জামালপুরের সরিষাবাড়ী ও সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার বিচ্ছিন্ন ছয় ইউনিয়ন নিয়ে "যমুনা উপজেলা" দাবি

  ছাইদুর রহমান,জামালপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮:৩৪ |  আপডেট  : ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ২১:১৮

জামালপুরের সরিষাবাড়ী ও সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী বিচ্ছিন্ন ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে নতুন "যমুনা উপজেলা" বাস্তবায়ন চায় চরাঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত প্রায় দেড় লাখ মানুষ। প্রমত্তা যমুনা নদী দ্বারা বেষ্টিত ও চিরতরে বিচ্ছিন্ন জনপদের মানুষ ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে লড়াই চালিয়ে আসলেও বাস্তবায়নে এগিয়ে আসেনি কোনো সরকার। 

শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেলে কাজীপুরের মুনসুরনগর, নাটুয়ারপাড়া, খাসরাজবাড়ী, তেকানী, নিশ্চিন্তপুর ও চরগিরিশ ইউনিয়ন মিলে "যমুনা উপজেলা" ঘোষণার দাবিতে সমাবেশ করেছে এলাকাবাসী। বাংলাদেশ কৃষক সমিতি প্রস্তাবিত যমুনা উপজেলা শাখার উদ্যোগে এম মুনসুর আলী জাতীয় উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। 

এসময় বক্তারা জানান, ১২টি ইউনিয়ন নিয়ে কাজীপুর গঠিত। এরমধ্যে ৬টি ইউনিয়ন যমুনা নদীর পূর্বপাড়ে এবং ৬টি যমুনার পশ্চিমপাড় স্থল ও শহরাঞ্চলে। মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে প্রমত্তা যমুনা। উপজেলার মোট আয়তন ৩৬৮ বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে সুবিধাবঞ্চিত পূর্বাংশেই ২০৩ বর্গ কি.মি. এবং পশ্চিমাংশে নদীসহ ১৬৫ বর্গ কি.মি.। আয়তনে বড় এবং জনবহুল পূর্বপাড়ের ৬টি ইউনিয়নের মানুষ কাজীপুর ও সিরাজগঞ্জের মূল অঞ্চল থেকে চিরতরে বিচ্ছিন্ন। 

এ অঞ্চলের মানুষের একমাত্র ভরসা সীমান্তবর্তী জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলা। উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম যমুনার পশ্চিমপাড়ে হওয়ায় পূর্বপাড়ের মানুষদের ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে হয়। যেখানে জীবন থাকে হাতের মুঠোয়। এমনকি উপজেলা পরিষদে যেতে সময়ও লাগে প্রায় রাজধানী ঢাকা যাওয়ার সময়ের সমান। নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশাসনিক সহযোগিতা পাওয়া দুষ্কর। মামলা-মোকাদ্দমার কাজ থাকলে একদিন আগেও রওনা দিতে হয়। যাতায়াতের একমাত্র পথ যমুনা নদী হলেও নেই লঞ্চ বা সরকারি পরিবহন ব্যবস্থা। ইতোপূর্বে অনেকবার নৌকাডুবি ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। নামে কাজীপুর উপজেলা হলেও শুধু প্রশাসনিক প্রয়োজন ব্যতিত ব্যবসা-বাণিজ্য ও দৈনন্দিন কাজের জন্য যোগাযোগের সহজমাধ্যম সরিষাবাড়ী উপজেলা, যেখানে যেতে সময় লাগে মাত্র ১০-২০ মিনিট। 

৬টি ইউনিয়নের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পাবলিক পরীক্ষাও নিয়ন্ত্রণ করে সরিষাবাড়ী উপজেলা প্রশাসন। অপরদিকে কৃষিপ্রধান এ অঞ্চলে বারমাস বিভিন্ন ফসলের বাম্পার ফলন এবং বিপুল অংকের টাকা সরকার রাজস্ব পেলেও রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং শিক্ষা ও উন্নয়নবঞ্চিত নদীভাঙা মানুষ। উপজেলার ১৪টি কলেজের মধ্যে পূর্বপাড়ে মাত্র ২টি, ১৪টি কারিগরি কলেজের সবগুলোই যমুনার পশ্চিমপাড়ে। ৫৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৪২ টিই পশ্চিমপাড়ে। ১০টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে ৯টিই ওপাড়ে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ ৪টি হাসপাতালের সবগুলোই পশ্চিমপাড়ে। ৮টি ভেটেরিনারির মধ্যে মাত্র একটি এপাড়ে। এছাড়া ভূমিসেবার জন্যও নেই এপাড়ে মানুষদের জন্য কোনো ব্যবস্থা।  

এলাকাবাসীর দাবি, চরাঞ্চলের অবহেলিত মানুষদের ভাগ্যোন্নয়ন ও বৈষম্য দূর করতে "যমুনা" নামে পৃথক উপজেলা ঘোষণা করা হোক। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কবি আলতাফ হোসেন, গাজী আলী আক্কাস, গোলাম ফারুক বিএসসি, প্রকৌশলী সোহেল রানা, শিপন হৃদয় প্রমুখ।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত