করোনা কালে ছাদবাগানঃ এনে দেয় খানিকটা প্রশান্তি
প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০২১, ১০:৫৮ | আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬:৩১
বছর খানেক আগের কথা। তাহমিনার দিনের শুরুটা কাটতো ব্যস্ততায়। শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত ছিলেন। করোনায় ছন্দপতন। সবকিছুতে নেমে আসে স্থবিরতা। ব্যস্ততা থেকে একেবারেই ভিন্ন জীবন। সময় কাটে না। দুই ছেলে ফারাজ ও ইয়ামেরও স্কুল, কলেজ বন্ধ। এই অবস্থায় মানসিক ও শারীরিক অবসাদ কাটানোর জন্য বেছে নিলেন ছাদবাগান করার। বিশাল ছাদ এমনিতেই পরেছিল। করোনাকালীন সময়ে তাহমিনা উদ্যোগ নেন এবার ছাদ বাগান করার।
যদিও ছোট বেলা থেকেই বাগান করার শখ ছিল। বাবা ছিলেন চট্টগ্রামস্থ টিএসপি সারকারখানার কর্মকর্তা। কেটেছে কোয়ার্টারে। আর সেখানে বাসার সামনে ছিল খালি জায়গা। সেখানে তাহমিনার বাবা গড়ে তুললেন বাগান। নানান ফুলের। কিছু সবজির। আগ্রহের বীজটা বপন করে দিয়েছিলেন তার বাবা। তারই ধারাবাহিকতায় তাহমিনা শ্বশুর বাড়িতেই নবউদ্যোমে শুরু করেন ছাদবাগান। তাহমিনা থাকেন চট্টগ্রামের দক্ষিণ খুলশীর বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটিতে।
২০২০ সাল। চারদিকে করোনার ছোবল। এরমধ্যেই তাহমিনা ব্যস্ত হয়ে উঠলেন ছাদবাগানের কাজে। স্বামীরও উৎসাহ ছিল।প্রায় ৩/৪ মাস টানা কাজ করলেন সকাল-বিকাল। নানান রকমের মাটি সংগ্রহ, নানান জাতের ফুল, সার, টব, তেলের বোতল ও কোমল পানীয়ের বোতলে চারা লাগালেন নানান ফুল, পাতাবাহার, ক্যাকটাস। তারপর লাগালেন আম, লেবু, সবজির চারা। মোটামুটি এক বছরের মধ্যেই পুরো ছাদ হয়ে ফুলময় ও ফলময়। আর ছাদবাগান করার জন্য সবচেয়ে বেশি পরামর্শ ও সহায়তা পেয়েছেন তার ছোটমামা শফিকুল ইসলামের ( উপজেলা চেয়ারম্যান, রাঙ্গুনিয়া) কাছ থেকে। যাঁর আছে 'আরণ্যক' নামে নার্সারী।
তাহমিনার দিন শুরু হয় এখন অন্য রকম ব্যস্ততায়। মানসিক ও শারীরিক অবসাদ ও হতাশা কাটিয়ে এখন তাহমিনা আগের চাইতে অনেকটা ভালো সময় কাটে ছাদবাগানে। তাহমিনা জানালেন, বাগান করে আরেকটা লাভ হয়েছে, ছাদে পাখির আনাগোনা বেড়েছে। কোকিল, টিয়া, ফিঙে, চড়ুই পাখির কিচিরমিচির - এসব শুনতে ভালই লাগে। আমার আত্মীয় স্বজনরাও এখন আমার ছাদ বাগান দেখতে আসেন। গতমাসে ছাদবাগানকে কেন্দ্র করে ছোট পরিসরে দিনের আলোয় গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানও হয়েছে। আর এসব করতে করতেই গাছগুলোর উপর কেমন জানি মায়া লেগেছে। আমার বাসার বারান্দা, ড্রইং রুমও সাজিয়েছি পাতাবাহার ও ক্যাকটাস দিয়ে। আগে আমার কিছু না কিছু কেনার শখ ছিল। করোনাকালে কেনাকাটা তেমন একটা করা হয় না। নিজের টুকটাক খরচের টাকা জমিয়ে ছাদবাগানে ব্যয় করেছি। এখন আমার খুব ভালো সময় কেটে যায়। আত্মীয়স্বজনরাও গাছের চারা নিতে আগ্রহী হয়েছেন। তাদেরকেও চারা দিই। এটা বেশ ভালোই লাগে।
বিশ্বব্যাপী করোনা কালে আমরা সবাই সুস্থ থাকার জন্য সংগ্রাম করছি। যাঁদের একটুখানি বারান্দা, ছাদ বা খোলা জায়গা আছে- তাঁরা ফুল ও ফলের গাছ লাগিয়ে শারীরিক ও মানসিক ভাবে সতেজ ও নির্মল আনন্দ খুঁজে পেতে পারেন।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত