পায়ে ধরে কাউকে নির্বাচনে আনবে না ইসি
কত আসনে ইভিএম, সিদ্ধান্ত সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই: ইসি আলমগীর
প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০২২, ২০:৪০ | আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৫
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কতটি আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নেওয়া হবে, সে সিদ্ধান্ত সেপ্টেম্বরের ১-২ তারিখের মধ্যেই জানা যাবে। রোববার (২১ আগস্ট) নির্বাচন ভবনের নিজ অফিস কক্ষে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর সাংবাদিকদের এমন কথা বলেন।
তিনি বলেন, ইভিএম আমাদের কাছে একটা পদ্ধতি, জটিল কিছু নয়। যেখানে নির্বাচন হয়েছে কেউ চ্যালেঞ্জ করেননি। কেউ বলেনি যে ইভিএমের কারণে হেরেছি। বিশাল অভিজ্ঞতা রয়েছে আমাদের। ৬ থেকে ৭শ নির্বাচন হয়েছে। রাজনীতিবিদরা টক-শোতে পক্ষে বলেছেন, অনেকে বিপক্ষেও বলেছেন। সুবিধা-অসুবিধা দুটোই আছে। আমরা সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে আমাদের সক্ষমতা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেব।
মো. আলমগীর বলেন, ইভিএম ব্যবহার হবে। তবে, কত আসনে হবে সে সিদ্ধান্ত আমরা এখনো নিতে পারিনি, আলোচনা করছি। এই মুহূর্তে আমাদের ৭০ থেকে ৮০ আসনে ইভিএমে ভোট নেওয়ার সক্ষমতা আছে। আমরা কতগুলোতে পারব, তা সক্ষমতার ওপর নির্ভর করবে। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই ইভিএম নিয়ে সিদ্ধান্ত সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হবে।
তাহলে কি ৭০-৮০টি আসনে ইভিএম ব্যবহার হবে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, না, এই মূহূর্তে ৭০-৮০টা করার সক্ষমতা আছে। কিন্তু অনেক দল যেহেতু ৩০০ আসনেই চায়, কেউ একটাও টায় না। আমরা তো সবার কথা সমানভাবে গুরুত্ব দিতে পারব না। যারা ৩০০ আসনে চায় তাদেরটা গুরুত্ব দেওয়ারও প্রশ্নই আসে না। আমরা যেটা চাচ্ছি সক্ষমতা এবং যৌক্তিকতা; সেটা দেখেই আমরা সিদ্ধান্ত নেব। কারো মুখের দিকে তাকিয়ে সিদ্ধান্ত নেব না। সুষ্ঠু, সুন্দর ভোট করার জন্য সিদ্ধান্ত নেব।
আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, বিএনপি যে ইভিএমে ভোট কারচুপি হওয়ার কথা বলে, তার প্রমাণ দেওয়ার জন্য আমরা ডেকেছিলাম। তারা আসেনি। কাজেই তারা সঠিক কিনা আমরা সেটাও জানি না। ইউপিতে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ভোট পড়েছে। তাহলে গ্রামের মানুষ কীভাবে ভোট দিল। তার মানে এটা হলো অপপপ্রচার। আপনি তো বলবেন আমি খারাপ, এর জন্য প্রমাণ দিতে হবে। আপনারা অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু প্রমাণ দেননি। কোর্ট অভিযোগের ভিত্তিতে রায় দেয়? যারা অভিযোগ দিয়েছে আমাদের কাছে এসে তাদেরটো আমলে নিয়ে পরীক্ষা করে দেখছি। যারা আসেনি, তাদেরটা আমলে নেওয়া হয়নি।
বিএনপি যদি আলোচনায় এসে বলে নির্বাচনে যাব, তবে ইভিএম চাই না, তখন কী করবেন? এমন প্রশ্নে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, তাহলে অবশ্যই আমলে নেব। কারণ তখন আসবে, এসে বলবে যে তারা নির্বাচনে অংশ নেবে, আমরা এটাই চাই। তখন তো সেটাই আমরা নেব। কারণ তারা নিবিন্ধত রাজনৈতিক দল। আমলে না নেওয়ার তো সুযোগ নেই।
যদি একমাস-দুই মাস আগে এসে বলে ইভিএম চাই না তখন কী হবে? -এমন প্রশ্নে তিনি আরও বলেন, সরে যাওয়ার তো বিষয় না। তখন আসন হয়তো কম-বেশি হতে পারে। তারা যদি বলে এতো করেন, তখন আমরা যদি সন্তুষ্ট হই, যে কথায় যুক্তি আছে তাহলে সেটাই হবে। আর যদি দেখি যে যুক্তিযুক্ত না, তখন বলব আপনাদের দাবি গ্রহণযোগ্য না। আপনারা এমনিতে বললেই হবে না, বিষয়টা যৌক্তিক হতে হবে।
সাবেক এই ইসি সচিব বলেন, বিএনপিকে অবশ্যই আলোচনায আসতে হবে। কারণ যিনি আলোচনায় আসলেন না, কথা বললেন না, তাদের বিষয় নিয়ে বিবেচনায় নেওয়ার তো সুযোগ নেই। আমাদের সংবিধান ক্ষমতা দিয়েছে নির্বাচন করার, নির্বাচন সুষ্ঠু করার, গ্রহণযোগ্য করার। আমাদের কী সংবিধান এমন ক্ষমতা দিয়েছে, যারা নির্বাচনে আসবেন না, তাদেরকে লোভ দেখিয়ে সন্তুষ্ট করে, অনুরোধ করে, পায়ে ধরে নির্বাচনে আনেন; কোথাও বলা আছে? তাহলে আমরা কেন আনব? যদি থাকতো তাহলে করতাম।
ক্ষমতা বাড়ানোর প্রস্তাব আরপিওতে: ইসি মো. আলমগীর বলেন, আমাদের যে আরপিও আছে, তা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যথেষ্ট। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতে কিছু কিছু বিষয় স্পষ্ট করার আছে। নির্বাচন কমিশন যথেষ্ট শক্তিশালী। এই শক্তিটা যেন প্রয়োজন মতো প্রয়োগ করতে পারে সেই টুকু আমরা সংশোধনের জন্য দিয়েছি।
আরপিওতে বলা আছে কোনো গুরুতর অনিয়মে নির্বাচন স্থগিত করতে পারে কমিশন। কিন্তু নির্বাচন বাতিল করার ক্ষমতা নেই। অতীতে নির্বাচনে যা দেখেছি, যে ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়, তাহলে যদি ব্যাপক অনিয়ম হয়, তবে ভোট স্থগিত করে তো লাভ নেই, বাতিল করতে হবে। তবে এজন্য তদন্ত হবে। যদি যথেষ্ট প্রমাণ থাকে যে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে, এক্ষেত্রে কমিশন নির্বাচন বাতিল করে পুনরায় যাতে আয়োজন করতে পারে, সেই ক্ষমতাটা আমরা চেয়েছি।
তিনি বলেন, অনেকে বলেছেন এ নিয়ে আদাতল আদেশে দিয়েছেন। তবে সেটা আইনের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে হয়। আমরা সেটাই করতে চাচ্ছি। এক সময় নাকি বাতিল করার ক্ষমতা ছিল, এখন নেই।
আমার ধারণা, যখন এই ধরনের ক্ষমতা কমিশনের হাতে থাকবে, তখন যারা গায়ের জোরে যারা নির্বাচনে যেতে চায়, তারা সাবধান হবে। কারণ তাদের যে বিনিয়োগ আছে, সেটা আর তারা করতে চাইবেন না। এই প্রস্তাব জাতীয় সংসদে অবশ্যই পাস হতে হবে। এটার ক্ষমতা তো ইসির নেই। এটা পাস না হলে, বাতিল করতে পারব না। তখন প্রতিরোধমূলক আরও অনেক কৌশল আরপিওতে দেওয়া হয়েছে। সেগুলো আমাদের প্রয়োগ করতে হবে।
জনশুমারির গেজেট পেলে সীমানা পুনর্নির্ধারণ: ইসি মো. আলমগীর বলেন, জনশুমারির প্রাথমিক রিপোর্ট পেয়েছি। গেজেট এখনো পাইনি। গেজেট পেলে আমাদের আনুষ্টানিক কাজ শুরু হবে। সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের জন্য ভৌগলিক অবস্থা, জনসংখ্যা ও প্রশাসনিক সুবিধার কথা আইনে বলা আছে। সেগুলো বিবেচনায় নিয়েই আমরা সিদ্ধান্ত নেব। ব্যাপক পরিবর্তন হবে কি, হবে না তার কোনোটাই এখন বলতে পারব না। আইনে যে মানদণ্ড আছে, সেভাবেই হবে। জনসংখ্যাই যদি ঢাকায় বেড়ে থাকে, আসন বাড়বে। তবে এর সঙ্গে আবার ভৌগলিক বিষয় ও প্রশাসিক বিষয়টাও আসবে। যেমন মনে করেন একটা আসন এমন দেওয়া যাবে না, যেন দুইটা জেলার মধ্যে পড়ে। একটা আসন দুটি উপজেলায় পড়লে প্রশাসনিক অখণ্ডতা রক্ষা হয় না। এগুলো আমরা দেখব। এটার দাবি আছে। তবে, মুখে মুখে আছে। এজন্য লিখিতভাবে দাবি জানাতে হবে।
বিএনপির নির্বাচনে না আসার ঘোষণা প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছেন, কাউকে লোভ দেখিযে, সন্তুষ্ট করে, অনুরোধ করে, পায়ে ধরে নির্বাচনে আনবে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বাইরে বিভিন্ন দাবি তুললেও তা আমলে নেওয়া হবে না, বিএনপিকে ইসির সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে।
মো. আলমগীর বলেন, যারা বলছেন যে, আমরা নির্বাচন করবো না, নির্বাচনে আসবো না এবং নির্বাচনেও যাবো না; তারা কী বলছেন না বলছেন তা আলোচ্যসূচিতে রাখার সুযোগ নেই। আমাদের আলোচ্যসূচিতে রাখতে হবে যারা আলোচনায় এসেছেন। কাজেই তারা বাইরে কী বলছেন, তার ভিত্তিতে কি আলোচনা করার সুযোগ আছে!
তিনি বলেন, আমরা কমিশন যেটা মনে করি, যতগুলো নিবন্ধিত দল আছে, আমরা চাইবো সবাই আসুক, আমরা খুশি হবো। সবাই যদি আসে ‘দ্যাট উইল বি ভেরি গ্রেটফুল’। খুবই ভালো কাজ হবে। কিন্তু এখন কেউ যদি বলে, আমরা নির্বাচনে যাবো না, তাহলে নির্বাচন বন্ধ করার ক্ষমতা তো আমাদের দেওয়া হয়নি। এখন নির্বাচনে যারা আসবেন, কমিশনের দায়িত্ব হলো তাদের নিয়েই চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। তাদের কথায় গুরুত্ব দিতে হবে। কেউ যদি বলেন, আমি নির্বাচনে যাবো না, তিনি কী চাচ্ছেন নির্বাচনে, সেটা তো গুরুত্বে আনার সুযোগ নেই।
বিএনপি যদি বলে, নির্বাচনে যাবে তবে ইভিএম চাই না; তখন কী করবেন— এমন প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, তাহলে অবশ্যই আমলে নেবো। কারণ তখন আসবেন এসে বলবেন যে, আমরা নির্বাচনে যাবো, আমরা এটা চাই। তখন তো সেটাই আমরা নেবো। কারণ ওনারা নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। আমলে না নেওয়ার তো সুযোগ নাই। যেহেতু সংলাপে আসে নাই, আলোচনায় আসে নাই। কাজেই ওনাদের কথা তো রেজ্যুলুশনভুক্ত করে আলোচনা করতে পারি না।
যদি এক মাস-দুই মাস আগে এসে বলে ইভিএম চাই না তখন কী হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে মো. আলমগীর বলেন, তখন আমরা আলোচনা করবো, পরীক্ষা করবো, তখন অবশ্যই একটা সিদ্ধান্তে আসবো। কেন আসবো না?
ইভিএম থেকে তখন সরে যাবেন এমন প্রশ্নের জবাবে মো. আলমগীর বলেন, সরে যাওয়ার তো বিষয় না। তখন আসন হয়তো কম-বেশি হতে পারে। ওনারা যদি বলেন, এত কইরেন, তখন আমরা যদি কনভিন্সড হই, যে কথায় যুক্তি আছে তাহলে সেটাই হবে। আর যদি দেখি যে যুক্তিযুক্ত না, তখন বলবো আপনাদের যুক্তিটা তো গ্রহণযোগ্য হলো না। আপনারা এভাবে বললে হবে না, বিষয়টা তো লজিক্যাল হতে হবে।
সাবেক এই ইসি সচিব বলেন, বিএনপিকে অবশ্যই আলোচনায আসতে হবে। কারণ যিনি আলোচনায় আসলেন না, কথা বললেন না, তাদের বিষয় বিবেচনায় নেওয়ার তো সুযোগ নেই। যারা নির্বাচনে আসবেন আমাদের তাদের বিষয় বিবেচনায় নিয়ে চিন্তা করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সংবিধান ক্ষমতা দিয়েছে নির্বাচন করার, নির্বাচন সুষ্ঠু করার, গ্রহণযোগ্য করার। যারা নির্বাচনে আসবেন না, তাদের লোভ দেখিয়ে, সন্তুষ্ট করে, অনুরোধ করে, পায়ে ধরে নির্বাচনে আনেন; সংবিধানে কোথাও বলা আছে? তাহলে আমরা কেন আনবো? যদি থাকতো তাহলে করতাম। আমাদের দরজা তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত খোলা থাকবে। আমাদের দরজা দাওয়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, আমাদের দরজা তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত