কাজের স্বীকৃতি পেলাম: শপথগ্রহণের পর প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম
প্রকাশ: ১৮ জুলাই ২০২১, ২১:০২ | আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০:১৫
‘দীর্ঘ সময় সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছি। নিরলস কাজ করেছি, সে ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে গুরুত্ব পেয়েছে দেশ। বিনিময়ে কিছু পাবো, সেই আশা কখনোই করিনি। কোনও কিছু পাওয়ার লালসাও জন্মায়নি কোনও দিন। তারপরও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার ওপর আস্থা রেখেছেন। নতুন দায়িত্ব দিয়েছেন। সেই আস্থাকে মূল্য দিয়ে সাধ্য অনুযায়ী কাজ করবো।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন টানা তৃতীয় মেয়াদের সরকারের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে রবিবার (১৮ জুলাই) সন্ধ্যায় শপথগ্রহণের পর অনুভূতি জানতে চাইলে গণমাধ্যমকে এসব কথা বলেন ড. শামসুল আলম। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদ্য সাবেক হওয়া এই সদস্য (সিনিয়র সচিব) টেকনোক্র্যাট কোটায় প্রতিমন্ত্রী হলেন।
সরকারের কোনো মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী শপথ নিলে সেই অনুষ্ঠানে সরকার প্রধানের উপস্থিত থাকার রেওয়াজ রয়েছে। তবে রোববারের শপথ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছিলেন না। মহামারীকালে গত নভেম্বর মাসে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খানেরও শপথেও ছিলেন না সরকার প্রধান।
শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিসভার জ্যেষ্ঠতম সদস্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম এবং পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় এখন মন্ত্রী আছেন ২৫ জন। এছাড়া ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী এবং তিনজন উপমন্ত্রী বিভিন্ন দপ্তরের দায়িত্ব পালন করছেন। শামসুল আলমের শপথের মধ্য দিয়ে প্রতিমন্ত্রীর সংখ্যা বেড়ে ২০ হল। সংসদ সদস্য না হওয়ায় তিনি মন্ত্রিসভায় জায়গা পাচ্ছেন টেকনোক্র্যাট হিসেবে।
বঙ্গভবন সূত্রে জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতির কারণে বঙ্গভবনে সংক্ষিপ্ত পরিসরে শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ড. শামসুল আলমকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। তিনি কাজ করবেন বর্তমান সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের সঙ্গে। পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে পরিকল্পনামন্ত্রীর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করে আসছেন ড. শামসুল আলম। ভবিষ্যতে তার (এম এ মান্নান) সঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে এটি একটি ভালো দিক বলে মনে করেন মন্ত্রিসভার নতুন এই সদস্য।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. শামসুল আলম ৩৫ বছরের অধ্যাপনা শেষে ২০০৯ সালের ১ জুলাই পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে যোগদান করেন। দীর্ঘ এক যুগ চুক্তিভিত্তিক দায়িত্ব পালন করেছেন। সিনিয়র সচিব পদে গত ৩০ জুন তার সবশেষ চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে। এবার দায়িত্ব পেলেন আরও বড় পরিসরে।
তিনি বলেন, দীর্ঘ ১৩ বছর নিরলস কাজ করেছি। কোনও দিন কাজে ফাঁকি দিইনি, দেওয়ার চেষ্টাও করিনি। আমার ওপর আস্থা রেখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন যে কাজ দিয়েছেন সেই কাজ মন লাগিয়ে করেছি। তিনি হয়তো তারই স্বীকৃতি দিয়েছেন, এটি আমার জন্য অনেক বড় উপহার। এই উপহারের মর্যাদা রাখতে চেষ্টা করবো সর্বশক্তি দিয়ে।
করোনা মহামারিতেও নানা প্রতিকূলতা পাড়ি দিয়ে দেশে এখন বিভিন্ন মেগা প্রজেক্টের কাজ চলমান। এমন পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নিয়ে প্রকল্প ব্যবস্থাপনাকে উন্নত করায় গুরুত্ব দেবেন বলেই জানালেন নতুন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রকল্প ব্যবস্থাপনাকে উন্নত করা এবং দ্রুত সময়ে বাস্তবায়ন করাই হবে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে আমার অগ্রাধিকার। এ ছাড়া গত ১২ বছরে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগে যে গতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে সেটা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করবো। কারণ, এখানেই আমি কাজ করেছি দীর্ঘ সময়। যেটা যে বিভাগের কাজ তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুত কাজ সম্পন্ন করবো।
তিনি আরও বলেন, অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, দেশের বাজেটের ৪০ শতাংশই উন্নয়ন বাজেট। এর মাধ্যমেই আমাদের দেশের আর্থ-সামাজিকসহ বিভিন্ন উন্নয়ন হয়। সেখানে আমরা অবশ্যই চাইবো প্রকল্প ত্বরান্বিত এবং তা বাস্তবায়ন হোক। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর স্বার্থে এর জন্য নীতিগত পরিবর্তন বা নীতিগত কী সংস্কার প্রয়োজন তা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হবে।
ড. শামসুল আলম ১৯৫১ সালে চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর শেষ করেন। পরের বছর একই বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়ে ২০০৯ সাল পর্যন্ত শিক্ষকতায় নিযুক্ত ছিলেন। সেখানে কর্মরত অবস্থাতেই ১৯৮৩ সালে ব্যাংককের থাম্মাসাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯১ সালে ইংল্যান্ডের নিউ ক্যাসেল আপন টাইন ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতি বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
এ ছাড়াও জার্মানির হামবোল্ট বিশ্ববিদ্যালয়, বেলজিয়ামের ঘেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং নেদারল্যান্ডের ভাগিনিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিকস স্কুলে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষকতা করেন ড. শামসুল আলম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাডজাঙ্কট ফ্যাকাল্টি হিসেবে কৃষি অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষকতায়ও যুক্ত ছিলেন তিনি।
শামসুল আলম জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থায় ২০০২ সালের মার্চ থেকে ২০০৫ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত পূর্ণকালীন চাকরিও করেছেন। ইউএনডিপি বাংলাদেশে ১৪ মাস সিনিয়র স্কেলে পূর্ণকালীন জাতীয় কনসালটেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জাতীয় দৈনিকসমূহে উপ-সম্পাদকীয় পৃষ্ঠায় তিন দশকের অধিক সময় ধরে আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক বিষয়ে বিশ্লেষণধর্মী অসংখ্য কলাম লিখেছেন। এছাড়া গবেষণা গ্রন্থ, পাঠ্যপুস্তকসহ অর্থনীতি বিষয়ক তার প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ১২টি।
অর্থনীতিতে বিশেষ অবদানের জন্য সরকার তাকে ২০২০ সালে একুশে পদকে ভূষিত করে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত