গান গেয়ে যুবককে পিটিয়ে হত্যা:  অভিযুক্তরা গ্রেফতার

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৬:১৮ |  আপডেট  : ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৯

চোর সন্দেহে চট্টগ্রাম নগরীর আখতারুজ্জামান উড়াল সেতুর নিচে ২ নম্বর গেট মোড় এলাকায় দুটি খুঁটির সঙ্গে দুই হাত বেঁধে ‘মধু হই হই আরে বিষ হাওয়াইলা’ গানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নেচে-গেয়ে শাহাদাত হোসেন (২৪) নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়। মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) নগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, ভ্যানচালক শাহাদাত হোসেনকে পিটিয়ে নির্দয়ভাবে হত্যায় জড়িতরা ‘চট্টগ্রাম ছাত্র জনতা ট্রাফিক গ্রুপ’ নামে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের সক্রিয় সদস্য। অভিযানে ওই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপটির অ্যাডমিন এবং এ হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা ফরহাদ আহমেদ চৌধুরী জুয়েল (৪২), একই গ্রুপের সদস্য মো. সালমান [১৬] এবং আনিসুর রহমান ইফাতকে [১৯] গ্রেফতার করা হয়।’

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি [পিআর] কাজী মো. তারেক আজিজ এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘গত ১৩ আগস্ট রাত ১০টা থেকে ১৪ আগস্ট রাত দেড়টার মধ্যবর্তী সময়ে ২ নম্বর গেট ট্রাফিক পোস্টের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে বেধড়ক মারপিট করে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় ভিকটিম শাহাদাতকে।’

হত্যার পর গত ১৩ আগস্ট রাতের অন্ধকারে মৃত শাহাদাতকে পাঁচলাইশ থানাধীন বদনাশাহ মাজারসংলগ্ন রাস্তার সামনে অজ্ঞাত লোকজন ফেলে চলে যায়। পাঁচলাইশ থানা পুলিশ ১৪ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় লাশটি উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পাঁচলাইশ থানা পুলিশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করে।

পুলিশ জানিয়েছে, বর্বরোচিত ও নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ফুটেজ গত ২১ আগস্ট থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত হলে তা ভাইরাল হয়। ওই ভিডিওর সূত্র ধরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ‘চট্টগ্রাম ছাত্র জনতা ট্রাফিক গ্রুপ’ নামে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ শনাক্ত করা হয়। সেই সূত্র ধরে গ্রুপটির অ্যাডমিন এবং এ হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা ফরহাদ আহমেদ চৌধুরী জুয়েলকে (৪২) পাঁচলাইশ থানা পুলিশ ২৪ সেপ্টেম্বর বিকাল ৫টায় ২নং গেট সংলগ্ন বিপ্লব উদ্যান এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ‘চট্টগ্রাম ছাত্র জনতা ট্রাফিক গ্রুপ’-এর সদস্য এবং হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণকারী এবং শাহাদাতের গাল চেপে ধরে ব্যঙ্গাত্মকভাবে ‘এ ভাইয়া সবাই একটা একটা সেলফি তুলে চলে যান’ বলা সালমানকে (১৬) সিএমপি চকবাজার থানাধীন শিল্পকলা একাডেমির সামনে থেকে একই দিন সন্ধ্যায় গ্রেফতার করা হয়।

ফরহাদ আহমেদ চৌধুরী জুয়েল ও সালমান উভয়ের দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে চট্টগ্রাম ছাত্র জনতা ট্রাফিক গ্রুপের সক্রিয় সদস্য এবং হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অপরাধে একই দিন রাত ৯টায় ২নং গেট সংলগ্ন মসজিদ গলি থেকে আনিসুর রহমান ইফাতকে (১৯) গ্রেফতার করা হয়।

নিহত শাহাদাত হোসেন নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী থানার পাঁচবাড়িয়া ইউনিয়নের নদনা গ্রামের মৃত মোহাম্মদ হারুনের ছেলে। দীর্ঘদিন ধরে স্ত্রী ও মাকে নিয়ে বিআরটিসি এলাকার বয়লার কলোনিতে থাকতেন তিনি।

এ ঘটনায় নিহতের চাচা হারুন ১৫ আগস্ট অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ১৩ আগস্ট বেলা ২টার দিকে কর্মস্থলের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন শাহাদাত। সন্ধ্যা ৭টার দিকে ফোন করলে কিছুক্ষণের মধ্যে বাসায় চলে আসবেন বলে স্ত্রীকে জানান। গভীর রাত পর্যন্ত বাসায় ফিরে না আসায় খোঁজাখুঁজি করেন স্ত্রী শারমিন। এ সময় শাহাদাতের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ১৪ আগস্ট রাত সাড়ে ৯টার দিকে ফেসবুকে বাদী হারুন দেখতে পান, নগরের প্রবর্তক মোড়ের অদূরে সিএসসিআর হাসপাতালের সামনের সড়কের পাশে ভাতিজা শাহাদাতের লাশ পড়ে আছে।

এর আগে রাত ৯টার দিকে খবর পেয়ে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মাহাদাতকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (চমেক) জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। ওইদিন রাতেই চমেক হাসপাতালে গিয়ে পুলিশের উপস্থিতিতে শাহাদাতের লাশ শনাক্ত করেন স্ত্রী শারমীন এবং মামলার বাদী হারুন। সেদিন রাতে মৃত অবস্থায় শাহাদাতকে হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন বাদী।

কা/আ 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত