চলতি বিশ্বকাপে উজ্জ্বল শুধু মাহমুদউল্লাহ
প্রকাশ: ৪ নভেম্বর ২০২৩, ১০:৫৬ | আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮:৩৩
ভারতের মাটিতে বড় স্বপ্ন নিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে যায় বাংলাদেশ দল। নিজেদের প্রথম ম্যাচে ধর্মশালায় আফগানিস্তানকে ৬ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়ে স্বপ্নটা আরো বড় করে দেখতে থাকেন টাইগাররা। তবে এরপরই যেন নিজেদের হারিয়ে খুঁজতে থাকে বাংলাদেশ দল। এরপর আরো ছয়টি ম্যাচ খেলেন সাকিবরা, তবে আর জয়ের দেখা পাননি তারা। উলটো প্রতি ম্যাচেই হেরেছে বড় ব্যবধানে। সেসব হারের কারণ হিসেবে দেখা হয় ব্যাটারদের ব্যাটিং ব্যর্থতাকে। প্রতি ম্যাচে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে বাংলার ব্যাটিং লাইনআপ। লিটন, তামিম, শান্ত থেকে শুরু করে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান সবাই প্রতিপক্ষের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করেন। শুধু ব্যাতিক্রম ছিলেন একমাত্র মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। হিমালয় পর্বত্যের মতো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে প্রতিপক্ষের চোখে চোখ রেখে লড়ে গেছেন প্রতিটি ম্যাচে।
চলতি বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ছয় ম্যাচ খেলে পাঁচ ম্যাচে ব্যাটিং করেছেন তিনি। এর মধ্যে এক সেঞ্চুরি এবং একটি হাফ সেঞ্চুরিতে করেন ২৭৪ রান। যা চলতি বিশ্বকাপে বাংলাদেশী ব্যাটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ রান। দ্বিতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেন অপরাজিত ৪১ রানের ইংনিস। এরপর তৃতীয় ম্যাচে স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে করেন ৪৬ রান। চতুর্থ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা দেওয়া ৩৮২ রানের পাহাড় সমান লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৫৮ রানে যখন ৫ উইকেট হারিয়ে দল বিপর্যয়ের মুখে তখন দলের ঢাল হয়ে উইকেটে দাঁড়িয়ে থাকেন রিদায়। সেই সঙ্গে তুলে নেন বিশ্বকাপে নিজের তৃতীয় শতক। খেলেন ১১১ রানের এই হার না মানা ইনিংস। এর আগে ২০১৫ বিশ্বকাপে টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করেন তিনি। এবং চলতি বিশ্বকাপে নিজেদের সর্বশেষ ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলেন ৫৬ রানের ইনিংস।
অথচ বিশ্বকাপের আগে বিশ্রামের নাম করে দল থেকে বাদ দেওয়ার হয় এই দলের এই অভিজ্ঞ ব্যাটারকে। যদিও তিনি কিছুটা অফ ফর্মে ছিলেন। তবে সুযোগ না দিয়ে বয়সের অজুহাত দেখিয়ে তাকে বিশ্বকাপ দলের না রাখার পরিকল্পনা করা হয়। তখন অনেকেই তার ক্যারিয়ারের সমাপ্তি দেখে ফেলেছিলেন। বিশ্বকাপের আগে ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজেও ছিলেন না তিনি। কিন্তু আশা হারায়নি ৩৭ বছর বয়সি এই সাইলেন্ট কিলার। এরপর বিশ্বকাপের আগ মুহূর্তে ঘরে মাঠে নিউজিল্যান্ড সিরিজ দিয়ে মাঠে ফিরেন তিনি। র্দীঘদিন পর মাঠে ফিরেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে করেন ৪৯ রান। সেই ৪৯ রানের ইনিংস খেলার মধ্যে দিয়ে জানান দেয় ফুরিয়ে যাননি তিনি। এরপর নিউজিল্যান্ডেরন বিপক্ষে তৃতীয় ম্যাচে করে ২১ রান। এরপর নানান কল্পনা-জল্পনা শেষে ফিরেন বিশ্বকাপ দলে। বিশ্বকাপের প্রতিটা ম্যাচেই নিজেকে উজাড় করে দিচ্ছেন তিনি। ভারতে গোটা দল যখন অফ ফর্মে তাদের মধ্যে এক মাত্র ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে রিয়াদকেই। যাদের পরিবর্তে মাহমুদউল্লাহকে দলের বাইরে রাখা হয়েছিল তাদের ছাপিয়ে এভাবে ফিরে আসাটা চমকের থেকে কোনো অংশে কম নয়।
বাংলাদেশের জার্সি গায়ে ২০০৭ সালের ২৫ জুলাই কলম্বোয় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অভিষেক হয় মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের। অভিষেকেই জানান দেন তার দক্ষতার। প্রথম ম্যাচেই নিজের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে মুগ্ধ করেন সবাইকে। ৫ ওভার বোলিং করে ২৮ রানের শিকার করেন ২ উইকেট, আর ব্যাট হাতে করেন ৫৪ বলের বিনিময়ে করেন ৩৬ রান। এরপর আর ঘুরে তাকাতে হয়নি তাকে। বিভিন্ন সময় দলের প্রয়োজনে ব্যাট হাতে লড়তে দেখা গিয়েছে তাকে, শেষ দিকে আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে জিতেয়েছে অনেক ম্যাচও। এছাড়া বিশ্বকাপে টানা ১৭ ম্যাচে ন্যূনতম ২০ রান করেছেন তিনি। এই তালিকায় তার পরে আছে ক্রিকেট বিশ্বের কিংবদন্তি সব নাম। বিশ্বকাপে টানা ১৩ ম্যাচে ন্যূনতম ২০ রান করে তালিকায় দুইয়ে আছেন অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি ম্যাথু হেইডেন, তিনে দক্ষিণ আফ্রিকার এবি ডি ভিলিয়ার্স (টানা ১২ ম্যাচ)। তাদের পরে আছেন লংকান কিংবদন্তি অর্জুনা রানাতুঙ্গা ও অজি গ্রেট রিকি পন্টিং। দুজনই টানা ১১ ম্যাচে করেছেন ন্যূনতম ২০ রান।
ই
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত