তিস্তা রেল সেতুর মেয়াদ উর্ত্তিণের ২২ বছর পারেও চলছে ২২টি ট্রেন
কাউনিয়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন চলাচল
প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০২৩, ১৫:৩৩ | আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩:৫৭
উত্তর জনপদের কাউনিয়ায় তিস্তা রেল সেতুর মেয়াদোত্তীর্ণের ২২ বছর পার হলেও আজও ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে ৪টি আন্তঃ নগর ট্রেনসহ অন্তত ২২টি ট্রেন। লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের সাথে দেশের রেল যোগাযোগের জন্য তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার ১৯০১ সালে সেতুটি নির্মান করে ১৬ অক্টোবর সেতুটি খুলে দেয়া হয়। সেতুর মেয়াদ ছিল ১০০ বছর। বিগত ২০০০ সালের অক্টোবরে সেতু নির্মানের শতবর্ষ পূর্ণ হয়। এরপর পেরিয়ে গেছে প্রায় ২২ বছর। তবুও ঝুঁকি নিয়ে চলছে ট্রেন। লালমনিরহাট রেলওয়ে ডিভিশনের ২০টি ট্রেন এই সেতু দিয়ে পারাপার হচ্ছে। এর মধ্যে ৪টি আন্তঃ নগর ট্রেনসহ রয়েছে ডেমু, মেইল, লোকাল ও মালবাহী ট্রেন। মেয়াদোত্তীর্ণ এই সেতুর পাশে আরেকটি রেল সেতু নির্মাণে সরকারের পরিকল্পনা থাকলেও বাস্তাবায়নে দৃশ্যত কোন উদ্যোগ নেই। রেলওয়ের সূত্র মতে, সারাদেশের সঙ্গে লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম অঞ্চলে রেল যোগাযোগ সৃষ্টি করতে ১৯০১ সালে তিস্তা নদীর ওপর ২১১০ ফুট লম্বা তিস্তা রেলওয়ে সেতু নির্মাণ করেন তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার। সে সময় দেশের তৃতীয় বৃহত্তম রেলসেতু হিসেবে এটির ব্যাপক পরিচিতি পায়। সেতুটির উত্তর পাশে লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তা এলাকা এবং দক্ষিণ পার্শে যুক্ত রয়েছে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলা। ১২২ বছর বয়সী এ সেতুর মেয়াদকাল ধরা হয়েছিল ১০০ বছর। প্রায় ২২ বছর আগে সেতুটি মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জোড়াতালি দিয়ে প্রতিদিন পারাপার করছে ২০টি ট্রেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সেতুটির কাউনিয়া প্রান্তে পাকবাহিনী বোমবিং করায় একটি গার্ডার পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর ১৯৭২ সালে মেরামত করে সেতুটি পুনরায় চালু করা হয়। ১৯৭৭ সালে রেলওয়ে ও সওজ বিভাগ যৌথভাবে রেল সেতুতে মিটারগেজ লাইনের পাশে ২৬০টি স্টিলের টাইফ প্লেট ও কাঠের পাটাতন স্থাপন করে। ১৯৭৮ইং সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ট্রেনের পাশাপাশি সেতুটি দিয়ে সড়ক যোগাযোগ উদ্বোধন করেন। সেই থেকে সেতু ওপর দিয়ে ট্রেন ও যাত্রীবাহী বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল শুরু করে। অতিরিক্ত মাল বোঝাই ও পাথর বোঝাই ট্রাক পারাপারের ফলে সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। ফলে ২০০১ সালে রেল সেতুর পূর্ব পাশে তিস্তা সড়ক সেতু নির্মাণের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে ২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বরে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিস্তা সড়ক সেতু উদ্বোধন করেন। সড়ক সেতু চালু হওয়ায় মেয়াদোত্তীর্ণ রেল সেতুতে বাস ট্রাক চলাচল বন্ধ হলেও ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক থাকে।
বর্তমানে সেতুটির অবস্থা বেশ করুণ। দুর্ঘটনা এড়াতে সেতুটির উন্নয়নে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রেলের সাধারণযাত্রী ও অভিজ্ঞ মহল। তিস্তা সেতু এলাকার জাহেদুল, আনোয়ার বলেন, তিস্তা রেল সেতুটির ওপর ট্রেন উঠলে সেতুটি কেঁপে ওঠে। মাঝে মাঝে লোক দেখানো নামমাত্র মেরামতের কাজ হলেও সেতুটির কোনো উন্নতি ঘটেনি। রেলওয়ের পশ্চিম অঞ্চল জোনের প্রধান প্রকৌশলী জানান, তিস্তা সেতু কিছুটা মেরামত করা হয়েছে। এখন সেতুটিতে ট্রেন চলাচলে খুব বেশী সমস্যা নেই। আমরা একে ঝুঁকিপূর্ণ সেতু বলতে পারিনা। যাত্রীদের আতঙ্কের ব্যাপারটি সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করবো। রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগীয় ম্যানেজার বলেন, তিস্তা রেলসেতু ঝুঁকিপূর্ণ নয়। তবুও এর পশ্চিম পাশে নতুন করে আরও একটি ডাবল ব্রডগেজ সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত