বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে নিবন্ধ
জল, পাতা আর পাখিদের গল্প
প্রকাশ: ৬ জুন ২০২২, ১৩:৩৬ | আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭:৪৮
শাশ্বত স্বপন
---------------------
আপনার গ্রামের বাড়ির কথা একটু ভাবুন। আপনার বাড়ির কোন একটা ঘরের পেছনে একটা ডোবা বা একটা পুকুর ছিল বা এখনও আছে; এমনকি ডোবা ও পুকুর—দু‘টাই হয়তো বাড়ির সীমানার ভিতরে থাকতে পারে। আপনাদের অনেক বড় বাড়ি আর অনেক বড় পরিবার হলে একটা দীঘিও থাকতে পারে। বাড়ির পাশে হয়তো দুই তিনটে বাড়ি থাকতেও পারে, নাও থাকতে পারে। ডোবা, পুকুর বা দীঘি যখন খনন করা হয়, তখন সেখানে ছোটরা খেলা করেছে-- 'এই গাঙ্গে কুমির নাই, নাইয়া ধুইয়া বাড়ি যাই।' আপনি, আমি, আমরাও ছোট বেলায় কত আনন্দে কুমির কুমির খেলা করেছি! মাটি-কাঁদা মেখে মায়ের বকুনি, কানমলা খাওয়া--মনে আছে? ডোবা-পুকুরের খননকৃত সেই মাটি দিয়ে আপনাদের ঘর বা উঠানের সমতল উঁচু ভিত্তি গড়েছেন, সেখানে দাগ কেটে কোর্ট বানিয়ে ছোটবেলায় কতবার এক্কা দুক্কা, কুত্ কুত্ খেলা করেছেন! এখন আপনার, বাচ্চারা হয়তো খেলা করে। কদম ফুল, বরুন ফুল দেখে খুশি হয়ে পুকুর পাড়ে রোপণ করেছিলেন, ভরা বর্ষায় পাড় ভেঙ্গে সে গাছ জলে চলে যায়, বছরের পর বছর ধরে জলে পড়ে থাকা সেই গাছের পঁচা গুঁড়ির ভেসে থাকা অংশে অন্য কোন ক্ষূদ্র গাছের চারা গজিয়ে উঠে, মনে পড়ে?
আপনার বাড়ির পূ্র্ব-পশ্চিম বা উত্তর-দক্ষিণের দুইটি ঘরের পাশে ফাঁকা জায়গায় আম-জাম-কাঠাল-পেয়েরা-পেঁপে-কাচামরিচ-বেগুন-লেবু আরো কত কি গাছ ছিল বা আছে, তাই না? পুকুরের চারদিকে হিজল-করচ, আবার কেউ কেউ কলাগাছও রোপণ করে। একটি ঘরের পেছনে অথবা ডোবা বা পুকুরের আশেপাশে একটু দূরে একটি বাঁশের তৈরি পায়খানা, না হয় তিন-চারটা স্যানেটারী চাকতি দিয়ে তৈরি একটি পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকে। গ্রামের বেশির ভাগ বাড়ির পয়ঃনিষ্কাশন লাইনটা পুকুরের দিকেই থাকে। মনে আছে অবশ্যই, পায়খানার চারিদিকেই কিন্ত জঙ্গল, কত নাম না জানা গাছ জন্মে; তবে ভেরেন্ডা, ডোলকলমী, হেলেন্চা, বড়ুই গাছ; সেই বড়ুই গাছের উপর পরজীবি স্বর্ণলতা, মনে পড়ে? বৃষ্টিস্নাত সেই স্বর্ণলতা কি চিকচিক করত!
প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে জঙ্গলের ভিতরে সরু পথের শেষে সবাইকে যেতে হত। দুই পা প্রশস্ত সরু পথে চলতে গোখরা, শঙ্খনী, রাসেল ভাইপার সাপ কখনও কখনও চোখে পড়ত। তারা ব্যাঙ, ছোট সাপ, টিকটিকি, পাখি, পাখির বাচ্চা-- এসবই খেত। গ্রামের অধিকাংশ বাড়ির পিছনের দিকটায় খুব বেশি ঝোপ জংলা থাকত। কোন কোন বাড়িতে এতটাই ঝোপ জংলা ছিল যে, মানুষেরা সাপ-ব্যাঙ-পাখি-লতা-পাতার সাথে প্রকৃতির মত করেই জীবন যাপন করত। লাকড়ির ঘরটার কথা মনে আছে? খড়ের স্তুপ? লাকড়ির ঘরে, গোয়াল ঘরে, খড়ের স্তুপে আর জঙ্গলে সাপ দেখা যেত, ফণিমনসা, দুধরাজ, গোখরা, শঙ্খিনী, আর পুকুরে দেখা যেত ডোরা সাপ --এরা সবাই ইঁদুর, ব্যাঙ খেয়ে বেঁচে থাকে, মাঝে মাঝে মুরগীর ছানাও খায়। নিরিহ শঙ্খনী কি প্রতাপে রাসেল ভাইপারকে গিলে খেত! দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবাই দেখতেন, তাই না? প্রায়ই মাটির গর্ত, অব্যবহৃত রান্না ঘরে চুলা, লাকড়ির ঘর, খড়ের স্তুপ, গোয়াল ঘর থেকে গোখরা, শঙ্খিনী সাপ ধরা পড়ত, তারপর পিটিয়ে মেরে ফেলা হত। শঙ্খনী মানুষকে কামড়াত না, আর ভাইপার, তার বিষের তো ওষুধই নেই। আক্রান্ত না হলে কোন সাপই মানুষকে কামড় দেয় না, আর সব সাপও বিষাক্ত নয় অথচ আমরা নির্বিচারে সব ধরনের সাপই মেরে ফেলতাম, তাই না? এখন শঙ্খিনী আর চোখে পড়ে না, তবে রাসেল ভাইপারের ধরা পড়ার গল্প প্রায়ই শুনি।
ঐ ঝোপঝাড় আর জংলার ভেতর দিয়ে একাধিক সরু, দুই পা প্রশস্ত নয়, এক পায়ে চলা পথ ছিলো, যে পথে নিতান্ত বাধ্য না হলে কেউ চলতো না। আর চললেও সাপ কিংবা ভূতের ভয় নিয়ে চলতে হতো। সেখানে ডাহুকের ডাক ছিলো নিয়মিত। এক পায়ের সরু পথে কবিরাজ মহাশয়রা তাদের ঔষধি গাছ সংগ্রহের জন্য, বাড়ির গৃহকর্তা, কর্ত্রী গাছ কাটতে, ডাল পালা যোগাড় করতে, কোন লতার গাছের ওষধী পাতার খোঁজে পাহাড়ীদের মত হাতে দা, কাচি নিয়ে ভিতরে খুব সাবধানে যেত। তবে রাতের চোরেরা বিপদের আঁচ পেলে এই বিপদজনক জঙ্গলে লুকিয়ে থাকত। জঙ্গল এতই ঘন যে, টর্চ লাইটের আলোও তাদের গায়ে লাগত না।
ডাহুক পাখির বাসাগুলো এই সরুপথের দুপাশে ভিতরে বেশি দেখা যেত। এদের ডিমগুলো দেখতে ছোট ছোট প্রাকৃতিক নুড়ি পাথরের মত, ক্যামোফ্লেজ করার জন্য প্রকৃতির ঈশ্বর কত কর্মই না করে যাচ্ছেন! ডাহুকের ডিমের উপর লোকগল্পটা মনে আছে? 'আষাঢ়-শ্রাবণ মাসের ভরা পূর্ণিমায় ডাহুক পাখি ডাকতে ডাকতে তাদের গলা চিরে রক্ত বের হয়ে আসে, সেই রক্ত তারা তাদের সদ্য পাড়া ডিমের উপরে বুলিয়ে দেয়। রক্ত না পড়লে ডাহুকের ডিম ফুঁটে ছানার জন্ম হয় না। এই জন্যই ডাহুকের ডিমে লাল লাল রক্তের মত ছিটছিটে ছোপ থাকে।' এ গল্প লোকগল্প বা লোকজ বিশ্বাস, ডিমের উপরে এলোমেলো ছোপ দেখে কী দূর্দান্ত এক গল্প বানিয়ে ফেলেছে হাজার বছর আগের কে বা কারা। এখন সেই ঝোপঝাড় বা জংলা কোনোটাই নেই, তাই না ভাই? আর ডাহুকের ডাক শুনতে পাওয়া, সেতো চিন্তাই করা যায় না। ঘুঘু পাখির সেই মায়াবী ডাক, কাক-দোয়েল-চড়ুই-কোকিল-মাছরাঙ্গা-ডাহুক-বাবুই-শালিক --আরো কত পাখি কত সুরে ডাকতে ডাকতে গ্রামের গাছে গাছে উড়ে বেড়াত ! ছোট বেলায় পাখির বাসা খুঁজতে কত দূরে চলে যেতাম, কত গাছের উপরের মগডালে উঠে যেতাম! আপনিও, তাই না? ডাহুক, ঘুঘু কিংবা শঙ্খিনী সাপদের আবাসস্থল ধ্বংস করে সেখানে আমরা বসত বাড়ি, মৎস্য খামার, ইটের ভাটা গড়েছি। ডাহুক, ঘুঘু কিংবা শঙ্খিনী তো দূরস্ত, ভূতকে পর্যন্ত তাড়িয়ে দিয়েছি। মানুষের বুদ্ধির সাথে, হিংসার সাথে, দখলের সাথে পেরে উঠবে ভূতের ঘটে কি সেই বুদ্ধি ধরে!
আরেকটু স্মৃতিতে যাই, ভাটিবাংলার মানুষ আমরা, বর্ষার পানিতে পুকুর ডুবে, উঠানেও পানি চলে আসে, মাঝে মাঝে রাস্তাটাও ডুবে যায়। বর্ষার স্রোতে পুকুরে নানা রকম মাছ আর জলজ উদ্ভিদে পূর্ণ হয়ে উঠে। এক বর্ষাকালীন সময়েই, গুল্ম লতা পাতা সবই পানিতে ডুবে মরে যায়, বর্ষা শেষে আবার গজে উঠে। সাঁকো দিয়ে এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়ি যেতে হত, বাড়ি থেকে মূল রাস্তা পর্যন্ত বাঁশের সাঁকো। শহর থেকে আসা বাবুরা সাঁকো পাড় হতে গিয়ে সে কি ভয় পেত! আমরা ভাটিবাংলার বীর পুরুষেরা বীরত্ব দেখাতে সাঁকো থেকে, রাস্তার কাঠেরপুল থেকেও স্রোতমান পানিতে ঝাঁপ দিতাম। বিকালে নৌকা করে আত্নীয়দের শাপলা বিলে নিয়ে যেতাম। বর্ষার পানি নদীতে, সমুদ্রে চলে যাবার পর, পলি মাটিতে আপনাদের কয়েক বিঘা জমি তখন উর্বর, বীজ বুনলেই ফসল। এখন তো সেখানে ইটের ভাটা অথবা ইট-পাথরের রাস্তা আর দালান-কোঠার জঙ্গল, তাই না?
ভাটিবাংলায় এক সময়ে মানুষেরা বেশ শান্তিতে ছিল, সেই শান্তির কথা অনেক দূরে ছড়িয়ে পড়েছিল, তাই দিনে দিনে অন্য দেশের, অন্য জেলার বহিরাগতরা বসতি গড়তে লাগল। বহিরাগত স্রোতের সাথে বিভিন্ন মতবাদের লেবাস নিয়ে ভণ্ডরা পীর-আওলিয়া-সাধু-সন্যাসী-পাগল বেশে স্বর্গ-নরকের ভয় দেখাতে শান্ত লোকালয়গুলোতে চলে থাকে। আপনারা ক্ষেতে তখন বীজ বুনছেন, আর ভণ্ডরা আপনার মনের মাঠে বীজ বুনেছে, এখনও বুনছে। এভাবেই এক সময় আপনারা ধর্মের নামে অধর্মের নেশায় আশক্ত হয়ে ছিলেন, কেউ আবার বেশি আসক্ত হয়ে পড়ে, তখন কষ্টকর ফসল উৎপাদন বাদ দিয়ে আপনি বা আপনার পরিবারের কোন সদস্য, সদস্যরা ধর্ম ব্যবসার পসরা সাজিয়ে বসেছেন।
সেই যাই হোক, আমরা এবার আপনার বাড়ির বাস্তুতন্ত্রের দিকে তাকাই। ঘরে ভাত খেয়ে কাঠের ফাঁক দিয়ে নিচে খাবার ফেলছেন না? শীতকালে, হাঁস-মুরগী ও এদের বাচ্চারা খেয়ে ফেলে, বর্ষাকালে মাছেরা খায়। যে ছিটালে, ময়লা বা মরার ভাগাড়ে অধিকাংশ ময়লা ফেলেন, তা কিন্ত পায়খানার কাছেই। সেখানে দিনের বেলা আপনাদের কুকুরেরা খাবে, মুরগীরা খাবে, বিকাল- সন্ধ্যা- রাতে বিড়ালে খাবে, ইঁদুরে খাবে। আর রাতে, বিশেষ করে কাক জ্যোৎন্সায়, কাক ভোরে শিয়াল-বাগডাসা-মেছো বিড়াল--এরাও খায়। মনে পড়ে, খাদ্য সংকটে পড়ে, বিশেষ করে বর্ষাকালে, বাঘডাসা বা শিয়ালেরা হাঁস-মুরগী বা তাদের ছানা চুরি করার জন্য উত্ পেতে জঙ্গলের কাছে বসে থাকত। আবার দিনের বেলা হাঁস মুরগীর বাচ্চা ছুঁ মেরে নেবার জন্য বিরান মাঠে উড়াল দিয়ে চিল-শকুনেরা হানা দিত।
অতি ক্ষূদ্র ক্ষূদ্র খাবারের কথা তো ভুলেই গেলেন। নিরিহ গা বাওয়া পিঁপড়ে আর লাল বিষ পিঁপড়ে সারাদিন দলে দলে এসে সেই ক্ষূদ্র খাবারগুলো মুখে পুড়ে নিয়ে যেত। তারপর, গা ঘিন ঘিন করা তেলাপোকা, মনে আছে? তেলাপোকাগুলোকে পিষে মেরে ফেললে, পিঁপড়েরা তাদের মরা, আধমরা দেহ খেয়ে সাবাড় করে দিত, মাঝে মাঝে কোথা থেকে রেলগাড়ির মত শত পায়ে চলা লাল কেন্নো পোকা, ছুঁইলেই জিলাপির মত গোল হয়ে যায়; তারপর কানচোরা পোকা, আরো কত পোকা, দেখতাম ঘরের বেড়া, পাটাতনের ফাঁকে ফাঁকে, বিশেষ করে লাকড়ির ঘরটাকে বর্ষাকালে পোকার সংখ্যা ছিল অগণন।
ও, ব্যাঙের কথা তো ভুলেই গেছি। পুকুরের সোনা ব্যাঙ আর ঘরের কুনো ব্যাঙ কোটি কোটি পোকা মাকড় বিশেষ করে মশা, মশার লার্ভা খেয়ে আপনাদের বাড়ির বাস্তুতন্ত্রটা সচল রেখেছিল। উঁইপোকার কথা মনে পড়ল, পাটখড়ির গায়ে মাটি জমা করে কি যে করত! টিকিটিকি, রঙ বদলানো গিড়গিটি তারাও কত পোকামাকড় মেরে খেত। টিকটিকির লেজ, ডিম নিয়ে কত কি করেছি!
দিনের বেলা আপনাদের হাতে খুন হওয়া, মরা, পঁচা প্রাণিজ বস্তুকে কুকুর ,কাক; শুধু কুকুর কাক কেন, চড়ুই, বাবুই, শালিক --কত পাখিই তো খুটে খুটে খেত। আর রাতের বেলা ইঁদুর, বেড়াল, শিয়াল, বাঘডাসা, গেছোবিড়াল –এরা বাকি সব বর্জ্য খেয়ে পরিবেশ পরিষ্কার রাখত। দাদার কাছে, দাদুর কাছে হাতি-বাঘের গল্প শুনেছেন? কোন সময় এখানে ঘন জঙ্গল ছিল, জঙ্গলে নাকি হাতি, বাঘ, ভল্লুক ইত্যাদিও ছিল, তাদের পূর্ব পুরুষরা দেখেছে, শিকার করেছে এবং নিজেরাও শিকার হয়েছেন।
রবি শস্যের সময়ে ইঁদুর কিন্ত অত্যাধিক বেড়ে যায়, বাসা থেকে ফসলের মাঠ পর্যন্ত ইঁদুর আর বিড়ালে ছুটাছুটি--কে না দেখেছে। মাঝে মাঝে কুকুরেরা মিলে বিড়ালদেরকে দাওয়া করলে উপায়ান্ত না পেলে বিড়াল কাঁটাওয়ালা মান্দার গাছে উঠে যায়। রাতে বিড়াল ইঁদুরকে তাড়া করত, কখনও কখনও বড় ইঁদুর, চিকা একা বা একত্রে মিলে বিড়ালকে তাড়া করত। ধান ক্ষেতের গভীরে, যখন ধান প্রায় পেকে আসত, হঠাৎ চোখে পড়ত ধানটুনি পাখির বাসা, বাসাতে কখনও ডিম, কখনও পাখির বাচ্চা দেখা যেত।
এবার ফসলের মাঠে যাওয়া যাক-- দিনের শেষে, সন্ধ্যায় শুরু হত হুক্কা হুয়া ডাক, বিশেষ করে, রাতে শিয়ালের সংখ্যাটা বেশি থাকবেই, একদল আরেক দলকে দৌঁড়ানি দিত, মারামারি হত, আর সে কি চিৎকার! বাসার কুকুরগুলো হুক্কা হুয়ার বিপরীতে ঘেউ ঘেউ করতে থাকত। তবে যেদিন পঞ্চায়েত কবরে কারো লাশ দাফন হয়, তখন কয়েকদিন বাড়ির ত্রিসীমানায় শিয়ালদের কম দেখা যায়। শিয়ালেরা আখের ডগা ভেঙ্গে রস খায়, রস যা খায়, তার দশগুন ডগা ভেঙ্গে রেখে যায়, পরদিন সেগুলো কেটে ফেলে দিতে হয়। এরা খাল পাড় ধরে সারারাত মরা প্রাণির দেহ, মরা তাজা মাছ খুঁজতে থাকে। কখনও সারা রাত হাঁস-মুরগীয় খোয়ারের পাশে, বা কাছের জঙ্গলে চোরের মত বসে থাকে, কুকুরের আওয়াজ পেলেই, দে ছুট! রাতের বেলা কখনো কখনো শিয়াল বা বাঁঘডাসা মুরগি টেনে নিয়ে যাচ্ছে আওয়াজ পেলে লাটি টেটা নিয়ে আপনি, আমি, সবাই বাড়ির সীমানার কাছে ফসলের ক্ষেত পর্যন্ত চলে যেতাম। কখনো মরা মুরগী পেতাম, কখনো পেতাম না। দিনের বেলাও শিয়াল বাঘডাসা বাড়ির পাশে ঝোপের মধ্যে উত্ পেতে লুকিয়ে থাকত, সুযোগ বুঝে মুরগী বা মুরগীর ছানা নিয়ে লুকিয়ে পড়ত। সেই শিকার হওয়া মুরগীর আওয়াজ পেলে, পাড়ার সবাই মিলে দা-কাচি-লাঠি-টেঁটা নিয়ে জঙ্গলে খুঁজতে থাকতাম, কুকুরগুলোও আমাদের সাথে দৌঁড়াত, পাড়ার ছোটরা পেত আনন্দ, অর্জন করত অভিজ্ঞতা। আপনার গ্রামটাও তো এ রকমই ছিল, তাই না?
চলেন, স্কুল বা কলেজে যাই। কত বড় জায়গা, কত ছাত্র-ছাত্রী, কত শিক্ষক! এখানে একটা/ দুইটা বড় পুকুর, আর একটা খেলার মাঠ থাকবেই। স্কুল কলেজের পাশে বনাদী গাছ বা জঙ্গল থাকে। বিকালের পরে স্কুলের সীমানায় নিরবতার কারণে শিয়ালের সংখ্যাটা বেশিই থাকে। তারপর যে রাস্তা ধরে স্কুলে আসলেন, তার কোন এক পাশে বা দুইপাশে সরু খাল থাকে, খালের এক পাশে হয়তো একটা পঞ্চায়েত কবর থাকতেও পারে। আপনাদের বাড়ির পুকুরের কিনারাতে আর এই খালের কিনারাতে কাকভোরেও শিয়ালদের দেখা যায়। আপনারা যে ভাগারে মরা গরু ছাগল ফেলে দিয়ে আসেন, ঋষিরা চামড়া তোলে নেবার পর ভাবছেন, কোন প্রাণিগুলো তা খেয়ে সাবাড় করে? যে জমি, যে জঙ্গল পরিষ্কার করে আপনি বসতি গড়ে তোলেছেন, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা-মসজিদ-মন্দির-কবরস্থান-শ্মশান ঘাট- গড়ে তোলেছেন, প্রকৃতির এই জায়গাগুলোতে আমরা সহ উপরে বর্ণিত সব প্রাণির বসবাস করার অধিকার ছিল। কিন্ত আমরা ক্ষমতা বলে অধিকাংশ বন-জঙ্গল দখল করে, ওদের জন্য সামান্যই বাকি রেখেছি। তবু তো গ্রামে রেখেছি, শহরে তো কল্পনা করাও যায় না।
আপনার বাড়ির পাশে তালগাছের পাতায় বাবুই বাসা দেখেছেন, মনে আছে? কত বাসা, কি নিঁখুত বাসা বানায়! কোন ইন্জিনিয়ার ওদের কিছু শিখায় নাই। সাপের বাচ্চা জন্মের পরই সাঁতরাতে পারে, নিজেই খেতে পারে। শিয়াল কুকুরের বাচ্চারাতো জন্মের কিছুক্ষনের মধ্যেই হাঁটতে, দৌঁড়াতে পারে। ওরা খাদ্য উৎপাদন করতে পারে না, আমাদের মুখপানে চেয়ে থাকে। নইলে মানুষের চেয়ে মাঝে মাঝে মনে হয়, এই সব প্রাণিগুলোই বেশি ভাল।
আপনাদের বাসার কাছে কাচা রাস্তার উপর, কয়েক বছর হল, নতুন পাকা রাস্তা তৈরি হয়েছে। রাস্তাটা বর্ষাকালে পানিতে তলিয়ে যায়, তাই ফি বছর মেরামত করতে দেখেন।,হঠাৎ পাকা রাস্তায় ফাঁকে ইট-সিমেন্ট-পীচ ভেদ করে জীবনের জয়গান দেখেছেন? নতুন কোন বৃক্ষের জেগে উঠা? মনে পড়ছে?
আসুন, আপনার বাড়ির পেছনে পুকুরে যাই। সেচ দিয়ে পৃকুরের সব পানি বিরান মাঠে ছড়িয়ে দিয়েছেন, কাঁদা কাঁদা হলে লাঙ্গল চালাতে সুবিধা হয়। পুকুরের সব মাছ তোলা হলে বাচ্চাদের খেলা চলতে থাকত। পুকুরের ব্যাঙ আর কাউট্রা নিয়ে লাঠি দিয়ে পিটাপিটির সে কি খেলা! এ না হলে কি মানুষের বাচ্চা! বড় হলে ছাগল-ভেড়া-গরু-মহিষ মারবে কিভাবে? এখন থেকেই তো শিখতে হবে। এসব দেখে বড়রা হাসে, আমিও, মানুষ তো। পুকুর জল শূন্য করতে গিয়ে হঠাৎ চোখে পড়ল নির্বিষ ডোরাসাপ। আপনাদের বীর পুঙ্গমরা পিটিয়ে মেরে তক্তা বানিয়ে দিয়েই থেমে থাকেনি, তারপর মরা তক্তা সাপটিকে চাকু দিয়ে ফালা ফালা করে, পাশের জঙ্গলে ফেলে গেল। জঙ্গলের জমিনওয়ালা, যে নিজের জঙ্গলে মাত্র আগুন দিয়েছে, সেখানে ছুড়ে মেরে এক বীর পুঙ্গম দেখাতে চাইছে, সে কত বীর, কত মহৎ!
ও, বলা হয়নি, আপনার বাড়ির দুইশত হাত পশ্চিমে নতুন প্রতিবেশি চলে আসছে, তাই জঙ্গল কেটে কেরোসিন ছিটিয়ে আগুন জ্বালিয়ে প্রকৃতির আজে-বাজে, অপ্রয়োজনীয় সাপ-ব্যাঙ-গিরগিটি-শিয়াল-ইঁদুর-নানান পোকামাকড়ের সব বসতি পুড়িয়ে মেরে পরিষ্কার করে দিয়েছে। পরিষ্কার করতে গিয়ে পাখির বাসা, সেই বাসায় থাকা পাখির ডিম দেখে প্রতিবেশি কত মানবিক গল্প বলেছিল, মনে আছে? আমরা এমনি মানবিক! যে প্রাণিগুলো নিজেরাই এক একটা খাদক, বড় প্রাণিটা ছোটটাকে খেত, মৃত্যুর এত ভয় সত্ত্বেও তবু প্রাণিগুলো মানুষের কাছে থাকতে চাইত না, নিজেরাই খাদ্যচক্র শৃংখলের মধ্যে একত্রে সাবধানে থাকত, লোকালয়ে রাত না হলে আসতে চাইত না। কারণ তাদের কাছে বড় জানোয়ার ছিলাম আমরা।
বাড়িতে নতুন জামাই আসছে, তার ইচ্ছা কই মাছ ভাজা খাবে এবং নিজেই মাছ ভাজবে। গতকাল তার শখ হয়েছিল গৃহপালিত ছাগল ছানা মানে কচি মাংশ খাবে। কি আর করা, শ্বশুর মশাই আবদার পূরণ করেছিল। তবে ছোট ছেলেটা তার আদরের ছাগল ছানার জন্য খুব কেঁদেছিল। তাই নতুন জামাই ছোট শ্যালককে মেলা থেকে ডুগডুগি কিনে দিয়েছে। নতুন জামাই, সে আবার মরা কই খাবে না, তাই গরম তেলে মসলা মাখা তাজা কই নিজেই ভাজতে লাগল। গরম তেলে কই মাছের লাঠালাফি দেখতে কি মজা! হ্যাঁ, কচি ছাগলের মাংস, আর গরম তেলে ভাজা কৈ আমিও খেয়েছি। কি যে স্বাদ! আহ! মানুষ তো, কি বলেন?
কয়দিন ধরে রাতে ঘরে তেলাপোকা ইঁদুরের উপদ্রব বেড়ে গেল। মশা তো পারলে সবাইকে উড়িয়ে নিয়ে যায়। নেবে না কেন? সাপ- ব্যাঙ তো প্রায় সবই মেরে ফেলেছি, ঘর পরিষ্কার করতে গিয়ে টিকটিকির সব ডিম নষ্ট করে ফেলেছি। বিরান জলমগ্ন মাঠে মশাসহ যে পোকামাকড় ছিল সব তো বাড়িতে চলে আসবেই।
ইঁদুরের গর্ত পানিতে ডুবে গেছে, বাচ্চাসহ কিছু ইঁদুর আশে পাশের জঙ্গলে গেছে, বাকিরা সব এই বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। বাঘডাসা, শিয়ালগুলো দূরে কোথাও গেছে, রাতে হয়তো লোকালয়ে আসবে, এখন মাছ, মুরগীর সাথে তারা ইঁদু্রও খেতে পারবে। ইঁদুর রাতের বেলা জামা-কাপড় কাটে; রান্না তরকারী খেয়ে ফেলে; কলা, আলু সব খুটে খুটে খায়, সেই সাথে তেলাপোকা বিভিন্ন ময়লা খেয়ে, পায়ে মুখে মেখে ঘরের সব খাবার ছুয়ে যাচ্ছে, খাচ্ছে। বর্ষার কারণে ঘরের সব জায়গায় তেলাপোকা, পিঁপড়ে সহ নানান পোকা-মাকড়। ইঁদুর, তেলাপোকাসহ পোকামাকড়ের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে গৃহকর্তা পরদিন ইঁদুরের বিষ , তেলাপোকার ও পোকামাকড়ের বিষ, সেই সাথে ইঁদুরের ফাঁদকলও বাজার থেকে কিনে নিয়ে আসছে। রাতে ইঁদুর, তেলা পোকার বিষ রান্নাঘর সহ আরো কিছু জায়গায় ছিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। সকাল বেলা গৃহকর্তার দুই বছরের নাতি ঘুম থেকে উঠে দেখে মা নাই, তাই হামাগুড়ি দিয়ে, টিনের বেড়া, দরজা ধরে হাঁটি হাঁটি পা পা করে রান্না ঘরে চলে যায়। সে জানে, মা-নানী রান্না ঘরেই থাকে। তারা তখন সবাই প্রতিবেশির বাসায় গেছে বাঘডাসার ছানা দেখতে। গতরাতে প্রতিবেশির বড় ছেলে নাকি বাঘডাসার ছানা ধরেছে। বাঘডাসা সেই রাত থেকে আউৎ আউৎ করে ডেকে চলেছে, সকালে আর ডাকেনি, কেউ বলছে একটু আগে বাঘডাসা পাটাতনের নিচে ছিল, কুকুরের চিৎকারে পালিয়েছে। এদিকে আপনাদের ঘরের বাচ্চা প্রতিদিন রান্নাঘরে মা আর দাদীর হাতে অনেক কিছু খায়, আজও চিনি ভাত দেওয়া মজাদার খারাপ খাচ্ছে। তারপর হাসপাতাল, না, মরে যায়নি। বাড়ি ফিরে শুনে ছোট ছেলে ইঁদুরের ফাঁদকল নিয়ে খেলতে গিয়ে হাত কেটে রক্ত বের হচ্ছে।
আপনি কয়লা দিয়ে কবে দাঁত মেজেছেন? বল সাবান, ৫৭০ সাবান কিংবা লাইফবয় সাবান দিয়ে কবে চুল ধুয়েছেন? মুখে তিব্বত স্নো, ট্যালকম পাউডার কবে মেখেছেন? মাথার চুলে কবে খাঁটি সর্ষের তেল দিয়েছেন? কলমের খাপ দিয়ে কবে কান চুলকাইছেন? টিউবওয়েলের তলায় বসে কবে গোসল করেছেন, আর গোসল শেষে উঠতে গিয়ে টিউবওয়েলের লোহার হাতলে কতবার মাথায় বাড়ি খেয়েছেন? মনে করতে পারছেন?. স্পঞ্জের স্যান্ডেলের ফিতা ল্যাম্পের আলোয় গলিয়ে জোড়া দেওয়া; টিনের চালে ঝুম বৃষ্টি পড়ার শব্দ; মুচির কাছে ফুটবল নিয়ে গিয়ে ব্লাডারের লিক সারানো; জাম্বুরা দিয়ে ফুটবল খেলা; হারিকেন দিয়ে পড়ালেখা; হ্যাজাক লাইটের আলোয় বিয়ের, যাত্রাপালা, কির্ত্তন অনুষ্ঠান; কলা গাছ দিয়ে বিয়ের গেইট সাজানো; বর্ষায় শালুক তোলা ; কুতকুত, সাতচারা, লাটিম, মার্বেল, পুতুল বিয়ে, গোল্লাছুট--- এসব মনে পড়ে কখনো? আমরা কি এসব থেকে দূরে সরে গেছি, নাকি আমরাই এসব স্মৃতিকে দূরে সরিয়ে দিয়েছি? এসব আর ফিরে পাবো না জানি, পরবর্তী উত্তর পুরুষেরা যাতে এসব দেখতে না পায়, সেই ব্যবস্থাও পাকাপোক্তভাবে করে রেখেছি। কি বলবেন? আপনার শৈশব অনেক আনন্দের ছিল? আপনি সেই স্মৃতি নিয়ে ভাবেন, কাঁদেন? আপনার কোন দোষ নেই? আছে ভাই, আইনস্টাইনের সেই কথা মনে আছে? ‘এই পৃথিবী খারাপ মানুষের জন্য ধ্বংশ হবে না, হবে সেই মানুষদের জন্য যারা প্রকৃতির উপর এসব অন্যায় অত্যাচার দেখেও খারাপ মানুষের বিরুদ্ধে কোন প্রতিবাদ করে না।’
মোবাইল নেটওয়ার্ক বেশী পাওয়ার জন্য লিমিটের চেয়ে বেশী নেটওয়ার্ক টাওয়ার বসালে পাখির ক্ষতি হয়। পাখি ফসলের ক্ষতিকারক কীট পতঙ্গ খায়। পাখি কমে গেলে সেই কাজ ব্যাহত হয়, গাছ-ফসলের ক্ষতি হয়। তখন ফল, ফসলে বেশী কীটনাশক, কেমিক্যাল দিতে হয়, খাবারও বিষাক্ত হয়ে যায়। আপনার, আমার গ্রামের তিন-চার তলা বাড়িতে কতগুলো নেটওয়ার্ক টাওয়ার বসানো আছে?
আপনাদের গ্রামে কয়টা বটগাছ, পাকুর গাছ, তালগাছ, গাবগাছ, খেজুর গাছ ছিল, মনে আছে? ছোট বেলায় যা দেখেছি বড় বেলায় তার চেয়েও কম, তাই না? হিন্দুরা বটগাছটাকে ধর্মীয় কারণে গুরুত্ব বেশি দেয়, তাই হিন্দু গ্রামে বা পাড়ায় এক বা একাধিক বটগাছ দেখা যায়, বটগাছের জন্মই হয় পুরনো দালানে বা ভাঙ্গা মন্দিরকে আশ্রয় করে। শুধু ছায়া দেয়, ফল খাওয়ার যোগ্য নয় বলে, এই কারণে কেউ বটগাছ রাখতে চায় না, তারপর ভূতের বিষয়তো আছেই। বটফল খেয়ে হাজার হাজার ছোট বড় প্রাণি বেঁচে থাকে। তারপর আশ্রয়ের জন্য, বিশ্রামের জন্য অগণন পোকামাকড় নির্ভরশীল--তা কয়জন জানে? একটা প্রাচীন ফলবান বট গাছে প্রায় এক হাজার হরিয়াল জাতীয় পাখি বাঁচতে পারে; এছাড়া কোকিল, বসন্ত বৌরিসহ নানান ফলখেকো পাখিরা তো আছেই, আছে নানা ক্ষুদে স্তন্যপায়ী প্রাণিরা। আরো আছে হাজার জাতের পোকামাকড়, যাদের জীবন পুরোপুরি এই গাছের উপরেই নির্ভরশীল। একটা বটগাছকে কেন্দ্র করে বিশাল এক ইকো সিস্টেম গড়ে ওঠে। সেই পাখি তথা প্রাণিরাই আবার বটের বীজ ফলের মাধ্যমে দূরদূরান্তে নিয়ে গাছের বংশবিস্তারে সাহায্য করে। একটা গ্রামে বট, পাকুড়, পলাশ, শিমুল, মান্দার, কদম, ঢাকি জাম, তাল, পেয়ারা, ডুমুর, বহেরা, লটকন, আমলকী, হরিতকী, হিজল, করচ, কামরাঙা, ছাতিম, কাঠবাদাম, সজনে গাছগুলো থাকলে সেই গ্রাম পাখির জন্য আদর্শ গ্রাম।
পথতরু হিসাবে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছাতিম, কাঠবাদাম, কুর্চি চারা লাগানো। প্রথমতঃ এগুলো দেশি গাছ, দ্বিতীয়তঃ এগুলো বেশ তাড়াতাড়ি বড় হয় আর পাতা ছাতার মত চারিদিকে ছড়িয়ে থাকে বলে ছায়াও পাওয়া যায়। যেখানে জায়গা কম, সেখানে স্লিপিং দেবদারু লাগানো যেতে পারে। আর যেখানে কিছুটা বেশি জায়গা আছে, সেখানে অবশ্যই বটগাছ লাগানো উচিত।
গরমকালে সবাই গরম নিয়ে চিন্তিত থাকে, আর আবহাওয়া বার্তায় শুনতে চায়, কবে বৃষ্টি হবে ? কিন্তু গরম কেন, বৃষ্টি কেন হচ্ছে না, তার কয়েকটা কারণ জেনেও জানে না। লোভ-লালসা আর আর্থিক কারণে অনেক বছর যাবত দেশে এবং পুরো বিশ্বে অনেক গাছ কাটা হচ্ছে। কিন্তু নিয়মিত ভাবে গাছের চারা লাগানো হচ্ছে না, লাগালেও যত্ন নেওয়া হচ্ছে না, চারা মরে যাচ্ছে । অক্সিজেন কমছে, কার্বন-ডাই-অক্সাইড বাড়ছে। গাছ কম, তাই কার্বন ডাই-অক্সাইড বেশী, অতিরিক্ত কলকারখানার, যানবাহনের ধোঁয়ার মধ্যে থাকা কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন গ্যাসের জন্য গ্রিন হাউজ এফেক্ট বাড়ছে, তাপমাত্রাও বাড়ছে। ডোবা, পুকুর, খাল, নদীর আয়তন কমছে কারণ সেগুলো ভরাট করে বিল্ডিং বানানো হচ্ছে, তাপ শোষণ করার পর্যাপ্ত পানি আজকাল কোন গ্রামেই পাবেন না। পানি কমলে, বৃষ্টি কমবে, গরম বাড়বে। ইকোসিস্টেম নষ্ট হলে, গরম বাড়লে বিভিন্ন রোগ বাড়ারও আশংকা থাকে। শুধুমাত্র কাগজের টাকার কারণেই পৃথিবীর ইকোসিস্টেম শেষ করে দিচ্ছে সবাই।
আমাদের বুঝতে হবে, মশা থাকবেই, তাই ব্যাঙ-টিকটিকি-মাকড়শাদেরও থাকতে হবে। ইঁদুরের বংশবৃদ্ধি অত্যাধিক, ইঁদুর থাকবেই, তাই সাপদেরও থাকতে হবে। গাছ-পালার ফুলের পরাগায়নের জন্য পোকা-মাকড় থাকতেই হবে, সেই পোকা-মাকড় যাতে অত্যাধিক বেশ না হয়, সে জন্য গাছে পাখিদেরও থাকতে হবে। পাখিরা ফল-বীজ খেয়ে মল ত্যাগ করে বৃক্ষের বংশবৃদ্ধি করে।
সুস্থ পরিবেশ মানুষের জীবনী শক্তির প্রধান উৎস। সবুজ নির্মল পরিবেশের ওপরই নির্ভর করছে আমাদের অস্তিত্ব। পরিবেশ প্রতিকূল হলে আমাদের সর্বনাশ অবশ্যম্ভাবী। তাই প্রকৃতির উপর আধিপত্য বিস্তার না করে বন্ধুত্বপূর্ণ সহাবস্থানের মাধ্যমে মানুষকে প্রকৃতির ধর্ম রক্ষা করতে হবে। ঝড়-জলোচ্ছ্বাস-বন্যা-উষ্ণতা বৃদ্ধি-করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সহ নানান রোগ-বালাই দিয়ে প্রকৃতি আমাদেরকে পরোক্ষভাবে শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে যে, আমরাই পৃথিবীর সব কিছু নই। মানুষকে বেঁচে থাকতে হলে প্রকৃতিকে আগে বাঁচতে হবে। পরিবেশ, আবহাওয়া জলবায়ু ঠিক রাখা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। তাই আসুন, প্রকৃতির অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে, প্রকৃতির উপর আধিপত্য নয়, প্রকৃতিকে ধ্বংশ নয় বরং প্রকৃতিকে সাথে নিয়ে বেঁচে থাকি।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত