গনপরিবহন বন্ধে ভোগান্তি, গন্তব্যে যেতে অতিরিক্ত ভাড়ায় বিকল্প পরিবহন

  বাগেরহাট প্রতিনিধি 

প্রকাশ: ৫ এপ্রিল ২০২১, ১৯:০৮ |  আপডেট  : ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:০৬

করোনা সংক্রমন প্রতিরোধে সারাদেশে গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে।এর মাঝেও প্রয়োজন-অপ্রয়োজনে বাইরে যেতে হচ্ছে মানুষকে। যেতে হচ্ছে এক যায়গা থেকে অন্য যায়গায়।যে যেভাবে পারছে তার গন্তব্যে পৌছানোর চেষ্টা করছেন। তবে ভোগান্তিতে পড়ছেন শ্রমিক, কর্মজীবী মানুষ ও হতদরিদ্র দিনমজুররা।

সোমবার (০৪ এপ্রিল)দুপুরে বাগেরহাট কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডে দেখা যায়, বাসগুলো সারিবদ্ধভাবে টার্মিনালের মধ্যে রাখা হয়েছে। কিন্তু রাস্তায় লোকজন রয়েছে। কেউ কেউ হেটে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। কেউ আবার ভ্যানযোগে যাচ্ছেন।কেউ কেউ অতিরিক্ত ভাড়ায় যাচ্ছেন বিকল্প পরিবহনে। কেউ কেউ নিরবে বসে স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছেন।হাল ছেড়ে বসে রয়েছেন আবার কেউ।

এদিকে লকডাউনে বাগেরহাটে শহরের বেশিরভাগ দোকান বন্ধ রয়েছে। বন্ধ দোকানের সামনে অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে স্থানীয়দের। কেউ খবরের কাগজ পড়ছেন, কেউ বা দিচ্ছেন আড্ডা। তবে লকডাউনের প্রথম দিনে বেশিরভাগ মানুষ-ই মাস্ক পরিহিত ছিলেন। 

বাসস্ট্যান্ডের যাত্রী ছাউনিতে বসা রাজশাহী থেকে আসা রাজমিস্ত্রি আবদুল করিম ও আনারুল বলেন, ১৫ দিন পূর্বে বাগেরহাটের সাইনবোর্ড এলাকায় আসছিলাম রাজমিস্ত্রীর কাজ করতে। গতকাল (৪ মার্চ) কাজ শেষে ব্যাগ গুছিয়ে বাসস্ট্যান্ডের দিকে রওনা দি। ঝড়ের মধ্যে পড়ে বাগেরহাট বাসস্ট্যান্ডে পৌছাতে বেজে যায় রাত ১১টা। এসে দেখি কোন কোনো গাড়ি নেই, বিকল্প কোনো ব্যবস্থাও নেই। সারারাত এই যাত্রী ছাউনিতেই বসে ছিলাম। ভোর থেকেই অপেক্ষা করছি যদি কোনো ব্যবস্থা হয় বাড়ি ফেরার। এরপরেও রিক্সায়, ভ্যানে, মোটরসাইকেলে করে যাওয়ার চেষ্টা করলেও ভাড়া ৩ গুন হওয়ায় যেতে পারছি না, কি করবো।

শুধু এই দুই যুবক নয় গন্তব্যে পৌছাতে বিড়ম্বনায় পড়ছেন কর্মহীন অনেক মানুষ। বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করছেন যদি কোনো ব্যবস্থা হয় বাড়ি ফেরার। পটুয়াখালী থেকে আসা ৫জন বিদ্যুৎ শ্রমিক আটকে আছেন বাগেরহাট বাসস্ট্যান্ডে, গন্তব্যে যশোর ও খুলনা। তাদের মধ্যে থেকে রিপন, আকাশ জানান, আমরা পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে পোল নাম্বারিং এর কাজ করতাম। কাল রাতে কাজ শেষে আমাদের বাড়ি ফেরার কথা ছিলো। কিন্তু রাতে ঝড়-বৃষ্টি হওয়াতে ফিরতে পারিনি। ভোরে উঠে বিভিন্ন যানবাহনে করে বাগেরহাট বাসস্ট্যান্ডের পৌছাই। কিন্তু এখন আর কোনো পথ পাচ্ছি না যাওয়ার।

কচুয়া উপজেলার নজিবুল হক বলেন, খুলনা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে আমার বোন ভর্তি। সকালে বের হয়ে অনেক কষ্টে বাসস্ট্যান্ডে এসেছি। কিন্তু কোন পরিবহন নেই। কিভাবে যাব, পন্যবহনকারী ট্রাক ও পিকআপেও চেষ্টা করেছি। কিন্তু ব্যবস্থা হচ্ছে না।আসলে বিপদ আপদে যারা যাবে তাদের জন্য বিকল্প পরিবহনের ব্যবস্থার দাবি জানান তারা।

বাগেরহাট থেকে মোটরসাইকেলে মোরেলগঞ্জ গামী বৃদ্ধ জব্বার আলী বলেন, সাধারণত দেড়শ থেকে ২‘শ টাকায় বাগেরহাট স্টান্ড থেকে মোটরসাইকের যোগে মোরেলগঞ্জে যাই। কিন্তু আজকে লকডাউনের কারণে মোটরসাইকেলের চাহিদা বেড়েছে। সাড়ে ৪‘শ টাকা ভাড়া দিয়ে যাচ্ছি মোরেলগঞ্জে।

মিলন, আলমগীর, কুদ্দুসসহ বাগেরহাট শহরের কয়েকজন রিক্সাচালক বলেন, লকডাউনের কারনে ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত তেমন কোনো আয়-রোজগার করতে পারিনি। একদিকে কিস্তির টাকা পরিশোধের চিন্তা অন্যদিকে সংসারের খরচ। এই নিয়েই আছি মহা সমস্যায়।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক আ ন ম ফয়জুল হক বলেন, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে লকডাউনে সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমরা কাজ করছি। কর্মহীন খেটে খাওয়া মানুষের যাতে কষ্ট না হয় সে বিষয়টিকে সামনে রেখে খুব দ্রুতই আমরা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে সকল মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সচেতন থাকার আহবান জানান তিনি। 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত