গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে ভারত আমাদের পাশে ছিল: দিল্লিতে হাছান মাহমুদ
প্রকাশ: ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:১১ | আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৫৬
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, নির্বাচনবিরোধী দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে ভারত আমাদের পাশে ছিলো, পাশে আছে।তিনি বলেন, গত কয়েক দশকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। একে আরও এগিয়ে নিতে দুই দেশ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যাবে।
বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ভারতের নয়াদিল্লিতে বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের এক দশক’ শীর্ষক একক বক্তৃতায় মন্ত্রী এ কথা বলেন। ফাউন্ডেশনের পরিচালক ড. অরবিন্দ গুপ্তের পরিচালনায় ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. মুস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশে ভারতের পূর্বতন হাইকমিশনার ভিনা সিক্রি প্রমুখসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্কটি রক্তের বন্ধনের। অন্য যে কোনো দেশের সম্পর্কের সঙ্গে কখনোই বাংলাদেশের সম্পর্ককে এক করা যায় না। মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারত সরকারের অবদান বাংলাদেশ সব সময় কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করবে।
তিনি বলেন, প্রতি বছর প্রায় ১৭ লাখ বাংলাদেশি ভারতীয় ভিসার আবেদন করে। দিন দিন এই সংখ্যা বাড়ছে। এটি দুই দেশের পারস্পরিক সুসম্পর্কের পরিচয়ই বহন করে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে দু’দেশের সম্পর্কের সোনালী অধ্যায় চলছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, দুই দেশ বাণিজ্য প্রসার, সন্ত্রাসদমন, জনযোগাযোগ বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, শান্তি, নিরাপত্তাসহ গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে একযোগে কাজ করছে। দু’দেশের মানুষের সমৃদ্ধি ও উন্নয়নে এই সম্মিলিত প্রয়াস অব্যাহত থাকবে, বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বক্তৃতা শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দু’দেশের জনমানুষের সম্পর্ক, আন্তুর্জাতিক প্রেক্ষিত, রাজনীতি, বাণিজ্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে সেশনে উপস্থিত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, চিন্তাবিদ, সাংবাদিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবর্গের প্রশ্নের জবাব দেন।
এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ধর্ম নিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করে। মাঝে মাঝে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চায়, পারস্পরিক ভ্রাতৃত্বের সম্পর্কে চিড় ধরাতে চায়। সে সব অপচেষ্টাকে বর্তমান সরকার সবসময়ই প্রতিহত করে এসেছে।
এছাড়া সন্ধ্যায় দিল্লিতে 'ফরেন করেসপন্ডেন্টস ক্লাব অভ সাউথ এশিয়া’র সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র চর্চা হয়। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এবারও আমাদের দেশে নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচন আমাদের দেশে একটি উৎসব। ৭ জানুয়ারি আমাদের দেশে উৎসবের আমেজে নির্বাচন হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নির্বাচনের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি জানান, ২০২১ সালে পর্তুগালে নির্বাচনে ২৯ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট পড়ে। রোমানিয়ার নির্বাচনে ৩১ দশমিক ৮৪ শতাংশ এবং হংকংয়ের নির্বাচনে ৩০ শতাংশ ভোট পড়ে। এ দেশগুলোতে কোনো বিরোধী দল ছিল না।
হাছান মাহমুদ বলেন, নির্বাচনের পর বিভিন্ন দেশ আমাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছে। গতকাল পর্যন্ত ৫৭টি দেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং নির্বাচিত সরকারকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছে। জাতিসংঘসহ ২০টি আন্তর্জাতিক সংগঠন শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, ভারতের মতো বাংলাদেশেও উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন হয়। কিন্তু বরাবরই বিএনপি ও জামায়াত একে বাধাগ্রস্ত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত থাকে। তারা জনগণকে ভোটদানে নিরুৎসাহিত করে। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ সেসব অপচেষ্টা রুখে দেয়। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ।
সমাজ পরিবর্তনে সাংবাদিকরা ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সক্ষম এ কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সময়ে পৃথিবীজুড়ে সংবাদমাধ্যম বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভুল ও মিথ্যা তথ্য সম্পর্কে সাংবাদিকদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানান মন্ত্রী।
চীন বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী, কিন্তু বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক রক্তের বলে মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, অন্য যেকোনো দেশের সম্পর্কের সাথে কখনোই বাংলাদেশের সম্পর্ককে তুলনা করা যায় না। তবে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের অগ্রগতি বজায় রাখতে প্রতিবেশী সকল রাষ্ট্রের সঙ্গেই সদ্ভাব বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ই
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত