দাদুর মুখে সেদিনের কথা

  সাহিত্য ও সংস্কৃতি ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১০:৩২ |  আপডেট  : ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৪১

মোঃ তাইফুর রহমান
-------------------------


দাদুর সাথে দিনিয়াত, মুমু ও রূহান সামনের সিঁড়ির উপর একসাথে বসা। রাত তখন আটটা বাজে। অনেক দিন পর দাদুর সাথে সবার একসাথে বসা। দিনে তেমন আড্ডা দেয়ার সময় হয়না। স্কুলে যেতে হয়। তাছাড়া দাদুও সারাদিন কাজে ব্যস্ত থাকে। দাদুর সাথে দিনিয়াত, মুমু, রূহানের খুব ভালো সম্পর্ক। আজকে তাদের একটা ভালো আড্ডা জমবে। স্কুল ছুটি তাই রাতেও পড়ার বেশি চাপ নাই। দাদুও বেশ হাসিখুশি। রাতের খাবার খেয়ে বিশ্রাম নিয়ে দাদু (দিনিয়াত, মুমু ও রূহানকে নিয়ে) সামনের সিঁড়িতে বসেছে। জোৎস্নামাখা রাত,খোলা আকাশ কারনা ভালো লাগে। চাঁদমামার কিরণ মনকে প্রশান্ত করছে। দাদু সবাইকে জিজ্ঞেস করল কেমন আছো দাদুমণিরা? দিনিয়াত, মুমু, রুহান বলল আমরা ভালো আছি দাদুভাই। দাদু বলল আমিও অনেক ভালো আছি। দাদু বলল আজকে আমার খুব ভালো লাগছে। অনেকদিন পর তোমাদের সাথে অনেক ভালো সময় কাটবে। 

দাদু হুট করে ঘরের ভিতর থেকে বাদামের একটি প্যাকেট এনে সবাইকে বলল এই নাও তোমরা বাদাম খাও আর মজার মজার গল্প বলো। দাদুও সবার সাথে বাদাম খেতে লাগল। এর মধ্যে দিনিয়াত বলল আচ্ছা দাদু বলোতো তোমাদের আগেরকার সেই দিনগুলি বেশি আনন্দময় ছিলো, না আমাদের বর্তমান সময়টা বেশি  ভালো মনে হয় তোমার কাছে। মুমু বলল শোনো দাদু তোমাদের চেয়ে আমাদের বর্তমান সময়কার মানুষের জীবন অনেক ভালো কাটে। রুহান বলল ঠিক বলেছো মুমু।

 দাদুদের সেই সময়ে এত রাস্তা-ঘাট ভালো ছিলনা পায়ে হেঁটে হেঁটে পথ চলতে চলতে ক্লান্ত হত সবাই। মুমু উঠে দাঁড়াল শোনো দাদু ভাই ওরা সঠিক বলেছে। তোমাদের শৈশব দাদু তেমন আনন্দে কাটেনি। মোবাইল ছিলনা,ইন্টারনেট ছিলনা। কত কষ্টে দিন কাটত দাদু। তাইনা বলো? দাদু মিটিমিটি হাসতে লাগল। নাতীদের কথা সব-ই শুনতে লাগল। দাদু কোনো কথা বললেন না। ক্ষণিক বাদে দাদু বলল আর কোনো তোমাদের কথা আছে? দিনিয়াত বলল হ্যা দাদু, আছেইতো। তোমাদের যুগে এত ঔষধ ছিলনা। অনেক রোগী মারা যেত চিকিৎসার অভাবে। তোমাদের শৈশবে কিংবা তখনকার সময়ে তোমরা আমাদের মত দোকান-পাটে এত আড্ডা দিতে পারতেনা। তেমন দোকান পাটও ছিলনা। খুব কষ্টে তোমাদের সময় কাটত দাদু। আমি কি মিথ্যা বলছি দাদু? দাদু বলল আর কি কোনো কথা আছে কারো?রূহান বলল হ্যা দাদু আমি একটু বলি, তোমাদের যুগে এত দালান- কোঠা দেখতে পারোনি। এতো বিলাসবহুল গাড়ী বাড়িও দেখতে পারোনি দাদু ভাই। আমরা এগুলো অহরহ দেখতে পারি। এবার বলো দাদু তোমাদের তখনকার সময় ভালো ছিল? না এখনকার আমাদের সময়টা বেশি ভালো। বলো দাদু বলে ফেলো। দাদু বলল তোমাদের কথা এবার শেষ হয়েছে? সবাই একসঙ্গে বলল হ্যা দাদু শেষ হয়েছে। তাহলে শোনো এবার। আমাদের শৈশব ছিল মজায় ভরপুর। সাজ সকালে ধানক্ষেতে ঘুরতাম মন খুশিতে। 

খেজুরের রস আনতে গাছি ভাইয়ের কাছে ছুটে যেতাম। বকুল ফুলের মালা গলায় দিয়ে মামার বাড়ি যেতাম। শাপলা তুলতে বিলে ছুটে যেতাম। কতইনা আনন্দ হত। আর এখনকার সময়ে তোমরা অনেকে শাপলা ভরা বিল দেখতেই পারোনি‌। মামার বাড়ি আগের মত এখনকার সময়ে যাওয়া হয়না তোমাদের। খালে- বিলে মাছ ধরতাম। জাল টেনে টেনে মাছ ধরতাম। কতই না মাছ। সেই মাছের কথা বললে তোমাদের বিশ্বাস করতেই মন চাইবে না। তোমরা কয়টা মাছের নাম জানো? দিনিয়াত, মুমু, রুহান মুচকি হাসি দিলো। রুহান বলল না দাদু, বেশি মাছের নাম জানিনা। খালে- বিলে এখন মাছ কম দেখা যায়। দিনিয়াত বলল আরো শুনতে চাই দাদু। দাদু বলল হ্যা নিশ্চয় শুনবে দিনিয়াত। আমাদের যুগে আমরা নির্ভেজাল খাদ্য খেতাম। রোগ-বালাই কম ছিল, ঔষধ ও কম ছিল।এখন সব খাবার ভেজালে ভরপুর। ওহ্ ভালো কথা, তখন এত মোবাইল-ফোন না থাকলেও বাড়ি বাড়ি গিয়ে আমরা আত্মীয়-স্বজনদের খোঁজ নিয়েছি। সবার মাঝে আন্তরিক প্রীতি বজায় থাকত। এখন যোগাযোগের এত মাধ্যম থাকার পরেও তোমরা ক'জনের খোঁজ নিতে পারছো? আমাদের যুগে সবার মাঝে বন্ধুত্ব ছিল। ঝগড়া-হানাহানি তেমন ছিল না। এখনতো ভাইয়ে-ভাইয়ে দাঙ্গা দেখা যায় আরো কত সমস্যা। মুমু বলল ঠিক বলেছো দাদু, আসলেই সত্য‌। রূহান বলল আচ্ছা দাদু দেখেছ আমাদের গ্রামটা কতনা সবুজ-শ্যামল। তোমাদের সময়কার গ্রামের সৌন্দর্য্য নিয়ে আরেকটু বলবে আমাকে দাদু ভাই? শোনো রুহান গাছপালা এখন অনেক অনেক কমতে শুরু করেছে। মানুষ নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন করে চলছে। 

আমাদের সময়ে চারদিকে এত গাছপালা ছিল দেখলে অবাক হয়ে যেতে। কি মনোরম পরিবেশ আহ! এখনকার মানুষ বায়ু দূষণ, পানি দূষণের প্রতিযোগীতায় ব্যস্ত। মাটি দূষণতো চলছেই। গাছে গাছে ফল-ফলাদি আগের চেয়ে কমে আসছে। পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে আমাদের কান ঝালাপালা হয়ে যেত। তোমরাতো অনেকে সেই পাখিদের নামও বলতে পারবেনা। পাখিদের আনাগোনা আগের চেয়ে খুবই কম চোখে পড়বার মত। অনেক প্রজাতির পাখি হারিয়ে যেতে চলছে। আগেকার সেই নির্ভেজাল পরিবেশটা হারিয়ে যেতে বসছে। সবুজ-শ্যামল রূপ আগের মত ফিরিয়ে আনা সবার দায়িত্ব। মুমু বলল দাদু ভাই সবমিলিয়ে তোমাদের সেই সময় অনেক ভালোই কেটেছে তাইনা?

 দাদু বলল হ্যা, আমাদের সোনালী সময়টা অনেক মধুর ছিল। সকলের মন-মানসিকতা খুব ভালো ছিল। কারো মনে কেউ আঘাত দিতনা। কারো মনে তাই অশান্তি ছিলনা। সবার মন সহজ-সরল ছিল। এখনকার মত সবাই সেসময় ধনী না থাকলেও কিংবা এত বিলাসবহুল গাড়ী- বাড়ি না থাকলেও আমরা কুড়েঘরে বসেও শান্তি সুখের দেখা পেতাম। তখনকার সময় আমরা অযথা সময় ব্যয় করতাম না। প্রচুর পরিশ্রমী ছিলাম আমরা। তোমরাতো কেউ কেউ বেশ মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়ছো । আমাদের তখনকার সময়ে বিকেল হলে দখিনা হাওয়ায় সবুজ ঘাসের উপর আড্ডা দিতাম, তবে বাজে কোনো আড্ডা ছিলনা। এখনকার মত এত দোকানপাট, বাজার না থাকলেও সেসময়ে বিকেল হলে খেলার মাঠে ঘুড়ি উড়াতাম, রাখাল ভাইয়ের সাথে গল্প করতাম। সেই খেলার মাঠ, সেই ঘুড়ি আজ আগের মত দেখা যায়না। আমাদের তখনকার সময়টা অনেক আনন্দে কেটেছে। এখনকার মানুষের জীবনমান উন্নত হলেও আমাদের পুরনো সেই দিন সোনালী দিন মন থেকে মুছবে নয়। অনেক ভালোবাসি সেই দিনগুলোকে। দিনিয়াত বলল আসলেই দাদু ঠিক বলেছো। আগে জানতাম না তোমাদের তখনকার জীবন যাপন কেমন ছিলো। খুব ভালো লাগছে প্রিয় দাদু ভাই। মনে হয় সে যুগে আমরা আবার ফিরে যাই। কিন্তু সময় ও স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করেনা দাদু। দিনিয়াত বলল এক ঘটনা শুনতে শুনতে রাত অনেক হয়েছে। মুমু বলল ঠিক বলছো দিনিয়াত। রুহান বলল দাদু ভাই রাত অনেক হয়েছে। চলো ঘরে যাই। তোমাদের শৈশব আমাদের অনেক ভালো লেগেছে। দাদু বলল চলো এখন গিয়ে ঘুমাই। আবারো এরকম সময় পেলে গল্প জমবে। চলো এখন ঘুমাই।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত