কাউনিয়ায় কৃষি বিভাগ উদাসীনতায় তামাক চাষে দিন দিন ঝুঁকছে কৃষক

প্রকাশ: ৪ মার্চ ২০২৫, ১৭:০০ | আপডেট : ৫ মার্চ ২০২৫, ২৩:৪৩

তামাক চাষে বিখ্যাত রংপুর স্বগৌরবে আবারও ফিরতে শুরু করেছে। গত কয়েক বছর আগেও রংপুরের কাউনিয়ায় যেসব আবাদি জমিতে মৌসুমে ধান, গম, ভুট্টা, সরিষা, মরিচ, পিয়াজ, রসুন, আলু, মিষ্টি কুমড়াসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করা হয়েছিল এখন সেসব জমিতে কৃষি বিভাগের চরম উদাসীনতায় তামাকের ব্যাপক চাষ হচ্ছে।
সরেজমিনে উপজেলার তিস্তা নদী বেষ্ঠিত চরসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে তামাকের সারি সারি ক্ষেত। দুই চোখ মেললেই চোখে পড়ে সবুজে ভরা তামাক ক্ষেত। কয়দিন পর বুক ভরে নিঃশ্বাস নিবেন তারও উপায় থাকবে না। বাতাসে হবে তামাটে গন্ধ। ঘরের আঙ্গিনায় পা ফেলার জায়গা থাকবেনা, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকবে তামাক পাতা। মাঠ-ঘাট কিংবা রাস্তার ধারে বাঁশের বেড়া, কোথাও খালি পাবেন না। রোদে শুকানো হবে তামাক। বাড়ি বাড়ি শুকনো তামাকের স্তুপ করে মাচা ভর্তি করা হবে। আর এসব কাজে ব্যস্ত হবেন নারী পুরুষ, এমনকি শিশুরাও। বিষবৃক্ষ তামাক চাষে ঝুঁকছে কাউনিয়ার কৃষকরা। কম খরচে অধিক লাভের আশায় দেশি-বিদেশি তামাক কোম্পানি গুলোর প্রত্যক্ষ পরোক্ষ সহযোগিতায় তারা তামাক চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এতেকরে কৃষক পরিবার গুলোতে দিন দিন বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। কিন্তু কাউনিয়ায় কৃষি বিভাগ তামাক চাষ বন্ধের বিষয়ে কার্যত কোন পদক্ষেপ নজরে পড়েনি। গদবাধা কিছু কথা ছারা দৃশ্যত কোন পদক্ষেপ নেই। কৃষকের সাথে কথা বলে জানাগেছে বাণিজ্যিক ভাবে সাধারনত ৪টি জাতের তামাক এফসিভি, মতিহার, জাতি ও বার্লী চাষ করা হয়। রাজিব গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম জানান, কৃষক যে ফসলে লাল বেশী পবে তাই তো করবে। সরকারতো কৃষকের কথা ভাবে না, এতো কষ্ট করে আলু পিয়াজ মরিচ আবাদ করলাম এখন আসলই তুলতে পারি না। সরকার আলু পিয়াজ কিনলে কৃষক দাম পেতো। অন্য ফসলে লোকসান হওয়ায় কৃষকরা ঝুঁকছেন তামাক চাষে। দিনে দিনে বাড়ছে এ অঞ্চলে তামাক আবাদের জমি। আর তামাক কম্পানী গুলো আগেইদর নির্ধারণ, বিক্রির নিশ্চয়তা, চাষের জন্য সুদমুক্ত ঋণ, কোম্পানির প্রতিনিধিদের নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন ও পরামর্শ দান-তামাক চাষ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। মূলত কৃষি বিভাগের উদাসীনতাই দায়ী। রংপুর অঞ্চলে তামাক পাতায় তৈরি হচ্ছে বিড়ি-সিগারেট-গুলসহ বিভিন্ন নেশাজাতীয় দ্রব্য। রংপুরে এখন চলছে তামাকের ভরা মৌসুম। হলদীবাড়ি রেল গেট এলাকার কৃষক জানান প্রায় ১০০শতক জমিতে তামাক চাষ করেছেন। তামাকের তেমন রোগ-বালাই নেই। আর কেউ আমাকে তামাক চাষ করতে নিষেদ করে নাই। নগদ টাকার জন্যে তামাক চাষ করেছি। আলু আবাদে খালি লোকসান। আর তামাক চাষ করায় কম্পানির লোক বাড়ি থেকে কিনে নিয়া যাবে বলে জানিয়েছে। কাউনিয়া কৃষি বিভাগ থেকে দাবি করা হয়েছে, তামাকের আবাদ কমে গেছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। এ বছর কাউনিয়ায় ব্যাপক হারে তামাক আবাদ হয়েছে। ডাঃ লিয়াকত আলী জানান, তামাক চাষ ও সেবন মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। দিন দিন শ্বাসকষ্ট, চর্ম, ও ক্যান্সারসহ নানা ধরনের রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তামাক চাষে কৃষকদের পাশাপাশি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতেও রয়েছেন সাধারণ মানুষ। তামাক চাষে কমছে কৃষি জমির উর্বরতা শক্তি। তামাকের বিষক্রিয়ার কারণে পরিবেশে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। পাশাপাশি কৃষক পরিবারের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। কাউনিয়া কৃষি বিভাগ থেকে তামাক চাষ বন্ধে কোন পদক্ষে নেই। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ তানিয়া আকতার জানান, তামাক চাষের কোন লক্ষ্যমাত্র নাই বরং কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। তবে কোম্পানিগুলোর প্ররোচনায় বিনা পুঁজিতে লাভ বেশি পাওয়ায় কৃষকরা তামাক চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত