এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে সবার অন্তর্ভুক্তিতে ভূমিকা রাখবে ডিজিটাল অর্থনীতি 

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৪ আগস্ট ২০২১, ১৭:৩০ |  আপডেট  : ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:১৩

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ‘অ্যাকসেলেরেট ডিজিটাল ইকোনমি ফর ইনক্লুসিভ ইন্টিগ্রেশন ইন এশিয়া প্যাসিফিক’ শীর্ষক ওয়েবিনারে অংশগ্রহণকারীরা অন্তর্ভুক্তিমূলক ইকোসিস্টেম তৈরি ও আঞ্চলিক সংহতির জন্য ডিজিটাল ক্ষেত্রের সুযোগগুলো কাজে লাগানোর আহ্বান জানান, যা বৈশ্বিক মহামারি মোকাবিলার এই সময় বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। 

ক্রমেই ডিজিটাল অর্থনীতিকে কোভিড-১৯ সৃষ্ট সমস্যা মোকাবিলার উপায় হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। হুয়াওয়ে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল আলোচনায় এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের সরকারি, শিল্প ও অ্যাকাডেমিক খাতের প্রতিনিধি-গন অংশগ্রহণ করেন এবং তারা বাজার, প্রযুক্তি, অন্তর্ভুক্তি এবং টেকসই বিষয়ের দৃষ্টিকোণ থেকে ডিজিটাল অর্থনীতির বিভিন্ন দিক আলোচনা করেন। 

চীনে নিযুক্ত ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত হিজ এক্সিলেন্সি জাউহারি ওরাতমাঙ্গুন তার মূল বক্তব্যে উল্লেখ করেন যে, একটি নতুন ডিজিটাল অর্থনীতি এই অঞ্চলের রূপদান করছে। তিনি বলেন, “বৈশ্বিক মহামারি চলাকালীন ডিজিটাল রূপান্তর এবং ব্যবসা ক্ষেত্রে পরিবর্তন নিয়ে আসার বিষয়গুলো ত্বরান্বিত হয়েছে। সামাজিক পুনরুদ্ধার এবং ডিজিটাল রূপান্তরের জন্য ইন্দোনেশিয়া ডিজিটাল অর্থনীতি সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। দ্রুত বর্ধনশীল ডিজিটালাইজেশনের ক্ষেত্রে হুয়াওয়ে কীভাবে কাজ করে তা দেখার জন্য আমি অপেক্ষা করছি।” 

বৈশ্বিক মহামারি চলাকালেও ডিজিটাল জ্ঞান এবং অবকাঠামোর ওপর ভিত্তি করে ডিজিটাল অর্থনীতি আঞ্চলিক জিডিপির প্রবৃদ্ধিকে শক্তিশালী করেছে। ডিজিটাল অর্থনীতি আঞ্চলিক জিডিপিতে বছরে ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার অবদান রাখবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আসিয়ান।

ডিজিটাল অর্থনীতি বাস্তবায়নের সুবিধার্থে এই অঞ্চলের দেশগুলো বাণিজ্যিক বাঁধা দূরীকরণ, ডিজিটাল কাভারেজ বৃদ্ধি ও সর্বত্র ডিজিটাল সেবার সহজলভ্যতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ভবিষ্যৎ উপযোগী রোডম্যাপ প্রকাশ করেছে। 

সামাজিকভাবে পুনরুদ্ধার ও আঞ্চলিক সংহতি ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে ডিজিটাল অর্থনৈতিক ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার ব্যাপারে কথা বলার সময় আসিয়ান সেক্রেটারিয়েটের আইসিটি ও ট্যুরিজম বিভাগের সহকারী পরিচালক ড. লি কুয়াং ল্যান বলেন, “ডিজিটাল অর্থনৈতিক ইকোসিস্টেমের বিকাশ এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে বেসরকারি খাতসহ বিভিন্ন খাতের অংশীজনদের সক্রিয় অংশগ্রহণ সম্পৃক্ত। এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের প্রচেষ্টায় হুয়াওয়ের এই আলোচনা আয়োজনের উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই।”

হুয়াওয়ে এশিয়া প্যাসিফিকের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে চেনের মতানুসারে, এই ইকোসিস্টেমের অংশ হিসেবে আসিয়ানের ডিজিটাল মাস্টার প্ল্যান ২০২৫ বাস্তবায়নের তিনটি প্রধান ক্ষেত্র – আইসিটি কানেক্টিভিটি, ট্যালেন্টের বিকাশ ও ইকোসিস্টেম তৈরিতে অবদান রাখতে হুয়াওয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই অঞ্চলে উদ্ভূত ডিজিটাল অর্থনীতির মধ্যে রয়েছে ডিজিটাল সেবার অন্তর্ভুক্তি, স্টার্টআপ তৈরির উপযোগী ল্যান্ডস্কেপ, এবং সার্কুলার ও টেকসই অর্থনীতি।  

প্যানেল আলোচনার সময় সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল কমিটি ফর প্যাসিফিক ইকোনমিক কোঅপারেশন (এসআইএনসিপিইসি)’র চেয়ারম্যান ড. ত্যান খি জিয়াপ অর্থনীতির ডিজিটালাইজেশনে সামাজিক বিচার-বিবেচনার গুরুত্বের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, “ডিজিটালাইজেশন কেবল প্রযুক্তির অগ্রগতিতেই নয়, অন্তর্ভুক্তিমূলক সংহতি অর্জনে জনসাধারণের কাছে ডিজিটালাইজেশনের মানসম্পন্ন ক্ষমতায়নও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের কাজ হচ্ছে সেবা হিসেবে জনগণকে ডিজিটাল সক্ষমতা প্রদান করা, যেখানে হুয়াওয়ের মতো বেসরকারি আইসিটি প্রতিষ্ঠানগুলো মানসম্পন্ন কানেক্টিভিটির মাধ্যমে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।”

আতেনিও দে ম্যানিলা ইউনিভার্সিটির ড. আলভিন পি. অ্যাং জনগণের ডিজিটাল জ্ঞান বৃদ্ধিতে সুযোগের সহজলভ্যতার ব্যাপারে সহমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, “ডিজিটালাইজেশনের মৌলিক উপাদানের মধ্যে শিক্ষা ব্যবস্থাকে অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে; তা প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে হোক, মধ্য বয়সে হোক কিংবা যারা ইতিমধ্যে কাজ করছেন ও জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে নিজেদের বিকশিত করার চেষ্টা করছেন, তাদের ক্ষেত্রেই হোক। তাদেরকে আমাদের সহযোগিতা করতে হবে এবং গ্রামাঞ্চলের মানুষদের অন্তত প্রাথমিক জ্ঞান প্রদানের মাধ্যমে প্রযুক্তির সাথে সামঞ্জস্য বিধানের সুযোগ করে দিতে হবে।” 

সবাইকে ডিজিটালভাবে দক্ষ করে তোলা এবং অর্থনীতির ডিজিটালাইজেশনের সময় সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার গুরুত্ব দীর্ঘদিন আগে হুয়াওয়ে অনুধাবন করেছে। বিগত কয়েক বছরে, সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় এবং এনজিও’র সাথে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে হুয়াওয়ে এই অঞ্চলের ১ লাখের বেশি মানুষের আইসিটি ক্ষমতায়নে প্রশিক্ষণ প্রদানের লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রোগ্রাম চালু করেছে। 

এমবিগেন কনসাল্টিং ফিলিপাইনের সিওও এবং কর্পোরেট ফোরসাইটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অধ্যাপক হোসে ডেকোলংগন ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বলেন, “ব্যবসার ডিজিটাল দিক উন্মোচনের ফলে সৃষ্ট সুযোগগুলো অনুধাবনের জন্য মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ডিজিটালাইজেশন সম্পর্কে জানতে হবে। এসব উদ্যোগের পাশাপাশি বড় প্রতিষ্ঠানগুলোও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। এটি কাভারেজ ও ডিজিটাল অবকাঠামোর গতির সাথে সম্পর্কিত। এখানেই হুয়াওয়ের মতো টেলিকম প্রতিষ্ঠান ও আমাদের স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।”

টেকসই ডিজিটাল অর্থনৈতিক ইকোসিস্টেমের জন্য ফাইভজি, ইন্টারনেট অব থিংস এবং ক্লাউডের মতো নতুন প্রযুক্তি ডি-কার্বোনাইজেশন এবং সার্কুলার অর্থনীতির উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে, টেকসই পরিবেশবান্ধব সমাধান, পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদন, বৈদ্যুতিক পরিবহন এবং স্মার্ট এনার্জি স্টোরেজের ক্ষেত্রে হুয়াওয়ে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেছে।

টেকসইতার এই প্রবণতা ভিয়েতনামে দেখা যাচ্ছে। ইন্সটিটিউট ফর ব্র্যান্ড স্ট্যাটেজি অ্যান্ড কম্পিটিশনের পরিচালক ড. ভো ত্রি থান বলেন, “ভিয়েতনাম চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবিলার সন্ধিক্ষণে রয়েছে। আমাদের অর্থনীতি অত্যন্ত উন্মুক্ত, যা উদ্ভাবন এবং টেকসই বিষয়ের ওপর অধিক নির্ভর করে। ভিয়েতনামের ডিজিটাল রূপান্তর আসিয়ান এবং এশিয়া প্যাসিফিকের অন্তর্ভুক্তিমূলক সংহতির সাথে যুক্ত হয়েছে, যেখানে হুয়াওয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।”

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত