ঈদের পর করোনার আরেকটি ঢেউয়ের আশঙ্কা!

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২২, ০৭:৪৬ |  আপডেট  : ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫:০৪

 

দেশে বর্তমানে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শূন্যের কাছাকাছি। কিন্তু ঈদের পরে আবারও পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। সংক্রমণের বৈশিষ্ট্য এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেশে করোনার আরেকটি ঢেউয়ের আশঙ্কা করছেন তারা। পাশাপাশি স্থায়ী টিকা আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত এ আশঙ্কা থাকবে বলেও তারা জানান।

সম্প্রতি এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার কিছু দেশে নতুন করে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশ ভারতে এই সংক্রমণের হার অনেক বেশি। এছাড়া এশিয়ার জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, ইরান, ইন্দোনেশিয়া এবং ইউরোপের দেশ জার্মানি, রাশিয়া, ফ্রান্স, ইতালি, গ্রিস, হাঙ্গেরিতে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি থেমে নেই যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ব্রাজিল, মেক্সিকো, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ লাতিন আমেরিকা ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে। তবে বাংলাদেশে এখনও পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ১৯ জন।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে সংক্রমণ খুব কমে গেলেও করোনা ভাইরাস নির্মূল হয়ে যায়নি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংক্রমণ পরিস্থিতি থেকে এটা সহজেই অনুধাবন করা যায়। স্থায়ী টিকা নিলে সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। এরকম টিকা আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত ঝুঁকি থেকেই যাবে।

তাদের মতে, যে টিকা আবিষ্কার হয়েছে তার প্রতিরোধ ক্ষমতা তিন মাস পর থেকে কমতে থাকে। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, একটি ঢেউ শেষ হওয়ার তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে আরেকটি ঢেউ আসে। ইতোমধ্যে দেশে কোভিডের অমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের ঢেউ শেষ হয়েছে তিন মাস হলো। আবার যারা টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন তাদের অধিকাংশের ৪-৫ মাসের বেশি সময় পার হয়েছে। তাদের অধিকাংশ এখনও বুস্টার বা তৃতীয় ডোজ নেননি।

এছাড়া করোনা নির্মূল না হলেও গত কয়েক মাসে মানুষের চলাফেরা স্বাভাবিকভাবেই চলছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিয়ে কোনো সচেতনতা নেই। আর আসন্ন ঈদে দেশের জনসংখ্যার একটি বিরাট অংশের স্থানান্তর ঘটতে শুরু করেছে। এসব দিক বিশ্লেষণ করে ঈদের পর থেকে সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

তাদের মতে, যতদিন এই ভাইরাসের স্থায়ী টিকা আবিষ্কার না হবে ততদিন পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং যে টিকা বাজারে এসেছে তা নিতে হবে। স্থায়ী টিকা আসতে আরও সময় লাগতে পারে। বিষয়টি নিয়ে প্রতিনিয়ত গবেষণা চলছে। শুধু তাই নয়, বুস্টার ডোজ নেওয়ার পর আরও কোনো ডোজ নিতে হবে কিনা তা নিয়েও গবেষণা চলছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ডিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, আসন্ন ঈদে অনেক মানুষ যাতায়াত করবে। অনেকে দেশের বাইরে যাচ্ছেন, ফিরছেন। বিদেশ থেকেও অনেকে দেশে আসছেন। সংক্রমণ যে আবার বাড়বে না এ কথা বলা যায় না। এজন্য এখন থেকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সবাইকে বুস্টার ডোজ নিতে হবে। স্থায়ী টিকা না আসা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করেই চলতে হবে, মাস্ক পরতে হবে। বুস্টারের পর কোনো ডোজ নিতে হবে কিনা তা নিয়ে গবেষণা চলছে।

এ বিষয়ে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক হোসেন বলেন, দেখা যাচ্ছে সংক্রমণের একটি ঢেউ শেষ হওয়ার তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে আরেকটি ঢেউ আসে। টিকার কার্যকারিতাও অনেক দিন থাকে না। একটি টিকা নেওয়ার তিন মাস পর এর কার্যকারিতা কমতে থাকে। সেদিক থেকে হিসাব করলে ঈদের পরই আমাদের দেশে আরেকটি ঢেউ আসতে পারে।

তিনি আরও বলেন, প্রতিবেশী দেশ ভারত ও চীনে করোনা সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। এছাড়াও ইউরোপ এবং আমেরিকার বিভিন্ন দেশে সংক্রমণ বাড়ছে। টিকা নেওয়ার কারণে ক্ষতি কম হবে, কিন্তু সংক্রমণ তো ঠেকাতে হবে। আবার নতুন ধরনও দেখা যাচ্ছে। নতুন ধরনের জন্য টিকা কি হবে, একটি টিকা নিলেই যাতে সমাধান হয়ে যায় সে ধরনের টিকা আবিষ্কারের চেষ্টা চলছে। তবে স্থায়ী সমাধানের জন্য টিকা আসতে সময় লাগবে। এখন সামনের পরিস্থিতি ঠেকাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং বুস্টার ডোজ নেওয়াই সমাধান।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত