কী অভিযোগে ব্যাংক হিসাব তলব, প্রশ্ন সাংবাদিকদের
প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৯:৪৪ | আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:২১
দেশের ছয়টি সাংবাদিক সংগঠনের ১১ জন নেতার ব্যাংক হিসাব তলবের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাংবাদিকরা। এটি সাংবাদিকদের রাষ্ট্রের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়ার গভীর ষড়যন্ত্র বলে মনে করছেন তারা।
এ অবস্থায় এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে চিঠি প্রত্যাহারের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি দাবি জানানো হয়েছে। অন্যথায় সাংবাদিক সংগঠনগুলো কঠোর থেকে কঠোরতম কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় দেশজুড়ে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে।
রোববার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে আয়োজিত এক সমাবেশ থেকে সাংবাদিক নেতারা এসব কথা বলেন। সাংবাদিক নেতাদের ব্যাংক হিসেব তলবের মাধ্যমে পেশার মর্যাদাহানির প্রতিবাদে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সমাবেশে জাতীয় প্রেসক্লাব সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক যে কারো ব্যাংক হিসেব তলব করে চিঠি পাঠাতে পারে, যখন তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকে। আমরা এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে কথা বলেছিলাম, তিনি বলেছেন জানি না। আমাদের তথ্যমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও নাকি জানেন না। তাহলে এই কাজ কে করে?
ব্যাংক হিসেব তলবকে গভীর ষড়যন্ত্র উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা মনে করছি এর মাধ্যমে সাংবাদিকদেরকে সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিতে ভেতর থেকে একটি ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এর মাধ্যমে জনগণের কাছে, পৃথিবীর কাছে একটি ভুল বার্তা যাচ্ছে। তাই রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সংস্থার কাছে আমাদের দাবি, আপনারা খুঁজে বের করুন এরা কারা?
আমাদের বিরুদ্ধে কী অভিযোগের ভিত্তিতে এই হিসেবের তথ্য চাওয়া হলো? যে প্রক্রিয়ায় চাওয়া হলো, এর মাধ্যমে আমাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দেওয়া হলো। আমাদের সুনাম ক্ষুন্ন করা হলো। এর দায় কে নেবে? তাই এর উদ্দেশ্য কী বের করতে হবে।
তিনি বলেন, যারা মানি লন্ডারিং করে তাদেরকে ধরেন। সেটা না করে জনগণের দৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করবেন না। কে সাংবাদিকদের তথ্য চেয়েছে এবং কিসের প্রেক্ষিতে চেয়েছে তাও প্রকাশ করতে হবে।
এ সময় বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশের সভাপতি মোল্লা জালাল কর্মসূচি ঘোষণা করে বলেন, আগামী বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকাসহ সারাদেশে বেলা ১১টায় বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। দেশের সব সাংবাদিক সংগঠন নিজ নিজ অবস্থান থেকে এই কর্মসূচি পালন করবেন।
প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেন, পেশাজীবী সংগঠনগুলোর মধ্যে সাংবাদিকদের সংগঠন এবং সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনে এখনও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়। এ কারণেই সাংবাদিকদের টার্গেট করা হয়েছে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করতেই এই কাজ। এই মনোবৃত্তির তীব্র নিন্দা জানাই।
প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান বলেন, রাষ্ট্র প্রয়োজনে যে কারো ব্যাংক হিসেব তলব করতেই পারে। কিন্তু যে প্রক্রিয়ায় সংগঠনকে জড়িয়ে ব্যাংক হিসাবের তথ্য চাওয়া হয়েছে এবং এসব মিডিয়ায় প্রকাশ করা হয়েছে, এতে সাংবাদিকদের সম্মানহানি হয়েছে। আমলাতন্ত্রের অভিন্ন শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে সাংবাদিক সমাজ। তাই এখনই এই আমলাতন্ত্রের লগাম টেনে ধরার সময় হয়েছে।
সাংবাদিক নেতা শেখ মামুনুর রশীদ বলেন, এটি সাংবাদিকদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা মাত্র। একটি আমলাচক্র বিভিন্ন সময় রাষ্ট্রের ওপর দখলদারিত্বের পাঁয়তারা করছে, এটি সেই চক্রেরই কাজ। যার মাধ্যমে সাংবাদিকদের রাষ্ট্রের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়ে দিতে চায়।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি মোরসালিন নোমানী বলেন, আমার কী আছে, কী নেই- সাংবাদিক সমাজ জানে। আপনারা তদন্ত করে যে তথ্য পাবেন সেটিও জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে। তা না হলে এই দুষ্টু আমলাচক্রের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেন তিনি।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন, বিএফইউজের (একাংশ) মহাসচিব নুরুল আলম খোকন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) (একাংশ) সাবেক সভাপতি আবু জাফর সূর্য্য, বাংলদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সভাপতি মিজান মালিক, সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন আরিফ, সাংবাদিক সোহরাব হাসান প্রমুখ।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত