ঘুরে দাঁড়ান একবার
অপর্ণা খান
প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২১, ১৮:৩১ | আপডেট : ৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৪০
অনেক দিন কিছু লেখা হয় না। ২০২০ সাল ২৮শে আগস্ট এর পর থেকে একটা তীব্র শূন্যতা। মন খারাপ করা প্রতিটি দিন। আর সেই মন খারাপ এর দিন গুলি নানা ভাবে ভুলে থাকার চেষ্টা।
ভুলে থাকতে গিয়ে কখনো ভার্চুয়াল প্রোগ্রাম করেছি কখনো লেখালেখি কখনো ঘুরে বেড়ানো কখনও আড্ডা দিয়েছি ।অনুভব করেছি সকল কিছুর মধ্যে এই ঘুরে বেড়ানোটাই আমাকে বেশী আনন্দ দিয়েছে। আস্তে আস্তে সব ছেড়ে দিয়ে শুধু ঘুরে বেড়ানোটাই জীবনের সাথে বেঁধে নিলাম।
দীর্ঘদিন থেকে ফেসবুকেও কোনো আনন্দ খুঁজে পাই না। এর আগ্রহ অনেকটা শূন্যের কোটায়। বন্ধু সংখ্যা কমিয়ে ৫০০০ থেকে ৩৫০০ করেছি আরো কমিয়ে ১০০০করার ইচ্ছে অথবা শুধু পরিচিতজন।
প্রতিদিন কোনো না কোনো কারনে কষ্ট পাই। আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব কারো না কারো কষ্টের কথা শুনে বা কষ্ট পেতে দেখে।
আজ কদিন থেকে ভীষণ মন খারাপ। মনের কী দোষ?? চোখের সামনে এইসব সাম্প্রদায়িক হামলা দিনের পর দিন দেখতে পাওয়া আর কতকাল?? দেশ এগিয়ে যাচ্ছে তার সাথে সাথে এগুচ্ছে সাম্প্রদায়িক হামলা।
প্রতিবছর পূজার সময় কোনো না কোনো জায়গায় মন্দির ভাঙ্গা প্রতিমা ভাঙ্গার উৎসবে মেতে উঠা অমানুষ গুলো বিনা বিচারে পার পেয়ে গিয়ে নতুন উদ্যোগে পরের বছর আবার সেই খেলায় মেতে উঠে।এ খেলা নতুন নয়।
বারো বছর ক্ষমতায় থেকেও এই ষড়যন্ত্র কারীদের আপনারা চিহ্নিত করতে পারলেন না?? এদের কারো কোনো বিচার হয়েছে বলে আমার জানা নেই। হিন্দু সম্পত্তি দখল করাই তাদের উদ্দেশ্য। সেই ৭১ থেকে এই খেলা তারা খেলে আসছে।কোটি কোটি টাকার সম্পদ ফেলে রেখে রাতের আঁধারে বর্ডার পার হয়ে ভারত গিয়ে জীবন বাঁচিয়েছে এ দেশের লাখো হিন্দুরা।
আজকে যাদের আমরা সংখ্যা লঘু বলি তারা একসময় ৩৩ পার্সেন্ট ছিল। আজকে সেটা এসে দাঁড়িয়েছে আট পার্সেন্টে। এরপরেও আমরা সেকুলার বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি। আর কত হিন্দু সম্পত্তি লুঠপাট করে বা হিন্দুদের জ্বালাও পোড়াও করে ধর্ষণ করে হত্যা করে আপনারা ক্ষান্ত হবেন ??
প্রিয়া সাহা ২০১৮ সালে ট্রাম্পের কাছে যে বলেছিলেন বাংলাদেশে সংখালঘু নির্যাতন চলছে খুব কি বেশী কিছু ভুল বলেছিলেন?? এটি নতুন কোনো ঘটনা না। এটি শুরু হয়েছে বহু আগে।
আর কোনো কথার ফুল ঝুড়ি শুনতে চাই না। আমাদের মিডিয়া গুলো, কে হাগু দিলো কে মুতু করলো তার লাইভ দেখায় আর তিন ঘন্টা ধরে বিভিন্ন জায়গায় তান্ডব চললো তারা জানতেই পারলো না। নেট বন্ধ করে দেওয়া হলো। প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের ফোনে পাওয়া গেলো না।
হাস্যকর ও অসংলগ্ন বক্তব্য মিডিয়ার নীরব ভূমিকা সব মিলিয়ে একটা গভীর ষড়যন্ত্রে এ দেশ। আওয়ামী লীগের লোকজন কোথায় ছিল তখন।
আজ কদিন থেকে কিছু হুজুরের বয়ান শুনছি যে নামাজ এবং পূজা একসাথে চলবে। তারা এই সব বক্তব্য আগে দেন নাই কেন।
কোনোদিন তো শুনলাম না। বেগমগঞ্জ,, পীরগঞ্জ, চাপাইনবাব গঞ্জ, কুমিল্লার এ ঘটনা নতুন নয় একাত্তরে যা ঘটেনি তাই ঘটেছে এবার। রামু নাসিরনগরের ঘটনা আমরা ভুলিনি।
এমন ঘটনা এদেশে চলতেই থাকবে। ঘোষনা দিয়ে এসব পূজো বন্ধ করে মন্দির গুলোকে ভেঙে ফেলুন। ।স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর বক্তব্য শুনলে হাসি পায়।
স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও সত্যিকার অর্থে কোনো অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল নেই। সকলেই ধর্মীয় ফায়দা লুটে। হিন্দুদের বাধ্য করে জন্মভূমি ছাড়তে।
রাস্ট্রের কোনো ধর্ম নেই। ধর্ম যার যার রাস্ট্র সবার। এ দেশ আমাদের এ দেশের মুক্তিযুদ্ধে মুসলমানের রক্ত যেমন ঝরেছে তেমনি হিন্দুর রক্ত ঝরেছে। শুভ বুদ্ধিমান সকল মানুষ সকল ভেদাভেদকে পা'য়ে ঠেলে ঘুরে দাঁড়ান একবার। মরার আগেই মরবেন না। এ দেশ মানুষের, অসুরের নয়।
লেখক সংগীত শিল্পী ও সংগঠক।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত