তুষারার হ্যাটট্রিক, লঙ্কানদের কাছে সিরিজ হারল শান্তরা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৯ মার্চ ২০২৪, ১৮:৫০ |  আপডেট  : ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:২৬

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথমটিতে হারলেও দ্বিতীয়টি জিতে সমতায় ফিরেছিল বাংলাদেশ। এরপর সিরিজ জয়ের লক্ষ্যে আজ লঙ্কানদের মুখোমুখি হয় টাইগাররা। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এই ম্যাচে টসে জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন টাইগারদের অধিনায়ক নাজমুল শান্ত। আর বল হাতে শুরুতেই দলকে উইকেট এনে দিয়েছিলেন তাসকিন আহমেদ। তবে ব্যাট হাতে দুর্দান্ত খেলেছেন কুশল মেন্ডিস। লঙ্কান এই ওপেনারের খেলা ৫৫ বলে ৮৬ রানের ইনিংসেই নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৭৪ রানের সংগ্রহ গড়ে সফরকারীরা। জবাবে ব্যাট করতে শুরুতেই লিটন দাসকে হারায় লাল-সবুজের দল।

এরপর চতুর্থ ওভারে নুয়ান তুশারার প্রলয়ংকারী হ্যাটট্রিকে বিধ্বস্ত হয় স্বাগতিকরা। তবে শেষদিকে রিশাদ হোসেনের ৩০ বলে ৫৩ আর তাসকিনের ২১ বলে ৩১ রানের ঝড়ো ইনিংসের সুবাদে কেবল হারের ব্যবধানই কমিয়েছে টাইগাররা। ১৯.৪ ওভারে অলআউট হওয়ার আগে শেষ পর্যন্ত ১৪৬ রান সংগ্রহ করে টাইগাররা। ফলে ২ বল হাতে রেখেই ২৮ রানের জয় তুলে নিয়েছে শ্রীলঙ্কা। এতে করে ২-১ ব্যবধানে সিরিজও জিতে নিয়েছে সফরকারীরা। 

লঙ্কানদের দেয়া ১৭৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে আজ দেখেশুনেই শুনেই শুরু করেছিলেন দুই টাইগার ওপেনার। তবে তৃতীয় ওভারে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ধনঞ্জায়া ডি সিলভার বলে দাসুন শানাকার মুঠোবন্দী হয়ে দলীয় ১৩ রানেই সাজঘরে ফিরেন ওপেনার লিটন দাস। 

এদিকে লিটন ফেরার পর চতুর্থ ওভারে রীতিমত ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছেন নুয়ান থিসারা। ইনিংসে নিজের প্রথম ওভার করতে এসেই হ্যাটট্রিক করেছেন লঙ্কান এই পেসার। চতুর্থ ওভারের দ্বিতীয় বলেই দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে শান্তর স্ট্যাম্প উপড়ে দেন থিসারা। 

এরপর ক্রিজে এসে পরের বলেই থুসারার শিকারের পরিণত হন হৃদয়। লঙ্কান এই পেসারের করা বলে নিজের স্ট্যাম্প উপড়ে যাওয়া দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিল না টাইগার ব্যাটারের। এরপর ক্রিজে এসে সুবিধা করে ওঠতে পারেননি মাহমুদউল্লাহও। থুসারার বলে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়ে সাজঘরে ফিরেন তিনি। ফলে এক ওভারেই টানা তিন বলে ৩ উইকেট হারিয়ে চরম বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ।

বিপাকে পড়া দলের হাল ধরতে এরপর ক্রিজে সৌম্যর সঙ্গী হন জাকের আলী। তবে থুসারার আঘাত থেকে রক্ষা পাননি সৌম্য। নিজের করা দ্বিতীয় ওভারে লঙ্কান এই পেসার বোল্ড করেছেন সৌম্যকেও। সৌম্য দলীয় ২৪ রানে ফেরার পর জাকের আলীও আউট হন দ্রুতই। তবে এরপর বড় এক জুটি গড়েই দলের বিপর্যয় সামলে নেন শেখ মেহেদী ও রিশাদ হোসেন। 

৩২ রানে ৬ উইকেট হারানোর লঙ্কান বলারদের সামলে ৩১ বলে ৪৪ রানের কার্যকরী এক জুটি গ্রেছিলেন এই দুই ব্যাটার। দুজন মিলে ঘুরিয়েছেন রানের চাকা, বাড়িয়েছেন দলীয় সংগ্রহ। তবে ২০ বলে ১৯ রান করে হাসারাঙ্গার বলে আউট হয়ে মেহেদী সাজঘরে ফিরলে ফের হোঁচট খায় বাংলাদেশ। 

দলীয় ৭৬ রানে মেহেদী ফেরার পর ক্রিজে রিশাদের সঙ্গী হন তাসকিন। এদিকে দলের এমন বিপর্যয়ের দিনে আজ ব্যাট হাতে দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন রিশাদ। তরুণ এই লেগস্পিনার মেহেদীর সঙ্গে ৪৪ রানের জুটির পর তাসকিনের সঙ্গেও গড়েন ২০ বলে ৪১ রানের জুটি। তবে দলীয় ১১৭ রানে রিশাদ আউট হলে ভাঙে এ জুটি। সাজঘরে ফেরার আগে ৭ ছয়ে ৩০ বলে ৫৩ রানের ঝড়ো এক ইনিংস খেলেছেন তরুণ এই লেগ স্পিনার। 

এদিকে রিশাদ দলীয় ১১৭ রানে সাজঘরে ফেরার পর অলআউট হওয়ার আগে স্কোরবোর্ডে আরও ২৯ রান তুলেছে বাংলাদেশ। ব্যাট হাতে তাসকিনের ঝড়ো ব্যাটিংয়েই শেষ পর্যন্ত ১৪৬ রানে থামে বাংলাদেশ। ১৯.৪ ওভারে অলআউট হলে ২৮ রানে পরাজিত হয় টাইগাররা। লঙ্কানদের হয়ে আজ হ্যাটট্রিকসহ ৫ উইকেট নিয়েছেন পেসার তুশারা। 

এর আগে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে শরিফুল ইসলাম-তাসকিন আহমেদদের আঁটসাঁট বোলিংয়ে আজ ব্যাটিং ইনিংসের শুরুর দিকে কিছুটা চাপেই ছিল লঙ্কানরা। টাইগার বোলারদের সামলে প্রথম ৩ ওভারে ১৮ রান তুলেছিল শ্রীলঙ্কা। তবে চতুর্থ ওভারের প্রথম বলেই তাসকিনের শিকারে পরিণত হন ওপেনার ধনঞ্জায়া ডি সিলভা। 

চতুর্থ ওভারে তাসকিনের করা প্রথম বলেই সৌম্য সরকারের মুঠোবন্দী হয়ে সাজঘরে ফিরেন লঙ্কান এই ওপেনার। আউট হওয়ার আগে ১১ বল খেলে তিনি করেছেন ৮ রান। এদিকে ডি সিলভা ফেরার পর ক্রিজে কুশল মেন্ডিসের সঙ্গী হন কামিন্দু মেন্ডিস। আগের ম্যাচে এই মেন্ডিস জুটিই লঙ্কানদের এনে দিয়েছিল লড়াকু পুঁজি। তবে আজ আর ইনিংস বড় করতে পারেননি কামিন্দু মেন্ডিস। 

অষ্টম ওভারে রিশাদের করা চতুর্থ বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে শরিফুলের মুঠোবন্দী হন কামিন্দু। আউট হওয়ার আগে ১২ বলে ১২ রান করেছেন তিনি। এদিকে দলীয় ৫২ রানে কামিন্দু ফেরার পর ক্রিজে কুশল মেন্ডিসের সঙ্গী হন দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে দলে ফেরা লঙ্কান অধিনায়ক হাসারাঙ্গা। তবে প্রত্যাবর্তনের দিনে নিজের ইনিংস বড় করতে পারেননি তিনি। 

১ চার এবং ১ ছয়ে ১৩ বিওলে ১৫ রান করে মোস্তাফিজের বলে শরিফুলের মুঠোবন্দী হয়ে সাজঘরে ফিরেছেন তিনি। এরপর চারিথ আসালাঙ্কাকেও প্যাভিলিয়নের পথ দেখান শরিফুল। এদিকে একপ্রান্তে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারালেও অপরাপ্রান্তে লঙ্কানদের রানার চাকা ঘুরিয়েছেন মেন্ডিস। টাইগার বোলারদের সামলে ৩৫ বলেই ফিফটি তুলে নেন তিনি। এরপর এগোচ্ছিলেন শতকের দিকে। তবে তাকে সেঞ্চুরি হাঁকাতে দেওননি তাসকিন। টাইগার এই স্পিডস্টারের বলে সৌম্যর মুঠোবন্দী হয়ে ৫৫ বলে সমান ৬টি করে চার ও ছয়ে ৮৬ রান করে সাজঘরে ফিরেছেন তিনি।

এদিকে দলীয় ১৪০ রানে মেন্ডিস ফেরার পর শেষদিকে ক্রিজে এসে ৯ বলে ১৯ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলেছেন দাসুন শানাকা। টাইগারদের হয়ে বল হাতে আজ সর্বোচ্চ ২টি করে উইকেট নিয়েছেন রিশাদ এবং তাসকিন। 

 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত