করোনার নতুন হটস্পট সীমান্ত জেলা সাতক্ষীরা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩০ মে ২০২১, ১০:৪৪ |  আপডেট  : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:৩১

করোনার নতুন হটস্পট হয়ে উঠেছে সীমান্তবর্তী জেলা সাতক্ষীরা। ঈদ পরবর্তী সংক্রমণ বাড়ার যে শঙ্কা ছিল সেটিই এখন সত্যি হতে চলেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৬৬ জনের মধ্যে ৩৭ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে (ধরন) জেলাবাসী আতঙ্কিত থাকলেও স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, ভারতফেরত ৩৩৭ জনের মধ্যে ১৭ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হলেও এখনও কারোর শরীরে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট (ধরন) শনাক্ত হয়নি। জেলাব্যাপী হঠাৎ করোনা আক্রান্তের হার বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে জেলাবাসী।

খোঁজ  নিয়ে জানা গেছে, সাতক্ষীরা জেলায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্য বেড়ে চলেছে। ইতিমধ্যে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে বেড সংকট দেখা দিয়েছে।
 
সাতক্ষীরার সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার জানিয়েছেন, ২৮ মে পর্যন্ত ৮ হাজার ৭৭৪ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে । এরমধ্যে করোনা পজেটিভ ধরা পড়েছে ১ হাজার ৪৮৬ জন। মারা গেছে ৪৫ জন। তবে বেসরকারি হিসাবে মারা গেছেন করোনা উপসর্গ নিয়ে ২০০ জনের মত।

তিনি জানান, ঈদের পরে সীমান্ত জেলা সাতক্ষীরায় করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়েছে কয়েকগুণ। হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ১০৮ জন। আইসিইউতে আছে ৮ জন। বেড সংকটের কারণে রোগী ভর্তি করা যাচ্ছে না। সাতক্ষীরায় করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ।

সাতক্ষীরা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার থেকে শনিবার পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় শতকরা প্রায় ৪৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন। ৬৬ জনের নমুনার মধ্যে ৩৭ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলায় ১ হাজার ৫২৩ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৪৬ জন। এদিকে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে ২০৭ জন। জেলায় বর্তমানে করোনা রোগী আছে ১৬৬ জন। এরমধ্যে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০৮ জন ও সদর হাসপাতালে ৭ জন করোনা রোগী ভর্তি আছে। আইসিইউতে ভর্তি আছে ৪ জন এবং করোনা সন্দেহে ৪৯ জন চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। এপ্রিলের চেয়ে মে মাসে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

এদিকে ঈদের সময় সরকারের বিধিনিষেধ না মেনে শপিং ও গ্রামের বাড়ি যাওয়ার ঘটনায় ঈদের পর আবারও সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে। বিশেষ করে সাতক্ষীরাসহ সীমান্তবর্তী এলাকায় পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। কারণ ভারত থেকে আসা বাংলাদেশি যাত্রী। জেলায় অনেকে চোরাইভাবে প্রবেশ করছে তারা বাড়িতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সাতক্ষীরার সীমান্ত পেরিয়ে বিনা পাসপোর্টে অনেকে ভারত থেকে দেশে  আসছে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের পর জেলার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তাদের থাকার জায়গা নেই। সুপেয় পানির অভাব। তাদের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। এসব কারণে সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে।

ভোমরা স্থল বন্দরে স্বাস্থ্য বিধি না মানায় করোনা সংক্রমণ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বন্দর সংশ্লিষ্টরা। প্রতিদিন ভোমরা বন্দর দিয়ে ২০০-৩০০ ভারতীয় ট্রাক ভোমরায় ঢোকে বিভিন্ন পণ্য নিয়ে । কমপক্ষে ৫০০ জন ভারতীয় নাগরিক ভোমরা বন্দরে চলাফেরা করে থাকে। তার হোটেল ও চায়ের দোকানে উঠা-বসা করে থাকে। তাদের কোন কোয়ারেন্টিনে রাখা হচ্ছে।

তথ্যানুসন্ধ্যানে জানা গেছে, দেশের অন্যান্য বন্দরের ন্যায় থেকে ১৪ দিনের জন্য ভোমরা স্থলবন্দরে যাত্রী চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হলেও চরম উদাসীনতায় চলছে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। ভারত থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন পণ্য নিয়ে তিন শতাধিক ট্রাক ঢুকছে বাংলাদেশে। ভারত থেকে আসা এসব ট্রাকের কোনো স্যানিটাইজ করা হচ্ছে না। এমনকি ট্রাকের চালক ও হেলপারের জন্যও কোনো ধরনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। এ সমস্ত ট্রাক চালকরা বন্দরের মধ্যে ট্রাক রেখে অবাধে ঘুরছে যত্রতত্র। খাওয়া-দাওয়া করছে স্থানীয় হোটেলগুলোতে। আর এসব ট্রাক থেকে কোনো ধরনের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ না করেই মালামাল নামাচ্ছে স্থানীয় শ্রমিকরা। ফলে করোনা ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে শ্রমিকসহ ব্যবসায়ীরা। তবে এসবের দায় নিতে রাজি হচ্ছে না কোনো বিভাগই। কোনো ধরনের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ না করেই কার্যক্রম পরিচালনা করায় চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে বন্দর ব্যবহারকারী ও স্থানীয়রা। শিগগিরই দেশের সর্বদক্ষিণের জনপদ ভোমরা স্থল বন্দরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভারতের সাথে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ না করলে করোনা সংক্রমণ দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার আশংকা করছেন সাতক্ষীরাবাসী।

ভোমরা স্থল বন্দরের মেডিকেল ইনচার্জ আব্দুস সহিদ  জানান, স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে ভোমরাস্থল বন্দরে একটি মেডিকেল টিম নিয়োজিত রাখলেও তাদের পক্ষ থেকে পণ্যবাহী ভারত থেকে আসা ট্রাক ড্রাইভার ও হেলপারদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যাপারে তারা সেখানকার ব্যবস্থাপনা ঘাটতি থাকার কারণ উল্লেখ করেন।

 ভোমরা স্থল বন্দর ইমিগ্রেশনের ইনচার্জ বিশ্বজিত সরকার জানান, ইমিগ্রেশনের মধ্যে একটি থার্মাল স্ক্যানার রয়েছে। যার মধ্যে দিয়ে কেউ গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার শরীরের তাপমাত্রা দেখা যায়। সেটি মূলত: পাসপোর্ট যাত্রীদের জন্য ব্যবহার করা হয়। কিন্তু বর্তমানে পাসপোর্ট যাত্রী আসা যাওয়া বন্ধ থাকায় থার্মাল স্ক্যনারটি এখন ব্যবহার হচ্ছে না।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত