আশ্বাসের বানী নিরবে কাঁদে
কাউনিয়ায় দুইটি পাকা সেতুর অভাবে তিন ইউনিয়নবাসীর দুর্ভোগ চরমে

প্রকাশ: ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৭:২৩ | আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭:০৭

স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও কেউ কথা রাখেনি চরাঞ্চলের মানুষের। সরকার আসে সরকার যায়, কিন্তু কাউনিয়ার চরাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের কোন উন্নয়ন হয় না। নির্বাচনে জনপ্রতিনিধিরা শুধু কথা দিয়ে যায়, নির্বাচিত হওয়ার পর ভুলে যায়। রংপুরের কাউনিয়ায় তিস্তা শাখা নদীর ওপর দুইটি পাকা সেতুর অভাবে বছরের পর বছর চরম দুর্ভোগে তিন ইউনিয়নের চরাঞ্চলের মানুষের। যে মানুষ গুলো রোদে পুরে বৃষ্টিতে ভিজে কাদা মাটি মারিয়ে ফসল ফলায়, তাদের ভাগ্যের উন্নয়নে তেমন কোন পরিকল্পনা নেই। স্বাধীনতার পর থেকেই কৃষকের উৎপাদিত ফসল ন্যায্যমূল্যে বিক্রির জন্য সরাসরি হাট বাজারে নেয়ার জন্য খলিলের ঘাট ও গোপিডাঙ্গা গ্রামে তিস্তার শাখা নদীর ওপর দুইটি পাকা সেতুর নির্মানের দাবী জণগণের।
সরেজমিনে উপজেলার বালাপাড়া, শহীদবাগ ও হারাগাছ ইউনিয়নের খলিলের ঘাট ও গোপিডাঙ্গা মৌলভী বাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এই দুই স্থানে পাকা সেতু না থাকায় চরাঞ্চলের প্রায় ২০গ্রামের মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। এলাকাবাসী তিস্তা শাখা নদীর উপর স্বেচ্ছা শ্রমে নির্মিত নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ ২০ গ্রামের মানুষ যাতায়াত করছে। যাতায়তের বাঁশের সাঁকোই তাদের একমাত্র ভরসা। স্বাধীনতার পর থেকে পাকা সেতু নির্মানে জনপ্রতিনিধিরা শুধুই আশ্বসের বাণী দিয়ে গেছেন। আশ্বাসের বানী নিরবে কাঁদে। শষ্য ভান্ডার নামে খ্যাত এলাকা গুলোর কৃষি পণ্য পরিবহনে কৃষকদের পোহাতে হচ্ছে চরম দূর্ভোগ। পাকা সেতু না থাকায় ফসলের ন্যায মূল্যে থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা। চীনের দুঃখ হোয়াং হো আর তিন ইউনিয়নের ২০ গ্রামের মানুষের দুঃখ তিস্তা শাখা নদীর ওপর বাঁশের সাঁকো দুইটি। এলাকাবাসী একাধিকবার বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন নিবেদন করেও সেতু নির্মাণের কোন আশ্বাস না পাওয়ায় হতাশা। তিস্তা শাখা নদীটি হারাগাছ ও শহীদবাগ এবং বালাপাড়া ইউনিয়নের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে তিস্তা রেল ও সড়ক সেতু পয়েন্টে গিয়ে মিলিত হয়েছে। বিগত সরকারের আমলে দেশে ব্যাপক উন্নয়ন হলেও সেই উন্নয়নের ছোঁয়া কাউনিয়ায় লাগেনি। এই উপজেলায় কর্সংস্থান সৃষ্টির কোন উদ্যোগ নেই। ফলে কৃষি নির্ভর এই অঞ্চলের মানুষ। কৃষি দেশের অর্থনীতি সচল রাখলেও চরাঞ্চলের কৃষকের উৎপাদিত পন্য সড়ক যোগাযোগে সরাসরি বিক্রয়ের ব্যবস্থা না থাকায় অনেকাংশে মুখথুবরে পরেছে। অধিকাংকাংশ চরাঞ্চলের যোগাযোগের রাস্তায় নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো দিয়েই পরাপার হতে হয়। শষ্য ভান্ডার হিসেবে পরিচিত গ্রাম গুলোতে আলু, ভুট্রা, ধান, পাট, রসুন, মরিচ, পিঁয়াজ, বাদাম, খিরা, শষাসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি উৎপাদন হয়ে থাকে। এসব কৃষি পণ্য হাট বাজারে নিতে হলে প্রায় ১০ কিঃমিঃ রাস্তা ঘুরে তকিপল হাট, ৭ কিঃমিঃ ঘুরে খানসামা হাট ও ১২ কিঃমিঃ ঘুরে মীরবাগ হাটে যেতে হয়। অথচ খলিলের ঘাট ও মৌলভী বাজারে পাকা সেতু নির্মাণ হলে অর্ধেক পথ কমে আসবে। সেই সাথে এলাকার কৃষকরা পাবে তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য। এই বাঁশের সাঁকো দিয়ে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন হাট বাজারে যাতায়ত করে। শিক্ষক মঈনুল ইসলাম জানায় এখানে একটি পাকা সেতু নির্মাণ করা হবে এ কথা বহুদিন ধরে শুনে আসছি, কিন্তু ব্রীজ নির্মাণের কোন আলামত দৃর্শ্যমান নয়। সেতু দুইটি নির্মান হলে লালমনিরহাট সদর উপজেলার রাজপুর ইউনিয়ন, রংপুরের কাউনিয়ার হারাগাছ, শহীদবাগ ও বালাপাড়া ইউনিয়নের সাথে সরাসরি সংযোগ স্থাপন হবে। বাঁশের সাঁকো দিয়ে কোন প্রকার যানবাহন চলাচল করতে না পাড়ায় অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়ছে চরাঞ্চলের ২০টি গ্রাম। বিশেষ করে কৃষি পণ্য হাট বাজারে নিতে কৃষককে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পরতে হয় প্রতিনিয়ত। শহীদবাগ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আঃ হান্নান ও হারাগাছ ইউপি চেয়ারম্যান রাজু আহম্মদ বলেন আমরা দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করছি পাকা সেতু নির্মানের, আশা করছি এবার হবে। উপজেলা প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান জেমি বলেন খলিলের ঘাট ও মৌলভীবাজারে পাকা সেতু নির্মাণের প্রস্তাব পঠানো হয়েছে, তারপ্রেক্ষিতে ঢাকা থেকে প্রকল্প পরিচালক মোঃ এবাদত আলী স্যার সহ একটি টিম সরেজমিনে পরিদর্শন করে গেছেন আশা করছি সেতু দুইটি হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহিদুল হক জানান, এলাকা দুইটি পরিদর্শন করেছি, চেষ্টা করবো যত দ্রুত সম্ভব সেতু নির্মানের ব্যবস্থা করার। ঢাকা থেকে প্রকল্প পরিচালক মোঃ এবাদত আলী জানান, আমি সরেজমিনে দেখে গেলাম, চরাঞ্চলের মানুষের কষ্ট লাঘবে চেষ্টা করবো যেন পাকা সেতু দুইটি হয়। তার কথায় এলাকাবাসী আশায় বুক বেধেছে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত