দাও ফিরে সে অরণ্য
প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০২১, ১১:৩৪ | আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:২২
সুনীল শর্মাচার্য
__________________
সৌর জগতের তৃতীয় গ্রহ আমাদের পৃথিবী,
যেখানে ঘটেছে প্রাণের স্পন্দন। সৃষ্টির প্রথমে
লক্ষ লক্ষ মহীরুহ-ই আমাদের ধরিত্রী মা-কে
বেষ্টন করেছিল। ক্রমশ প্রাকৃতিক নিয়মে
জলবায়ুর পরিবর্তনে তা কিছুটা হ্রাস পেয়েছিল।
কিন্তু মানুষের অত্যাধিক লালসা, উচ্চাকাঙ্ক্ষা
---ক্রমশ পৃথিবীকে বৃক্ষহীন করে তুলল।বাড়ল
মরুভূমি।ঘটলো জলবায়ুর দ্রুত পরিবর্তন।
ক্রমাগত বৃক্ষচ্ছেদন করতে করতে আমরা আজ
যে ডালে বসে আছি, সেই ডালটাই কাটছি।
এইভাবে চলতে থাকলে পৃথিবীর ধ্বংস অবশ্যম্ভাবী। এই ধ্বংসের হাত থেকে এ বিশ্বকে
বাঁচাতে পারে একমাত্র গাছ, মহীরুহ বৃক্ষ।
সেই পটভূমিকাতেই রচিত হয়েছে আমাদের
নাটক'দাও ফিরে সে অরণ্য'!
নাটকের শেষে আমরা সমগ্র বিশ্বের জৈববৈচিত্র্য
রক্ষা করার জন্য উদ্ভিদের জয়গান গেয়েছি।
সম্পূর্ণ নাটকটি লেখা হয়েছে ছড়ার ছন্দে। শুরু
হচ্ছে আমাদের নাটক: দাও ফিরে সে অরণ্য
প্রথম দৃশ্য
_________
ঘন জঙ্গল। চারদিকে ছোট বড় গাছ। মাঝখানে
পশু পাখির দল।(সিংহ,বাঘ,হাতি,শেয়াল,হরিণ,
ঈগল, খরগোশ)
(নেপথ্যে গান---সিংহ মশায় সভাপতি
আজকের সভার অধিপতি)
(গান শেষ হলে সিংহের গর্জন)(২বার)
সিংহ: ওহে পশুর দল
দেখছ কেমন রোদ উঠেছে
আকাশ ঝলমল!
(শেয়ালের ডাক ২বার)
শেয়াল:হ্যাঁ,মহারাজ রোদ তো বেজায়
জমবে শিকার বেশ!
চল হে সব শ্বাপদ যত
ছাড়তে হবে দেশ!
(ঈগলের ডাক)
ঈগল:হ্যাঁ মহারাজ আমরা সবাই
চাইতো শিকার ধরতে।
কিন্তু মানুষ উড়িয়ে ফানুস
দেয় না মোদের উড়তে।
(২)
(বাঘের ডাক)
বাঘ:ঠিক বলেছ ঈগল রাণী
বড্ড জ্বালায় মানুষ
কিন্তু বড্ড বুদ্ধু ওরা
তাই তো ওড়ায় ফানুস।
(হরিণের ডাক)
হরিণ:দেখেছ ভাই চতুর্দিকে
গরম শুধু গরম!
সেই গরমে উধাও হল
ঘাসের শয্যা নরম!
এটাই মোদের খাবার ছিল,
আর ছিল গাছপালা
লোভীমানুষ গাছ কেটেছে
সকাল,বিকেল বেলা!
(পশুদের ডাক একসঙ্গে)
সবপশুরা:আর পারিনা,বড্ড গরম
মানুষ সয় কি করে?
গাছের দল(প্রথম):চালাক মানুষ বন্দী এখন
এসির ঠাণ্ডা ঘরে!!
গাছের দল(দ্বিতীয়):ছাড়ছে এ.সি
ক্লোরোফ্লুরো কার্বনের যৌগ,
ভাঙছে এবার সভ্যতা সব
ভাঙবে জীব-বর্গ।
প্রথম গাছের দল: দেখছ এখন কমে কমে
কোথায় ঠেকেছি মোরা!
আমরাই তো আগে ছিলাম
সারা পৃথিবী জোড়া!!
(হাতির ডাক)
হাতি: ঠিক বলেছ গাছ ভায়ারা
তোমরা ছিলে সেরা
তোমরাই তো সাজিয়ে ছিলে
পাথুরে এই ধরা!
(হাতির ডাক)
(খরগোশের ডাক)
খরগোশ: আমরা সবাই অক্সিজেন আর
খাবার দাবার গাছের থেকে পাই!
(সিংহে ডাক)
সিংহ: সব পশুরা তাইতো বলি---
গাছ বাঁচানো চাই!গাছ বাঁচানো চাই!
গাছ বাঁচানো চাই!
(মিউজিক করুন সুরে)
(মানুষের অত্যাধিক লোভ,স্বার্থপরতা,
সাম্রাজ্যবাদী মনোভাব ক্রমশ গ্রাস করেছে
আমাদের মাতৃভূমি বসুধাকে।সমস্ত পৃথিবী জুড়ে
দেখা দিচ্ছে জলবায়ুর দ্রুত পরিবর্তন,টর্নেডো,
সাইক্লোন,হ্যারিকেনের মত বিধ্বংসী ঝড়ের দাপট, দূষণের খর বাতাসে আমাদের প্রিয়
ধরিত্রী আজ দিশেহারা। তবুও আশাবাদী মানুষ
তার ডুবে যাওয়া তরণীকে বাঁচানোর আপ্রাণ
চেষ্টা করে।)
সে আকুল কন্ঠে গেয়ে ওঠে---
(খর বায়ু বয় বেগে) (গান নাচ)
দ্বিতীয় দৃশ্য:
__________
(মঞ্চের একপাশে নোংরা আবর্জনার স্তূপ।
একদিকে গুটিকয়েক গাছ। বেশিরভাগ জায়গায় ফ্ল্যাট। আবর্জনার স্তূপের চারদিকে
মশার দল।মঞ্চের অন্যদিকে তিনজন মানুষ।
মস্ত বড় ফ্ল্যাট তৈরির কাজে মত্ত।)
প্রথম মানুষ:দেখছো ভাই আমার তৈরি
মস্ত বড় ফ্ল্যাটটা,
চোদ্দ তলার ঘর গুলোতে
বিশাল হাওয়ার ঝাপটা।
দ্বিতীয় মানুষ:খুব সুন্দর ভাই
আকাশটাকে পারবে ছুঁতে
মাটির চিন্তা নাই।
তৃতীয় মানুষ: কিন্তু ভায়া পুকুর বুঁজে
মস্ত বড় ফ্ল্যাট!
ভূ-কম্পে ভাঙে যদি
সবাই কুপোকাত!
প্রথম মানুষ:আরে থামোতো ভাই
কুপোকাত যে হবে হবে,
ফ্ল্যাট বেচলে টাকাটা তো
আমার গ্যাঁটেই রবে!
দ্বিতীয় মানুষ:ঠিক বলেছ,
ভবিষ্যতের চিন্তা করে লাভ হবে কি?
আমরা এখন,ধোঁয়া উড়িয়ে
মাটি কাঁপিয়ে নিজেরাই বাঁচি!
প্রথম গাছ:ভাবছ, মানুষ পারবে বাঁচতে
এমন দূষণ থেকে?
এত কি আর সহজ হবে,
শিখবে ঠেকে ঠেকে!
দ্বিতীয় গাছ: এমন প্রলয় আসবে দেখো,
নেই কারুর নিস্তার!
বোকা মানুষ করছে ক্রমেই
রোগজীবাণুর বিস্তার!(২)
মশার দল:(চারজন) আমাদের ভারী মজা
ভাইরে(২)
জমা জল নোংরাতে
যত খুশি ডিম পাড়ি,
ঝাঁকে ঝাঁকে বেড়ে উঠি
তাইরে!
আমাদের ভারী মজা
ভাইরে(৩)!
প্রথম মশা: দেখেছ ভাই মানুষ কেমন বুদ্ধু!
পারছে না তো মারতে মোদের
কাঁপছে বিশ্ব শুদ্ধ।
দেখেছ ভাই মানুষ কেমন বুদ্ধ!
তৃতীয় ও চতুর্থ মশা:ঠিক বলেছ রাণী সকল,
মানুষ বড়ই বুদ্ধ!
ওদের দোষেই বাড়ছে গরম
মরছে বিশ্ব শুদ্ধ!
প্রথম গাছের দল: জলবায়ুর পরিবর্তন,
এলো কিনা জানিনা,
সব কিছুতেই মানুষ দায়ী
নেই তো ওদের ভাবনা!
দ্বিতীয় গাছ: মেরুর বরফ গলছে এখন,
বাড়ছে ভূমিকম্প!
তবুও কি ভাই শিক্ষা হবে?
করবে দূষণ স্বল্প!
প্রথম গাছ:ওদের জন্য জীবকুল
আজ বড়ই বিপন্ন,
শাস্তি ওদের পেতেই হবে,
নেই পথ অন্য!
মশার দল: আমরাই তো দিচ্ছি ওদের
উপযুক্ত সাজা!
ছোটো হলেও আমরা এখন,
এই পৃথিবীর রাজা!
আমরা এই পৃথিবীর রাজা(২)!
(মানুষদের গিয়ে মশাগুলো কামড়াবে)
(নেপথ্যে মানুষগুলো বলবে : উ! বড্ড কষ্ট,উ!
কী জ্বালা! আ! কী যন্ত্রণা,বাবাগো,মাগো!আর
পারছি না!)
তৃতীয় দৃশ্য
__________
প্রথম, দ্বিতীয় বিজ্ঞানী:বড্ড ভাবনা হচ্ছে এবার,
কি করবো মোরা?
এত দূষণ চললে জেনো
বাঁচবে না তো ধরা!
তৃতীয় চতুর্থ বিজ্ঞানী: মেরুর বরফ গলছে যত
বাড়ছে তত গরম!
উধাও হবে নদী-নালা,
আবহাওয়া যে চরম!
প্রথম দ্বিতীয় বিজ্ঞানী:বিশ্ব জুড়ে জলবায়ু
দিচ্ছে ওয়ার্নিং,
কান পাতলেই শুনতে পাবে,
গ্লোবাল ওয়ার্মিং!
গ্লোবাল ওয়ার্মিং!
গ্লোবাল ওয়ার্মিং!
তৃতীয় চতুর্থ বিজ্ঞানী: উন্নয়নের নামে মোরা
করছি আরো ক্ষতি,
এই বিপদ থেকে বাঁচতে হলে,
উদ্ভিদেরাই গতি!
প্রথম দ্বিতীয় বিজ্ঞানী:ওরা নিজেদের নিঃস্ব করে,
সব দিয়েছে মোদের,
চলো ভাই সব আদর করে
ফিরিয়ে আনি ওদের!
তৃতীয় চতুর্থ বিজ্ঞানী:ওরাই রাজা এই পৃথিবীর
ওরাই সবার সেরা,
ওদের স্পর্শে বাঁচবে জেনো
মুর্মূষু এই ধরা!
প্রথম দ্বিতীয় বিজ্ঞানী:তাই চলো আজ
সব প্রাণীরা
এক সাথে ভাই বলি,
গাছ-পালারাই
রাজা মোদের
ওদের সাথে চলি(৩)
(নেপথ্যে গান বেজে উঠবে আর গানের সুরে মঞ্চের পর্দা নেমে আসবে)(গান)
আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে...
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত