কোরিয়া বিভাজন ও দ্বন্দ্ব
প্রকাশ: ৩ জুন ২০২৪, ১৩:৪৮ | আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৪৩
এক সময় উত্তর বা দক্ষিণ কোরিয়া বলে কিছু ছিল না। সবাই মিলেমিশে একটি দেশেই থাকত। তবে বিভিন্ন যুদ্ধ ও ষড়যন্ত্রের কারণে কোরিয়া বিভক্ত হয় উত্তর ও দক্ষিণে। কোরিয়ান যুদ্ধ ছিল গণতান্ত্রিক গণপ্রজাতন্ত্রী কোরিয়া (উত্তর কোরিয়া নামেও পরিচিত) এবং কোরিয়া প্রজাতন্ত্রের (দক্ষিণ কোরিয়া নামেও পরিচিত) মধ্যে একটি দ্বন্দ্ব। ১৯৫০ থেকে ১৯৫৩ পর্যন্ত প্রসারিত এই দ্বন্দ্ব , একটি চির বিভক্ত কোরিয়া সহ কমপক্ষে ২.৫ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু ঘটায়।
১৪০০ খ্রিষ্টাব্দের মাঝামাঝি থেকে ১৯১০ সাল পর্যন্ত প্রায় ৬০০ বছর ধরে জসন সাম্রাজ্যের শাসনে কোরিয়া উপদ্বীপজুড়ে শান্তি বিরাজ করছিল। ১৯১০ সালে কোরীয় উপদ্বীপে জসন সাম্রাজ্যের ২৬তম রাজা গুজুং ছিলেন দায়িত্বে। তার শাসনামলের সময় কোরিয়া দখল করে নেয় জাপান। ওই সময়ের যুদ্ধবাজ জাপানিরা কোরিয়া দখল করেই ক্ষান্ত হয়নি। প্রায় ৩৫ বছর ধরে জাপানিরা কোরিয়ানদের ওপর বিভিন্নভাবে অত্যাচার করে যাচ্ছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে দুই পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়ে কোরিয়া থেকে জাপানকে উৎখাত করতে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ৩৮ তম সমান্তরালের উত্তরে সমস্ত কোরিয়ান ভূমি দখল করে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণে সমস্ত কোরিয়ান ভূমি দখল করে। কোরিয়ার দক্ষিণ দিক থেকে আক্রমণ করে মার্কিন সেনাবাহিনী এবং উত্তর দিক থেকে আক্রমণ করে সোভিয়েত কমিউনিস্ট-এর রেড আর্মি। ১৯৪৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের যৌথ বাহিনীর কাছে জাপানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। জাপানের আত্মসমপর্ণের পর যখন কোরিয়ানরা স্বপ্ন দেখছিল একটি সুন্দর স্বাধীন রাষ্ট্রের, তখন অপরদিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন আর যুক্তরাষ্ট্র মেতে উঠেছিল কোরিয়া দখলের খেলায়।
১৯৪৫ সালের আগস্টে কোরিয়াকে মুক্তকারী দুই দেশ কোরিয়াকে দুই ভাগে বিভক্ত করে ফেলে এবং নিজ নিজ শাসন প্রতিষ্ঠার কাজ চালায়। ৩৮ ডিগ্রি সীমারেখার উত্তর দিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন সেনাবাহিনী কমিউনিস্ট শাসন ব্যবস্থা চালু করে এবং দক্ষিণ দিকে আমেরিকার সামরিক সরকার গঠিত হয়। শ্রমিক এবং কৃষকদের কাছে সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট নীতি জনপ্রিয়তা লাভ করে।
১৯৪৮ সালে সোভিয়েত নেতা জোসেফ স্টালিন উত্তর অংশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কিম ইল-সাংককে নিয়োগ দেন। এবং দক্ষিণ অংশে কমিউনিস্টবিরোধী সিংম্যান-রি-এর নেতৃত্বে শক্তিশালী সরকার গঠন করে। ফলে উত্তর কোরিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় দুই সরকার থাকায় মতভেদ শুরু হতে থাকে।
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম ইল সুং পুরো কোরিয়া পুনরায় একীভূত করার চিন্তাভাবনা করতে থাকেন। ১৯৫০ সালে তিনি বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া দখল করার চেষ্টা করেন। এরপর দক্ষিণ কোরিয়া পাল্টা আক্রমণ করে বসে। এর মাধ্যমে শুরু হয় কোরিয়ার ইতিহাসে অন্যতম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ–কোরিয়া যুদ্ধ। দুই কোরিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়া। প্রায় তিন বছর ধরে কোরিয়া যুদ্ধ চলে। ১৯৫৩ সালে দুপক্ষের মাঝে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ৩৮ ডিগ্রি সীমারেখায় দুদেশের মাঝে তিন মাইলব্যাপী ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’ নির্ধারণ করা হয়। এর মাধ্যমে দুই কোরিয়ার সম্পর্কের চূড়ান্ত ইতি ঘটে। এর মাধ্যমে কোরিয়া বিভক্তির ষোলোকলা পূর্ণ হয়। এরপর ভৌগলিক নৈকট্য সত্ত্বেও, উত্তর এবং দক্ষিণ কোরিয়া কূটনৈতিক সম্পর্ক শুরু করেনি। এরপর থেকে কোরীয় উপদ্বীপ দুই ভাগে বিভক্ত।
জাপানের শাসন থেকে কোরিয়া মুক্তিই কোরিয়া বিভক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল, তবে কোরিয়া বিভাজন চূড়ান্ত হয়ে যায় মূলত কোরিয়া যুদ্ধের মাধ্যমে। দুই কোরিয়া সম্প্রীতি বজায় রাখতে অনেক সময় চেষ্টা করা হলেও তা এখনও সফলতার মুখ দেখেনি। দুই কোরিয়াকে এক করতে আমেরিকা এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের যৌথ প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয়ে যায়।
সময়ের পরিবর্তন হলেও দুই কোরিয়ার সংঘাতের শেষ এখনও হয়নি। সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ার বিভিন্ন অধিকারকর্মীরা বেলুনে করে উত্তর কোরিয়ায় সরকার বিরোধী লিফলেট, গান, নিষিদ্ধ খাবার এবং নগদ অর্থ পাঠালে উত্তর কোরিয়া প্রায় ৮৬০ টি ময়লাভর্তি বেলুন দক্ষিণ কোরিইয়ায় পাঠিয়ে প্রতিশোধ নেয়। বিস্তারিত> দ. কোরিয়ায় আবারও ময়লাভর্তি ৬০০ বেলুন পাঠাল উ. কোরিয়া
সা/ই
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত