জাতির উদ্দেশে ভাষণে কী বললেন ইমরান খান?

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১ এপ্রিল ২০২২, ১১:২৯ |  আপডেট  : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১:০৯

অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার অভিযোগে বিরোধী দলগুলোর আনা অনাস্থা ভোটের আগেভাগে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান পদত্যাগের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, ‘শেষ বল পর্যন্ত আমি লড়াই চালাব।’ বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি অভিযোগ করেন, বিদেশি শক্তির সাহায্য নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে বিরোধীরা।

ইমরান খান বলেন, “দেশ আজ এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে উপনীত হয়েছে। সামনে এখন দুটি পথ আছে। তার মধ্যে একটি পথে চললে অদূর ভবিষ্যতে পাকিস্তানকে আমরা একটি আত্মমর্যাদাশীল রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে পাব, আর অপর পথটি আমাদেরকে একটি তল্পিবাহক দাস রাষ্ট্র গঠনের দিকে পরিচালিত করবে।”

তিনি আরও বলেন, “পাকিস্তানকে একটি ন্যায়ভিত্তিক, আত্মমর্যাদাপূর্ণ ও আধুনিক কল্যাণমূলক ইসলামি রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন থেকেই রাজনীতিতে এসেছিলাম। যখন আমি রাজনীতি শুরু করি আমার ম্যানিফেস্টোতে তিনটি জিনিস যুক্ত করেছিলাম। তা হলো ন্যায়বিচার। যার অর্থ হলো শক্তিধর এবং দুর্বল সবার জন্য একই আইন কার্যকর থাকবে। থাকবে মানবতা। কারণ, একটি ইসলামি রাষ্ট্রে থাকবে দয়া, সহানুভূতি। তৃতীয়ত থাকবে খুদ্দারি। কারণ, মুসলিম জাতি কোনো দাস হতে পারে না।“

ইমরান খান বলেন, “আল্লাহ যদি আমার প্রতি সন্তুষ্ট না থাকতেন তাহলে আমি রাজনীতিতে প্রবেশ করতে পারতাম না। আমি ১৪ বছর চেষ্টা করেছি। লোকজন বার বার আমার কাছে জানতে চেয়েছেন কেন রাজনীতিতে এলাম। একটি আদর্শের কারণে রাজনীতিতে এসেছি। যখনই রাজনীতিতে যোগ দিয়েছি, তখন থেকে সব সময়ই বলেছি, আমি কারো কাছে আমার মাথা নত করব না। জাতিকেও মাথা নত করতে দেবো না। এর অর্থ আমার জাতিকে কারো দাস হতে দেবো না। এই অবস্থান থেকে কখনো আমি সরে যাইনি।”

ইমরান খান আরও বলেন, “আমি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমার পররাষ্ট্রনীতি হবে স্বাধীন। এটা হবে পাকিস্তানের জন্য। এর অর্থ এই নয় যে, আমরা শত্রুতা চাই। যখন আমি সরকার পেয়েছি বলেছি, আমাদের পক্ষে যাবে না এমন কোনো পররাষ্ট্রনীতি আমাদের হবে না।”

ইমরান খান তার ভাষণে উল্লেখ করেন, প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন হওয়ার পর থেকেই তিনি বিরোধীদের সীমাহীন অসহযোগিতার শিকার হয়েছেন এবং তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার ‘ষড়যন্ত্রের’ পেছনে তিন পাকিস্তানি রাজনীতিবিদের হাত রয়েছে। এরা হলেন শেহবাজ শরিফ, ফজলুর রহমান ও আসিফ আলী জারদারি। এই তিন বিরোধী রাজনীতিক যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চক্রান্তে সরাসরি যুক্ত বলে অভিযোগ করেন তিনি। সেইসাথে তিনি বলেন, পাকিস্তানের জনগণ কখনও এই ষড়যন্ত্রে সংশ্লিষ্টদের ক্ষমা করবে না।

তিনি দাবি করেন, বিদেশিরা তাঁকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতে চায়। এদের সঙ্গে বিরোধী দলগুলোর যোগাযোগ রয়েছে। অনাস্থা ভোটে তিনি জয়ী হয়ে গেলে পাকিস্তানকে কঠিন সময়ের মুখে পড়তে হবে।

ইমরান বলেন, "সবচেয়ে আপত্তির বিষয় হলো, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের গোপন আঁতাত। প্রকৃতপক্ষে তারা হলো এক একজন ভাঁড় এবং ভাঁড়ের অর্থ হলো বৈধ দাস।"

ইমরান খানের দাবি, তাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে বৈদেশিক চক্রান্ত হচ্ছে এবং ‘হুমকি দিয়ে চিঠি’ পাঠানো হয়েছে। ওই চিঠিকে তিনি নিজের দাবির পক্ষে ‘প্রমাণ’ বলেছেন। ‘হুমকি চিঠি’ নিয়ে কথা বলার সময় ইমরান মুখ ফসকে এর পেছনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাম বলে ফেলেছিলেন। পরে তাড়াতাড়ি ভুল শুধরে নেন তিনি।

ইমরান বলেন, ‘‘আমি আজ এখানে, তার কারণ ৮ মার্চ বা তার আগে ৭ মার্চে যুক্তরাষ্ট্র থেকে....না, যুক্তরাষ্ট্র নয়, আমি বলতে চেয়েছি অন্য কোনও একটি ভিনদেশ থেকে আমরা একটি বার্তা পেয়েছি, একটি স্বাধীন দেশের জন্য এই ধরনের বার্তা শুধু প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নয় বরং এটা একইসঙ্গে দেশের বিরুদ্ধেও।”

যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ইঙ্গিত করে ইমরান খান বলেন, তারা আগেই জানত অনাস্থা ভোট হবে। অথচ তখনো অনাস্থা প্রস্তাব দেওয়া হয়নি। এর অর্থ হলো বিরোধীরা বিদেশের এসব মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তাঁরা বলছেন, তাঁরা পাকিস্তানের ওপর ক্ষুব্ধ। তাঁরা অজুহাত তৈরি করছে। তাঁরা বলছে, তাঁরা পাকিস্তানকে ক্ষমা করে দেবে যদি অনাস্থা ভোটে ইমরান খান হেরে যান। কিন্তু যদি এই পদক্ষেপ ব্যর্থ হয় তাহলে পাকিস্তানকে কঠিন সময় পার করতে হবে।

রোববার অনাস্থা প্রস্তাব

এর আগে আজ সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী ইমরানের বিরুদ্ধে বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে বিতর্ক ছাড়াই জাতীয় পরিবেশনের অধিবেশন মুলতুবি হয়ে যায়। ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান শুরী আগামী রোববার বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত অধিবেশন মুলতুবির কথা ঘোষণা করেন।

ওই দিনই পাক পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে অনাস্থা প্রস্তাব ঘিরে ভোটাভুটির মুখোমুখি হওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন ইমরান খান।

অনাস্থা ভোট কীভাবে কাজ করে

পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী, পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠদের মাধ্যমে একজন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। পাকিস্তানের পার্লামেন্টে ৩৪২ জন সদস্য আছেন।

অর্থাৎ, একজন প্রার্থীকে প্রধানমন্ত্রী হতে ১৭২ জন সদস্যের ভোটের প্রয়োজন হয়। আবার তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে এবং তার মন্ত্রিসভা ভেঙে দিতে হলেও একই সংখ্যক অনাস্থা ভোটের প্রয়োজন হয়। তাই ইমরান খানকে অনাস্থা ভোটে টিকে থাকতে হলে ৩৪২ আসনের পার্লামেন্টে অবশ্যই ১৭২ ভোট পেতে হবে।

অনাস্থা ভোটে ইমরান খান হেরে গেলে তিনি প্রধানমন্ত্রী পদ হারাবেন এবং তার মন্ত্রিসভা ভেঙে যাবে। এরপর পার্লামেন্টের ভোটে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করা হবে। নতুন প্রধানমন্ত্রী চাইলে এই পার্লামেন্টের মেয়াদ শেষ না পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন। নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে যে কোনো দলই প্রার্থী দিতে পারবে।

উল্লেখ্য, বর্তমানে পালামেন্টের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৩ সালের আগস্টে। মেয়াদ শেষে নিয়ম অনুযায়ী পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে একটি সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু, নতুন প্রধানমন্ত্রী ২০২৩ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা না করে চাইলে তার আগেই একটি সাধারণ নির্বাচন দিতে পারবেন।

এক নজরে জাতির উদ্দেশে ভাষণে কী বললেন ইমরান খান?

১. মীরজাফর এবং মীর সাদিক কারা ছিলেন? তিনি (মীরজাফর) ইংরেজদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বাংলা দখল করেছিলেন। ইংরেজদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সিরাজদৌল্লাকে মেরে ফেলেছিলেন। নিজের স্বার্থের জন্য নিজের সম্প্রদায়ের মানুষকে পরাধীন করেছিলেন। অপরজন (মীর সাদিক) ইংরেজদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে টিপু সুলতানের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন।

২. দেশকে নিয়ে ব্যবসা করা হচ্ছে। দেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে ব্যবসা করা হচ্ছে। আমাদের যে সদস্যরা বিরোধীদের দিকে গিয়েছেন, তাদের বলছি যে আপনাদের উপর চিরকালের জন্য বিশ্বাসঘাতকের দাগ পড়ে যাবে।

৩. ২০-২৫ কোটি রুপি দিয়ে ‘বিদ্রোহীদের’ কেনা হয়েছে। তাতে দেশের যুব সমাজের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে।

৪. ভোটের ফলাফল যাই হোক না কেন, আমি তারপর আরও শক্তিশালী হয়ে সামনে আসব। যাই ফলাফল হোক না। আমি চাই যে (রবিবার) আমার পুরো সম্প্রদায় দেখুক যে কারা দেশকে নিয়ে ব্যবসা করছেন।

৫. মানুষের সেবা করতে আমি রাজনীতিতে যোগ দিয়েছি। আমি ভাগ্যবান যে আল্লাহ আমায় খ্যাতি, অর্থ সবকিছু দিয়েছেন। আমি যখন রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলাম, তখন আমার তিনটি লক্ষ্য ছিল - বিচার সুনিশ্চিত করা, মনুষ্যত্ব এবং আত্মনির্ভরতা

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত