জামিন বাতিলের বিরুদ্ধে সম্রাটের আপিল আবেদনের শুনানি ৬ জুন

  গ্রামনগর বার্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ৩০ মে ২০২২, ১১:০৩ |  আপডেট  : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭:০২

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের জামিন বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে যে আপিল করা হয়েছে, তার ওপর আগামী ৬ জুন শুনানির দিন নির্ধারণ করেছেন আপিল বিভাগ।

সোমবার (৩০ মে) বিচারপতি মো. নুরুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন। আদালতে সম্রাটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান। অন্যদিকে, দুদকের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান।

১৯৫ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে সম্রাটের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে একটি মামলা করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের উপপরিদর্শক রাশেদুর রহমান বাদী হয়ে রাজধানীর রমনা থানায় এই মামলা (মামলা নম্বর ১৪) করেন। সম্রাট তার সহযোগী এনামুল হক আরমানের মাধ্যমে ১৯৫ কোটি টাকা সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় পাচার করেছেন বলে মামলায় অভিযোগ আনা হয়।

সিআইডি কর্মকর্তারা জানান, ২০১১ সালের ২৭ ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ৯ আগস্ট পর্যন্ত সম্রাট সিঙ্গাপুরে ৩৫ বার, মালয়েশিয়ায় তিনবার, দুবাইতে দুবার এবং হংকংয়ে একবার ভ্রমণ করেছেন। এছাড়া তার সহযোগী এনামুল হক আরমান ২০১১ সালের ১২ ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ১৮ মে পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে ২৩ বার ভ্রমণ করেছেন। সম্রাট ও আরমান অবৈধ অর্থ দিয়ে যৌথভাবে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন।

এরপর ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর ভোরে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের আলকরা ইউনিয়নের কুঞ্জুশ্রীপুর গ্রামে আত্মগোপনে থাকা সম্রাটকে গ্রেফতার করা হয়। তার সঙ্গে আরমানকেও গ্রেফতার করা হয়। পরে ঢাকায় এনে তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদও করে র‌্যাব। একইদিন দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমের নেতৃত্ব একটি দল কাকরাইলে ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টারে সম্রাটের কার্যালয়ে অভিযান শুরু করে। এ দিন নিজ কার্যালয়ে পশুর চামড়া রাখার দায়ে তার ছয় মাসের জেল দিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম। এরপর সম্রাটকে কারাগারে পাঠানো হয়।

পরে ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম দুই কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার ৮৭ টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগে সম্রাটের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

মামলার বিবরণ অনুযায়ী, সম্রাট বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত এই বিপুল সম্পদ অর্জন করেন। তিনি মতিঝিল ও ফকিরাপুল এলাকায় ১৭টি ক্লাব নিয়ন্ত্রণ করতেন এবং সেগুলোতে লোক বসিয়ে মোটা অঙ্কের কমিশন নিতেন বলেও অভিযোগ আছে। অনেক সময় ক্লাবগুলোতে ক্যাসিনো ব্যবসা পরিচালনা করতেন।

গত ১১ মে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় জামিন পান ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬-এর বিচারক আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামান শুনানি শেষে তার জামিন মঞ্জুর করেন।

জামিন আদেশের পর সম্রাটের আইনজীবী মাহবুবুল আলম দুলাল জানিয়েছিলেন, তার বিরুদ্ধে মোট চারটি মামলা করা হয়। অস্ত্র, মাদক ও অর্থপাচারের মামলায় ইতোমধ্যে জামিন পেয়েছেন তিনি। কারাগারে ছিলেন শুধু দুদকের মামলায়। তবে সে মামলাতেও জামিন পাওয়ায় তার মুক্তিতে বাধা নেই। এরপর কারা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়নে একইদিন বিকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) তার জামিনের কাগজপত্র পৌঁছালে সেখানেই মুক্তির আনুষ্ঠানিকতা সারা হয়।

এরপর সে জামিনাদেশ স্থগিত ও বাতিল চেয়ে গত ১৬ মে হাইকোর্টে আবেদন জানায় দুদক। সে আবেদনের শুনানি নিয়ে সম্রাটের জামিন বাতিল করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তাকে ৭ দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন আদালত। গত ১৮ মে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজহারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে সম্রাটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।

শুনানি শেষে দুদক আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান বলেন, শুনানিকালে মেডিক্যাল রিপোর্ট না দেখেই কীভাবে বিচারিক আদালত স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে সম্রাটকে জামিন দিল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্ট।

এরপর গত ২২ মে সম্রাটের জামিন বাতিল করা হাইকোর্টের লিখিত আদেশ প্রকাশিত হয়। পরে সে আদেশের বিরুদ্ধে চেম্বার জজ আদালতে আবেদন জানান সম্রাট। কিন্তু আবেদনটি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত