনগণ যেন দেখতে না পায় সেজন্যই তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ওভার দ্য টপ (ওটিটি) কনটেন্ট ভিত্তিক পরিষেবা দেওয়া এবং পরিচালনা নীতিমালা ২০২১ খসড়াটি প্রণয়ন করা হয়েছে।
ফখরুল বলেন, ২ ফেব্রুয়ারি বিটিআরসির ওয়েবসাইটে দেওয়া ইংরেজিতে লেখা খসড়া নীতিমালাকে দ্য বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন রেজুলেশন ফর ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া এন ওটিটি প্ল্যাটফর্মস ২০২১ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এবং ৫ মার্চের মধ্যে পর্যবেক্ষণ, মতামত ও সুপারিশ চাওয়া হয়। অন্যদিকে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ওভার দ্য টপ (ওটিটি) কনটেন্ট ভিত্তিক পরিষেবা প্রদান এবং পরিচালনা নীতিমালা ২০২১ শিরোনামের একটি খসড়া নীতিমালা সংশোধন/মতামত চাওয়া হয়েছে ২৮ ফেব্রুয়ারি মধ্যে। বিটিআরসির প্রস্তাবিত নীতিমালার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের সেই প্রতিবাদের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।
ফখরুল আরও বলেন, বিটিআরসির নীতিমালার সবচেয়ে আশ্চর্যজনক অংশটি হচ্ছে কোনো ব্যক্তির প্রতি আক্রমণাত্মক, মিথ্যা, হুমকি বা ভীতি প্রদর্শক ও অপমানজনক, মানহানিকর বিষয় প্রচার করা যাবে না।
ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, এ কথা নিশ্চিত করে বলা যায় যে, আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কোনো নেতার দুর্নীতির বিরুদ্ধেও যদি কোনো কিছু লেখা প্রকাশ করা হয় তাহলে বিআরটিসি নীতিমালার মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত