কাউনিয়ায় নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত চরাঞ্চলের মানুষ

  সারওয়ার আলম মুকুল, কাউনিয়া (রংপুর) প্রতিনিধি :

প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩:৩১ |  আপডেট  : ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:২০

রংপুরের দরিদ্রতম একটি উপজেলার নাম কাউনিয়া। উপজেলাটি কৃষি পন্য উৎপাদনে ব্যাপক ভুমিকা রাখলেও স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও চরাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে তেমন কোন উন্নয়ন হয়নি।

চরের মানুষ গুলো সাংবিধানিক অধিকার নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। প্রতিনিয়ত জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে হয় চরবাসীকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর নদী ভাঙ্গন নিত্য সঙ্গি। রাস্তা ঘাটের নেই তেমন উন্নতি। প্রয়োজনের তুলনায় অতি সামান্য পাকা রাস্তা থাকলেও নেই পাকা সেতু। সম্প্রতি বিদ্যুৎ পৌঁছালেও বাড়েনি জীবন মান উন্নয়ন আর সচেতনতা। উপজেলায় ৫৩৬ কিঃমিঃ রাস্তার মধ্যে ২৭১ কিলো মিটারই কাচা। সরজমিনে বিভিন্ন চরাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে দেশের সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকার গুলোর মধ্যে বিশেষ করে শিক্ষা, চিকিৎসা, বিনোদন, যোগাযোগের চরম অভাব। এছাড়া নিরাপদ পানি, স্যানিটেশনের অভাবে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। সচেতনতার অভাবে শিশুরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়ে বাল্য বিবাহ ও যৌতুকের বলি এবং শিশু শ্রমের শিকার হচ্ছে। স্বাস্থ্য সেবা ও পুষ্টি হীনতায় ভূগে মেধা শূন্য প্রজন্ম তৈরী হচ্ছে। বাল্য বিবাহের ফলে পুষ্টিহীন মা যে শিশুর জন্ম দিচ্ছে তারা হচ্ছে বিকলাঙ্গ। শিশুদের মেধার বিকাশ বাধাগ্রস্থ হয়ে ঝড়ে পরার হার বাড়ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল না থাকায় অনেক রোগি কে ভারে করে আনতে রাস্তায় মৃত্যুবরণ করছে। কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত পন্যের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না।

উপজেলার ২২টি চরে জনপ্রতিনিধিদের স্বদিচ্ছা এবং সরকারী ভাবে নজরদারির অভাবে তাদের ভাগ্যের কোন উন্নয়ন হচ্ছে না। চরাঞ্চলে নেই অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ। প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে টিকে আছে লাখ লাখ মানুষ। হাড়ভাঙ্গা শ্রমে যারা বালু চরে ফসল ফলায়, তাদের জীবনে সুখের প্রদীপ জ্বলে না কখনোই। বিশাল এ জনগোষ্ঠীর ভাগ্য বদলের জন্য সরকারের সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রয়োজন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। শিক্ষা অফিসের অবহেলা ও অবিভাবকদের অসচেতনাতার কারনে প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে ছাত্র ঝরে পড়ার হার বেড়েই চলেছে। কিছু বিদ্যালয় ছাত্র-ছাত্রী নেই বললেই চলে। স্বাস্থ্য কর্মীরা চরে সঠিক কাজ করেন না। বিশেষ করে পরিবার পরিকল্পনা স্বাস্থ্য কর্মীরা সঠিক দায়িত্ব পালন না করায় জনসংখ্যার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্যাংক ঋণ প্রাপ্তিতে দীর্ঘ সূত্রিতায় চর গুলোতে সুদের ব্যবসা রমরমা। চর গুলোতে নারীর ক্ষমতায়ন নেই বললেই চলে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মহিদুল হক বলেন, চরবাসীর জীবনমান উন্নয়নে প্রশাসন কাজ করছে। বাল্যবিয়ে রোধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। বর্তমান সরকার চরের উন্নয়নে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করছে। চরের মানুষ জানায় নির্বাচন ছাড়া জনপ্রতিনিধিদের দেখা পায় না। বর্তমান সরকার প্রধানের কাছে তাদের দাবী তিনি যেন তাদের একটু দেখত আসেন এবং চরের মানুষের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করেন। 

 

গ্রামনগরবার্তা/কা/আ                                                   

 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত