আদমদীঘিতে পাঁচ মাস ধরে উধাও ফাসিস্ট আওয়ামী সরকারের দোসর তিন শিক্ষক

এখনো দৃষ্টান্তমূলক কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি

  আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯:০৬ |  আপডেট  : ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩:৩৭

নাশকতা মামলার আসামী ও একই সাথে দুটি স্কুলে চাকরি করা বির্তকিত টাকা আত্মসাতকারী প্রাইমারী শিক্ষক পাঁচ মাস ধরে উধাও। আত্মগোপন করে বার বার চিকিৎসাজনিত ছুটি নিয়ে ভালো আছে ফাসিস্ট আওয়ামী সরকারের দোসর শিক্ষক শেখ সাদি। এছাড়া ৫ আগস্টের পর থেকে উপজেলা সদরের রহিম উদ্দিন ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রহমান ও আইপিজে পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনজু আরা বেগম দীর্ঘ পাঁচ মাস যাবৎ নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত। তাদের বিরুদ্ধে এখানো পর্যন্ত উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস কোন আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। শুধু তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েই খ্যান্ত বলে জানা যায়। 

জানা যায়, গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার আওয়ামী সরকার পতনের পর থেকে নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি ছাড়াই অনুপস্থিত বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা সদরের বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক শেখ সাদি, আদমদীঘি রহিম উদ্দিন ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রহমান ও আইপিজে উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনজু আরা বেগম। আদমদীঘি বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক শেখ সাদি দিব্যি সুস্থ থেকেও বার বার চিকিৎসাজনিত ছুটি নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তিনি এ পর্যন্ত মোট তিন দফা চিকিৎসাজনিত ছুটি নিয়েছে বলে বিদ্যালয় ও উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাব খাটিয়ে এক সাথে দু’টি বিদ্যালয়ে চাকরি করাকালীন সময়ে মুক্তিযোদ্ধা স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষকদের ড্রোনেশনের প্রায় ৮০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ছিল শিক্ষক শেখ সাদি ও বিদ্যালয়ের সভাপতি আবির উদ্দিন খানের বিরুদ্ধে। কলেজের অধ্যক্ষ ও হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুমানা আফরোজ। তাদের বিরুদ্ধে অদ্যবধি জোড়ালো কোন আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় এলাকার জনগণের মাঝে ব্যাপক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। 

খোজ নিয়ে আরোও জানা যায়, সহকারি শিক্ষক শেখ সাদি গত ৫ আগস্টের পর থেকে কিছু দিন বিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিল। এরপর তার বিরুদ্ধে থানায় নাশকতা মামলা দায়ের হলে অদ্যবধি পর্যন্ত তিনি বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত। ৩ দফা চিকিৎসাজনিত ছুটির আবেদন করে বর্তমানে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন সহকারি শিক্ষক শেখ সাদি। পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার শাসনামলে শিক্ষক শেখ সাদির ক্ষমতার দাপটও ছিল চোখে পড়ার মত। 
উপজেলা সদরের রহিম উদ্দিন ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রহমান ও আইপিজে উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনজু আরা বেগম চাকরি বাঁচাতে তৎসময়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর চিকিৎসা ছুটির আবেদন করেন। কিন্তু তা আজও মঞ্জুর হয়নি। প্রধান শিক্ষক মনজু আরা বেগম আদমদীঘি উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও বগুড়া জেলা পরিষদের সদস্য ও অধ্যক্ষ আব্দুর রহমান উপজেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক। সরকার পতনের পর থেকে তারা লাপাত্তা। তিনিও চিকিৎসা ছুটি চেয়ে আবেদন করলে তা মঞ্জুর হয়নি। তারপরও তারা রয়েছেন স্ব-পদে বহাল। এদিকে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তিনি অবৈধভাবে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পাওয়ার অভিযোগ এনে গত ১২ আগস্ট বগুড়া-নওগাঁ আঞ্চলিক মহাসড়কে উপজেলা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক ও সচেতন মহলের ব্যানারে মানববন্ধন করা হয়। এরপর তার অপকর্মের দশটি অভিযোগ তুলে ধরে উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা ও কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতির কাছে একটি লিখিত আবেদন দেওয়া হয়। তাঁরা তার স্থায়ী বহিস্কার চেয়েছিলেন। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে এখনো দৃষ্টান্তমূলক কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। সহকারি শিক্ষক শেখ সাদি, প্রধান শিক্ষক মনজু আরা বেগম ও অধ্যক্ষ আব্দুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। 

আদমদীঘি বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহফুজা বেগম জানান, আমার বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক শেখ সাদি চলতি বছরে প্রথম দফায় ২৯ আগস্ট এক মাসের জন্য একটি চিকিৎসাজনিত ছুটির আবেদন করেন। এরপর ২য় দফায় ৩০ অক্টোবর থেকে পুনরায় এক মাসের জন্য আবেদন করেন। পরবর্তীতে ৩য় দফায় ডাকযোগে ছুটির আবেদন করলে আমরা তা গ্রহণ করিনি। এরপর থেকে অদ্যবধি পর্যন্ত তিনি বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত। 

আদমদীঘি উপজেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুর রহিম প্রধান জানান, আদমদীঘি বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক শেখ সাদি ৩ দফায় চিকিৎসাজনিত ছুটির আবেদন করেন। কিন্তু এ পর্যন্ত তার কোন ছুটিই মঞ্জুর হয়নি। তার চিকিৎসাজনিত ছুটির সমস্ত কাগজপত্র বগুড়া ডিপিও অফিসে পাঠানো হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আদমদীঘি থানায় নাশকতা মামলায় হয়েছে এমন প্রশ্ন করলে শিক্ষা অফিসার বলেন, এব্যাপারে আমাদের কিছু করার নাই। তিনি যদি ওই মামলায় গ্রেফতার হন তখন আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবো। 

এব্যাপারে আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুমানা আফরোজ এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন। এছাড়া প্রাইমারী স্কুলের সহকারি শিক্ষক শেখ সাদি ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিক্ষক শেখ সাদির চিকিৎসাজনিত ছুটির আবেদন ও ডাক্তার কর্তৃক ব্যবস্থাপনা পত্র উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়েছে। তার রিপোর্ট পেলে আমরা ব্যবস্থা নিব।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত