চ্যাম্পিয়ন মাহজাবীনের সঙ্গে ছিল বাংলাদেশের তিনটি পতাকা
প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২২, ১৫:৪৬ | আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১৩
৬ আগস্ট ২০২২। যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলনায়তনে তখন ‘টিনইগল’–এর চূড়ান্ত পর্বের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হচ্ছে। একে একে সম্মানজনক পদক, ব্রোঞ্জপদক, রৌপ্যপদক ও স্বর্ণপদকজয়ীদের নাম ঘোষণা হলো।
একসময় এই আন্তর্জাতিক ইংলিশ প্রতিযোগিতার পুরো আয়োজনটির ‘সেরা তিন’জনের নাম ঘোষণা করা শুরু হলো। তৃতীয় সেরা, দ্বিতীয় সেরার পর চ্যাম্পিয়ন হিসেবে শোনা গেল মাহজাবীনের নাম। ঢাকার স্কলাস্টিকা স্কুলের এ ছাত্রীর তখনো বিশ্বাস হচ্ছিল না, সত্যিই মঞ্চে তাকে ডাকা হচ্ছে।
মিলনায়তনের ওপরের সারিতে ততক্ষণে মাহজাবীনের মা শাম্মি আখতার ও বাবা নিসার খান ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ বলে চিৎকার শুরু করেছেন। ওড়াচ্ছেন বাংলাদেশের পতাকা। বাবার চোখে পানি। যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ইংল্যান্ডসহ ৪৪টি দেশের ৫০০ প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে ‘টিনইগল’ প্রতিযোগিতার ২০২২ আসরে চ্যাম্পিয়নের ট্রফি জিতে নিয়েছে মাহজাবীন।
প্রতিবছর লন্ডনে বসে আন্তর্জাতিক ইংরেজি প্রতিযোগিতা টিনইগলের চূড়ান্ত আসর। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নেয়। কুইজ, ইংরেজিতে লেখালেখি, বানান ও বক্তৃতা—চার বিভাগে দেখাতে হয় দক্ষতা।
তবে লন্ডনের চূড়ান্ত পর্বে অংশ নিতে হলে আগে পার হতে হয় প্রাথমিক পর্ব। পর্বটির নাম ‘টিনইগল অনলাইন’। সারা পৃথিবী থেকে অনলাইনে এই পর্বে অংশ নেয় অনেক শিক্ষার্থী। অনলাইন প্রতিযোগিতায় শিশুকিশোর উপযোগী একটি বই ও একটি চলচ্চিত্র নির্ধারিত থাকে। নির্ধারিত বই ও চলচ্চিত্র থেকে ৫০টি বহুনির্বাচনী প্রশ্নের উত্তর দিতে হয় এক ঘণ্টায়। চূড়ান্ত পর্বে পৌঁছাতে ৮০ শতাংশ নম্বর প্রয়োজন। গ্লোবাল ফাইনালসে চার দিন চার বিষয়ে এক ঘণ্টা করে পরীক্ষা হয়।
স্কলাস্টিকা স্কুলের স্ট্যান্ডার্ড নাইনের শিক্ষার্থী নাহিয়ান মাহজাবীন ‘টিনইগল’ প্রতিযোগিতার খোঁজ পায় স্কুল থেকেই। প্রতিযোগিতার জন্য নির্ধারিত বইটি তার আগেই পড়া ছিল। তাই বেশ আগ্রহ নিয়েই সে অনলাইনে প্রাথমিক পর্বে অংশ নেয়। চূড়ান্ত পর্বে পৌঁছাতে প্রয়োজন ছিল ৮০ শতাংশ নম্বর। প্রাথমিক পর্বে ৯০ শতাংশেরও বেশি নম্বর পায় মাহজাবীন, জিতে নেয় স্বর্ণপদক। বাংলাদেশ থেকে মাহজাবীনসহ ছয় শিক্ষার্থীর কাছে আমন্ত্রণ আসে চূড়ান্ত পর্বের, যার নাম ‘গ্লোবাল ফাইনালস’।
স্কুলের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হতেই চূড়ান্ত পর্বের প্রস্তুতি নেয় মাহজাবীন। পুরো ছুটিটা সে পড়াশোনা করে কাটিয়ে দেয়। অন্তত একটি পদক জিততেই হবে—এই ছিল তার লক্ষ্য। ধীরে ধীরে ‘গ্লোবাল ফাইনালস’-এর দিনক্ষণ এগিয়ে আসে। প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে ৩০ জুলাই পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাজ্যে রওনা হয় মাহজাবীন। মা-বাবা সঙ্গে গেলেও, বিমানবন্দর থেকেই মাহজাবীনকে আলাদা হয়ে যেতে হয়েছিল।
দেশ ছাড়ার আগে থেকেই বেশ আত্মবিশ্বাসী ছিল মাহজাবীন। আন্তর্জাতিক এই মঞ্চে একবার হলেও সে বাংলাদেশের পতাকা ওড়াতে চেয়েছিল। তাই ছোট, বড় ও মাঝারি—তিন সাইজের পতাকা সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিল। বড় পতাকা গায়ে জড়িয়ে চ্যাম্পিয়নের পুরস্কার হাতে নেওয়ার ইচ্ছাটা ছিল প্রথম থেকেই। সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।
তাছাড়া বাংলাদেশ থেকে ‘টিনইগল’ প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে অংশ নেওয়া অন্য প্রতিযোগীদের মধ্যে স্কলাস্টিকা স্কুলের শিক্ষার্থী প্রজ্ঞা সাহা স্বর্ণপদক জিতেছে। ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুলের রাফিদ জলিল জিতেছে রৌপ্যপদক। আর একই স্কুলের শিক্ষার্থী আল আকসা তানজিম খান, আফছিন হোসেন ও আরেফিন জয় মাদুরজা পেয়েছে সম্মানজনক পদক।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত