একজন আলোকিত মানুষের বিদায়
প্রকাশ: ৩ এপ্রিল ২০২২, ১৪:১৭ | আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬:৪৫
কিছু কিছু মানুষ পূর্বাহ্নে আলোচনায় না থেকেও বিশিষ সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য নন্দিত হন। তাঁরা ইতিহাসের কোনো এক বাঁকে হঠাৎ আবির্ভূত হয়ে নিজেরাই সৃষ্টি করেন নতুন ইতিহাস। আপন কর্মের দ্বারা তাঁরা যেমন নন্দিত হন, তেমনি ইতিহাসে অমর হয়ে থাকেন। এর উল্টো দিকও আছে। স্বকর্মের কারণে নিন্দিত হয়েও অমর হয়ে থাকেন কেউ কেউ। বিশ্বইতিহাসের পাতা ওল্টালে ঘৃণিত সেসব মানুষের সন্ধান পাওয়া যাবে। মীর জাফর, হিটলার, মুসোলিনী, ইয়াহিয়া খান আপন দুষ্কর্মের কারণে ইতিহাসের খলনায়ক হিসেবেই চিহ্নিত হয়ে আছেন। তাদের স্মরণে কোনো সভা হয় না, তাদের সমাধিতে কেউ যায় না শ্রদ্ধার ফুল নিয়ে। শত শত বছর পরেও তাদের নাম উচ্চারিত হয় স-ঘৃণায়। বিশ্ব ইতিহাস ঘাঁটলে আমরা এই দুই ধরনের মানুষেরই সন্ধান পাই। এক দল তাদের ইতিবাচক কর্মের দ্বারা মানুষের কাছে হিরো হিসেবে সমাদৃত হয়েছেন। আরেক দল স্বীয় অপকর্মের কারণে পরিণত হয়েছেন অ্যান্টি হিরো বা খলনায়কে।
আমাদের দেশে অনেক ক্ষণজন্মা পুরুষ জন্মগ্রহণ করেছেন, যাঁরা তাঁদের আপন কর্মের দ্বারা এদেশের মানুষের মনের মনিকোঠায় স্থান করে নিয়েছেন। তাঁদের কেউ কেউ জাতির কঠিন দুঃসময়ে আবির্ভূত হয়ে এমন ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছেন, যা তাঁকে পৌঁছে দিয়েছে অনন্য উচ্চতায়। তারা আমাদের কাছে আলোকিত মানুষ হিসেবে পরিচিত শুধু নন, সমাদৃতও বটে। তেমন একজন আলোকিত মানুষ ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ; যিনি জাতির এক কঠিন ক্রান্তিলগ্নে আবির্ভূত হয়ে ইতিহাসে জায়গা করেি নিয়েছেন।
১৯৯০ সালে তীব্র জনরোষের মুখে স্বৈরশাসক এরশাদের পতনের পর আন্দোলনরত তিন জোটের সমঝোতার ভিত্তিতে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন। তবে দায়িত্ব নেওয়ার আগে তিনি শর্ত দিয়েছিলেন, দায়িত্ব পালন শেষে তাঁকে পুনরায় তাঁর পূর্বতন পদে ফেরার ব্যবস্থা করতে হবে। সে শর্ত মেনেই তাঁকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি পদে নিয়োগ করা হয়েছিল। এ কথা সবারই মনে থাকার কথা কী প্রক্রিয়ায় সাহাবুদ্দীন আহমদ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। গণঅভূত্থধানের মুখে স্বৈরশাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ক্ষমতা ত্যাগে বাধ্য হলে প্রথমে তার উপ-রাষ্ট্রপতি ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ পদত্যাগ করেন। এরশাদ তদস্থলে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদকে উপ-রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করেন। এরপর তিনি নিজে পদত্যাগ করেন এবং বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তাঁর এই দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সূচনা হয় এক নবযুগের। স্বৈরশাসকের কবজায় পড়ে জনগণের যে ভোটাধিকার হারিয়ে গিয়েছিল, তা আবার ফিরে আসার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। সে সময় অনেকেই সন্দিহান ছিলেন, বিচারপতি সাহাবুদ্দীন স্বৈরশাসনের রেখে যাওয়া রাষ্ট্রযন্ত্র বহাল থাকার পরেও একটি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সক্ষম হবেন কি না। তবে নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে সততা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে পারলে যে অসম্ভবকেও সম্ভব করে তোলা যায়, অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ তার জ্বলন্ত উদাহরণ।
অত্যন্ত কঠিন এক সময়ে রাষ্ট্রের স্টিয়ারিং হাতে নিয়েছিলেন বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ। লাইনচ্যুত বাংলাদেশ নামের যানটিকে সঠিক পথে পরিচালিত করে কাক্সিক্ষত গন্তব্যে পৌঁছা ছিল তাঁর জন্য এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। বলা নিষ্প্রয়োজন, তিনি সে চ্যালেঞ্জে জয়ী হয়েছিলেন। এর পেছনে প্রধান নিয়ামক ছিল তাঁর ব্যক্তিগত সততা, নির্মোহ দৃষ্টিভঙ্গী এবং সংবিধানের প্রতি অবিচল থাকার নীতি। আইনের বাইরে তিনি এক চুলও হাঁটেন নি কখনো। যেমন তাঁর সমগ্র কর্মজীবনে, তেমনি অস্থায়ী এবং পরবর্তীতে পূর্ণ মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময়। আইন ও নিয়মের প্রতি তাঁর নিষ্ঠা ও কঠোরতার একটি ঘটনা এখানে উল্লেখ না করে পারছিনা। ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচন প্রক্রিয়া তখন জোরেশোরে শুরু হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আবদুর রউফ। ওই কমিশনের অন্যতম একজন কমিশনার ছিলেন বিচারপতি নঈম উদ্দীন আহমেদ। এক রাতে নঈম উদ্দীনের কাছে একটি টেলিফোন আসে। ফোনকলটি ছিল বঙ্গভবনের একজন উচ্চ পদস্থ সামরিক কর্মকর্তার। তিনি নির্বাচন কমিশনার নঈম উদ্দিীন আহমদকে বললেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের রিটার্নিং অফিসার হিসেবে তার পছন্দের একজনকে নিয়োগ দিতে। নঈম উদ্দীন সাহেব ওই কর্মকর্তাকে শুধু বললেন, ‘ইলেকশন কমিশনার কি আমি, না আপনি’? এটুকু বলেই তিনি টেলিফোন রেখে দিলেন। পরদিন বিচারপতি নঈম উদ্দীন আহমদ ঘটনা জানালেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আবদুর রউফকে। ওইদিনই প্রধান নির্বাচন কমিশনার অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়ে দেখা করলেন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের সঙ্গে। সব শুনে তিনি তাৎক্ষণিক ওই সামরিক কর্মকর্তাকে বঙ্গভবন থকে প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করেন। সততা যাদের চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য, এমন দৃঢ় সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ নেওয়া একমাত্র তাদের পক্ষেই সম্ভব।
এটা সবাই একবক্যে স্বীকার করেন যে, বাংলাদেশে এ যাবতকালে অনুষ্ঠিত নির্বাচন সমূহের মধ্যে ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচন ছিল সবচেয়ে অবাধ, নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু। নির্বাচনটি অবিতর্কিতও ছিল। যদিও সে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী এবং পরাজিত কোনো কোনে পক্ষ ‘সুক্ষ্ম কারচুপির’ ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলেছিল। তবে সে অভিযোগকে কেউ আমলে নেয়নি। সদ্য স্বৈরশাসনমুক্ত দেশে অমন একটি গ্রহণযোগ্য নির্বচন অনুষ্ঠান ছিল বিরাট চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। সে চ্যালেঞ্জই নিয়েছিলেন বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ। চরিত্রিক দৃঢ়তা তাঁকে এ ক্ষেত্রে সাফ্যল্য লাভে সহায়তা করেছে।
শুধু একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানই নয়, অন্য একটি সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপের জন্যও বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি থাকাকালে তিনি দেশে ‘কালো আইন’ হিসেবে পরিচিত ‘বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪’-এর সংবাদপত্র সম্পর্কিত অংশটি রহিত করেছিলেন। এ সম্পর্কে ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি লতিফুর রহমান তাঁর ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দিনগুলি ও আমার কিছু কথা’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ-এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজ ছিল ঝঢ়বপরধষ চড়বিৎ অপঃ, ১৯৭৪-এ সংবাদপত্র সম্পর্কিত বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে রহিত করা। আইনটি পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের সংবাদপত্র সত্যিকার অর্থে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ-এর তত্ত্বাবধায়ক সরকার অবিস্মরণীয় হয়ে আছেন।’(র্পষ্ঠা-২৬০)।
স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ১৯৯০ সালের গণঅভ্যূত্থান এবং তৎপরবর্তী ঘটনাবলী অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। নয় বছরের স্বৈরশাসনের কবল থেকে মুক্ত হওয়া বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অভিযাত্রা শুরুর ওই সময়ে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন ছিল অপরিহার্য। সে কঠিন দায়িত্ব অর্পিত হয়েছিল বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর। নির্দ্বিধায় বলা যায়, তিনি এবং তাঁর সরকার সে দায়িত্ব অত্যন্ত সূচারুরূপে পালন করেছেন। রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, সেদিন একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের সরকার যদি সফল ন হতো, তাহলে বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরায় মুখ থুবড়ে পড়ার সমূহ আশঙ্কা ছিল। তবে এটাও সত্যি যে, স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশে গণতন্ত্রের যে সাবলীল যাত্রা সেদিন শুরু হয়েছিল, পরবর্তীতে রাজনৈতিক নেতৃত্বের সংকীর্ণতা ও উদারতার অভাবে তা কাঙিক্ষত বিকাশ লাভ করতে পারেনি। এ ব্যর্থতা এককভাবে কোনো এক পক্ষের নয়। বরং যারা দেশের রাজনীতির অভিভাবক, তারা এর দায় এড়াতে পারবেন না।
নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামে ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করা সাহাবুদ্দীন আহমদ আক্ষরিক অর্থেই এক বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী ছিলেন। পড়াশোনা শেষে ১৯৫৪ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন তিনি। লাহোর সিভিল একাডেমিতে প্রশিক্ষণ শেষে যোগ দেন গোপালগঞ্জ মহকুমা প্রশাসক (এসডিও) পদে। ১৯৬০ সালে তাকে জুডিসিয়াল সার্ভিসে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। নিযুক্ত হন পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্টের রেজিষ্ট্রার পদে। ১৯৭২ সালে তিনি হাইকোর্টের বিচারপতি পদে নিয়োগ পান এবং ১৯৮০ সালে আপীল বিভাগের বিচারপতি হন। ১৯৯০ সালে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯৯৫ সালে অবসর গ্রহণ পর্যন্ত তিনি এ পদে বহাল ছিলেন।
পেশাগত দায়িত্বের বাইরেও বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ বিভিন্ন সময়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৮৩ সালের ১৪ এবং ১৫ ফেব্রুয়ারিতে এরশাদ সরকারের শিক্ষানীতির প্রতিবাদে ছাত্র বিক্ষোভে পুলিশ গুলি চালিয়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে হত্যা করে। সেই ঘটনার তদন্তের জন্য যে তদন্ত কমিশন গঠিত হয়, বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ তাার চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৭৮ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ রেডক্রস সোসাইটির (বর্তমানে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। এ পদে থাকাকালীন তিনি দেশের বেশ কয়েকটি স্থানে রেডক্রসের অর্থায়নে হাসপাতাল স্থাপনে উদ্যোগীর ভূমিকা পালন করেন। ১৯৮৪ সালে তিনি জাতীয় বেতন কমিশনের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের কর্মময় জীবনের প্রতি লক্ষ্য করলে একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান কর্মবীরের প্রতিচ্ছবিই ভেসে ওঠে। দীর্ঘ কমজীবনে যখন যেখানে নিয়োজিত হয়েছেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছেন, সেখানোই সর্বোচ্চ সততা ও নিষ্ঠার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। নাটোরের এসডিও থাকাকালীন একটি পারিবারিক ঘটনায় তিনি তার নিকট স্বজনকেও আইনের আওতায় আনতে দ্বিধা করেন নি। রাষ্ট্রপতিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের র্শীর্ষ পদে দায়িত্ব পালন করলেও খুবই সহজ-সরল সাধারণ জীবন যাপন করতেন বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ। আমার বন্ধু লেখক-প্রকাশক সাঈদ বারী তেমনি একটি ঘটনার কথা বলেছেন। সাহাবুদ্দীন আহমদ রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী তাঁর একটি বই উৎসর্গ করেছিলেন বিচাপতি সাহাবুদ্দীন আহমদকে। বইটি রাষ্ট্রপতিকে দেওয়ার জন্য প্রকাশক সাঈদ বারীসহ বঙ্গভবনে গিয়েছিলেন অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী । সেখানে তাদেরকে আপ্যায়িত করা হয়েছিল বিস্কুট ও চা দিয়ে। সেদিন রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন একজন সাধারণ মানুষের মতো চা’য়ে বিস্কুট চুবিয়ে খেয়েছিলেন মেহমানদের সামনেই। বঙ্গভবনের গাছের আম, নারিকেল বিক্রি করে তিনি সে টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিতেন। যে সময়ে আমরা রাষ্ট্রীয় অর্থ হাতিয়ে বিত্তশালী হওয়ার মচ্ছব দেখি, সে সময়ে একজন বিচারপতি সাহাবুদ্দীন সত্যি বিরল ব্যতিক্রম। প্রকৃত অর্থেই তিনি ছিলেন একজন আলোকিত মানুষ।
এ পৃথিবীতে মানুষ আসে মানুষ যায়। কিন্তু সবাই অমর হয় না। জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা র’বে- কবির এ বাক্য চিরন্তন সত্য। তবে মানুষ মরে গেলেও কিছু কিছু মানুষ মৃত্যুর পরও বেঁচে থাকেন। মনীষীরা বলে গেছেন, কর্মই মানুষকে মৃত্যুর পরেও বাঁচিয়ে রাখে। রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ সেই সব মানুষদের একজন, যিনি তাঁর কর্মগুণে বেঁচে থাকবেন চিরকাল। সততার প্রতীক এই মানুষটি স্রষ্টার অমোঘ নিয়মে গত ২২ মার্চ বিরানব্বই বছর বয়সে এই নশ্বর পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। আমি এই মহান মানুষটির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। প্রার্থনা করি, আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতবাসী করেন।
লেখকঃ সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত