কৃষিতে অপার সম্ভাবনা
কাউনিয়ায় জলপাইয়ের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি
সারওয়ার আলম মুকুল
প্রকাশ: ৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮:৩৪ | আপডেট : ৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩:৩৬
রংপুরের কাউনিয়ায় গ্রামীন কৃষি অর্থনীতে ভেষজ গুন সম্পন্ন জলপাই বেশ অবদান রাখতে শুরু করেছে। বাম্পার ফলন ও দাম পেয়ে চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। জলপাই চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন অনেকেই।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ও হাট বাজার ঘুরে দেখা গেছে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা গাছ ও হাট থেকে জলপাই সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন। স্থানীয় পাইকাররা বাড়ি বাড়ি ঘুরে গাছ থেকে জলপাই সংগ্রহ করে একত্রিত করে বিভিন্ন জেলায় রফতানি করছেন। স্থানীয় ভাবে এবং দেশের অব্যন্তরে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে জলপাই ফলের। কাউনিয়ার জলপাই রপ্তানির ফলে গ্রামীণ কৃষি অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এটি কেবল একটি ফল নয় বরং দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে, যা স্থানীয় কৃষকদের স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করছে। জলপাই চাষ গ্রামীণ কৃষি অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে শুধু তাই নয় নতুন করে সৃষ্টি হচ্ছে কর্মসংস্থানের। কাউনিয়া কৃষি বিভাগ জানায় উপজেলার ১টি পৌর সভাসহ ৬টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে বাগান ও বাড়ির আঙ্গিনায় প্রায় ৪ হেক্টর জমিতে জলপাই চাষ করা হয়েছে। প্রতিবছরের ন্যায় মৌসুমের শুরু থেকেই পাইকারি ব্যবসায়ীরা জলপাই সংগ্রহে ব্যাস্ত সময় পার করছে। ভালো দাম পাওয়ায় দিন দিন জলপাই চাষে ঝুকছে কৃষকেরা। বর্তমানে হাট-বাজারে প্রতিকেজি জলপাই ২৫ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। নিজপাড়া গ্রামের জলপাই চাষী প্রহলাদ চন্দ্র বলেন, বাড়ির সামনে ও বাগানে লাগানো ৪টি গাছ থেকে জলপাই বিক্রি করে ভালো দাম পেয়েছি। ব্যবসায়ীরা বাড়িতে এসে গাছ কিনে নিয়েছে। জলপাই ব্যবসায়ী আনছার ও ইসমাইল জানান, তারা বিভিন্ন বাড়ি ও বিভিন্ন হাট-বাজার থেকে জলপাই কিনে ঢাকা, চট্রগ্রাম, ফেনী, যশোহর সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করছেন। গাছ থেকে জলপাই পারা থেকে শুরু করে বস্তায় তোলা পর্যন্ত এ কাজে বেশ কিছু লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। কাউনিয়া থেকে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০মন জলপাই বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হয়ে থাকে। প্রধান শিক্ষক রমজান আলী জানান, মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন জেলায় জলপাই রপ্তানি করছেন, যা গ্রামীণ কৃষি অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এটি কেবল একটি ফল নয় বরং কাউনিয়ার অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে, যা স্থানীয় কৃষকদের স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করছে। জলপাই চাষ গ্রামীণ কৃষি অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে শুধু তাই নয় নতুন করে সৃষ্টি হচ্ছে কর্মসংস্থানের। স্থানীয় কবিরাজ জানান, টক জাতীয় ছোট ফল জলপাই দেখলেই জিভে জল চলে আসে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের ভাষায় জলপাইয়ে রয়েছে ভিটামিন, মিনারেলসহ ভেষজ উপাদান, খাদ্যআঁশ, আয়রন, কপার, ভিটামিন-ই, ফেনোলিক উপাদান, অলিক অ্যাসিড এবং বিভিন্ন প্রকারের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। এই ফল শুধু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেই সাহায্য করে না, একইসঙ্গে ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমায়।
কৃষি কর্মকর্তা তানিয়া আকতার জানান, চলতি মৌসুমে জলপাইয়ের বাম্পার ফলন হয়েছে। উপজেলায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়েছে ২১৮ মেঃ টন। জলপাই গাছ লাগাতে পারলেই হয়। একটি গাছে কমপক্ষে দেড় থেকে ২মণ জলপাই ধরে। বাজারে দাম ভালো থাকায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। এছাড়া ফল হিসেবেই নয়, এর তেলও খুব স্বাস্থ্যকর। জলপাই তেলে এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে, যেগুলো আমাদের শরীরকে সুস্থ-সুন্দর রাখতে সাহায্য করে। খাবারে জলপাইয়ের তেল ব্যবহারে শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে। জলপাই উৎপাদন বাড়াতে কাজ করছে কৃষি বিভাগ।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত