জার্মানিতে ক্ষমতাসীন জোটে ভাঙন
প্রকাশ: ৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৬:৩৩ | আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৫২
জার্মানিতে অর্থমন্ত্রী লিন্ডনারকে বরখাস্ত করেছেন দেশটির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস। এর জেরে এফডিপি সব মন্ত্রীকে তুলে নিয়েছে। এতে করে আগামী বছরের জানুয়ারিতে আস্থাভোট হবে। আর মার্চে হতে পারে নির্বাচন। এদিকে এফডিপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পর গ্রিন পার্টিকে নিয়ে সংখ্যালঘু সরকার চালাবেন ওলাফ শলৎস। বাজেট পাস করার জন্য তিনি সিডিইউ-র সমর্থন চেয়েছেন। রক্ষণশীল নেতা মেরজ এই বিষয়ে দলের সিদ্ধান্তের কথা জানাবেন।
ওলাফ শলৎস এফডিপি নেতা লিন্ডনারের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, তিনি খুবই ক্ষুদ্র রাজনৈতিক নীতি নিয়ে চলছিলেন। এটা একেবারেই মেনে নেওয়া যায় না।
শলৎস আরও বলেন, “অর্থমন্ত্রী আমাদের কোনো প্রস্তাব রূপায়ণ করতে রাজি ছিলেন না। আমি দেশকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে এই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছি।”
শলৎস জানিয়েছেন, ২০২৫ সালের বাজেটে এক হাজার কোটি ইউরোর ঘাটতির মোকাবিলা করার জন্য একটা পরিকল্পনা অর্থমন্ত্রীকে দিয়েছিলেন। এই পরিকল্পনা নিয়ে মতবিরোধের জেরেই জোটে ভাঙন ধরল।
গত সপ্তাহে লিন্ডনার একটি নথি প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি আর্থিক প্রস্তাবের একটা তালিকা দেন, যা অন্য দলগুলো মানেনি। তার মধ্যে ছিল, জনকল্যাণে খরচ ছাঁটাই করা, পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে খরচ ছাঁটাই করা, কোম্পানিগুলোর কর কম করার প্রস্তাব কার্যকর করা নিয়ে দলগুলোর মধ্যে মতৈক্য হয়নি। শলৎসের বক্তব্য, এফডিপি নেতা তার নতুন প্রস্তাব কার্যকর করার কোনো ইচ্ছা প্রকাশ করেননি। অথচ, ওই প্রস্তাবগুলো ছিল দেশের জন্য জরুরি ও ভালো। দেশের ক্ষতি হোক এটা তিনি চাননি।
শলৎস বলেছেন, তিনি প্রস্তাব দিয়েছিলেন, বিদ্যুতের দাম কমাবার জন্য, কোম্পানিগুলোকে সাহায্য করার জন্য, গাড়ি প্রস্তুতকারক কোম্পানিতে কর্মরতদের চাকরি বাঁচাতে বাড়তি ঋণ নেওয়া হোক। তিনি বিনিয়োগ করার জন্য কোম্পানিগুলোকে কর ছাড়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ইউক্রেনকে বাড়তি সাহায্য করার কথা বলেছিলেন।
শলৎস জানিয়েছেন, তিনি গ্রিন পার্টির সঙ্গে মিলে সংখ্যালঘু সরকার চালাবেন। আস্থাভোট নেবেন ১৫ জানুয়ারি। তবে তিনি সম্ভবত আস্থাভোটে হারবেন। সেক্ষেত্রে মার্চে নির্বাচন হবে। শলৎস জানিয়েছেন, তিনি সিডিইউ ও সিএসইউ-এর সঙ্গে কথা বলবেন।
এদিকে বিরোধী অতি-ডানপন্থি এএফডি জানিয়েছে, তারা শলৎসের জোট সরকারে ভাঙনকে স্বাগত জানাচ্ছে। অনেক আগেই এটা হওয়া উচিত ছিল। তাদের হাত থেকে জার্মানির মুক্তি পাওয়া দরকার ছিল। এএফডি নেতাদের অভিযোগ, এই জোট দেশকে আর্থিক সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছে। বর্তমান সংকট থেকে দেশকে বের করে আনার জন্য নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগ দরকার। এএফডির দাবি, শলৎস অবিলম্বে আস্থাভোট নিন।
জার্মানির সমাজবাদী বামপন্থি দলগুলো তাদের নির্বাচনী প্রচার শুরু করে দিয়েছে। বামপন্থি দলগুলো একযোগে ঘোষণা করেছে, বাতাস তাদের অনুকূলে আছে। শলৎসের জোট দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে এবং অস্থিরতা তৈরি করেছে। তারা তিন বছর ধরে ক্ষমতায় থেকেও দেশ ও মানুষকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ।
অবশ্য শলৎসের নেতৃত্বাধীন জোটে প্রথম থেকেই সমস্যা ছিল। এসপিডি ও গ্রিন হলো মূলত বাম-ঘেঁষা দল, যারা বিশ্বাস করে রাষ্ট্রকে শক্তিশালী হতে হবে এবং জনকল্যাণ ও পরিবেশ বাঁচাতে প্রচুর অর্থ খরচ করতে হবে। আর এফডিপির অবস্থান ছিল উল্টো মেরুতে। তারা মনে করে, রাষ্ট্র খুব কম বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে। আর্থিক ক্ষেত্রে সংযম দেখাবে। জার্মানিতে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে যে কড়াকড়ি আছে তা মেনে চলবে। তাই জোটের শরিকদের মধ্যে অনেক বিষয় নিয়েই মতবিরোধ হয়েছে।
সা/ই
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত