ইসরায়েলের ক্ষোভকে পাত্তা না দিয়ে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিল স্পেন, নরওয়ে ও আয়ারল্যান্ড
প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৪, ১৯:১৩ | আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩:৩০
ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে স্পেন, নরওয়ে ও আয়ারল্যান্ড। তিন দেশের সরকারের পক্ষ থেকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। এই ঘোষণার মাধ্যমে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া দেশের সংখ্যা বেড়ে দায়িয়েছে ১৪৭টি।মঙ্গলবার (২৮ মে) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।
স্পেনের স্বীকৃতি
ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে স্পেন। ‘ন্যায়বিচারের দিকে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ এবং শান্তি অর্জনের একমাত্র পথ’ হিসেবে এই স্বীকৃতি দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজে।মঙ্গলবার (২৮ মে) মন্ত্রিসভা ভোটের আগে পূর্ব ঘোষিত পরিকল্পনা অনুযায়ী ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।
স্প্যানিশ সরকারের মুখপাত্র পিলার আলেগ্রিয়া ঘোষণা করেছেন, মন্ত্রিসভা ‘ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে’, যার ‘একটি উদ্দেশ্য ছিল: ইসরায়েলি এবং ফিলিস্তিনিদের শান্তি অর্জনে সহায়তা করা।’
স্প্যানিশ প্রধানমন্ত্রী এই পদক্ষেপকে ‘একটি ঐতিহাসিক ন্যায়বিচারের বিষয়’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘শান্তি প্রতিষ্ঠার একমাত্র পথ হলো ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, ইসরায়েল রাষ্ট্রের পাশাপাশি বসবাস করা।’
আয়ারল্যান্ডের স্বীকৃতি
ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি বিবৃতি দিয়েছে আয়ারল্যান্ড সরকার।মঙ্গলবার (২৮ মে) সকালে মন্ত্রিসভার বৈঠকে সরকার এই স্বীকৃতির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
এতে বলা হয়, ‘সরকার ফিলিস্তিনকে একটি সার্বভৌম ও স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং ডাবলিন ও রামাল্লার মধ্যে পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে সম্মত হয়েছে। রামাল্লায় আয়ারল্যান্ডের পূর্ণ দূতাবাস স্থাপনের সঙ্গে সেখানে একজন রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করা হবে।’
নরওয়ের স্বীকৃতি
নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসপেন বার্থ ইদে বলেন, ‘৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের সবচেয়ে সাহসী রক্ষকদের মধ্যে একটি নরওয়ে।’
এখন পর্যন্ত বিশ্বের যেসব দেশ ফিলিস্তিনকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে—
২০২৪ সালে স্বীকৃতি দিয়েছে যেসব দেশ
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন সময়ে বিশ্বের ১৪৭ দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তাদের মধ্যে ২০২৪ সালে স্বীকৃতি দেওয়া দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে- বাহামা, ত্রিনিনাদ অ্যান্ড টোবাগো, জামাইকা অ্যান্ড বারবাডোজ। এই তালিকায় এখন যুক্ত হলো স্পেন, নরওয়ে ও আয়ারল্যান্ড।
২০১১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে স্বীকৃতি দিয়েছে যেসব দেশ
২০১১ সালে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় আইসল্যান্ড, চিলি, গায়ানা, পেরু, সুরিনাম, উরুগুয়ে, লেসোথো, দক্ষিণ সুদান, সিরিয়া, লাইবেরিয়া, এল সালভাদোর, হন্ডুরাস, সেন্ট ভিনসেন্ট এবং গ্রেনাডাইনস, বেলিজ, ডোমিনিকা, অ্যান্টিগুয়ে এবং বারবুডা, গ্রেনাডা।
২০১২ সালে থাইল্যান্ড, ২০১৩ সালে গুয়েতেমালা, হাইতি, ভ্যাটিকান সিটি, ২০১৪ সালে পশ্চিম ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে সুইডেন, ২০১৫ সালে সেইন্ট লুসিয়া, ২০১৮ সালে কলোম্বিয়া, ২০১৯ সালে সেইন্ট কিটিস এবং নেভিস ও ২০২৩ সালে মেক্সিকো ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
২০০০ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে স্বীকৃতি দিয়েছে যেসব দেশ
অসলো চুক্তির অধীনে ১৯৯৯ সালের মধ্যে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা থাকলেও পরে আর তা হয়ে ওঠেনি। তবে ২০০৪ সালে পূর্ব তিমুর, ২০০৫ সালে প্যারাগুয়ে, ২০০৬ সালে মন্টিনিগ্রো, ২০০৮ সালে কোস্টারিকা, লেবানন, আইভরি কোস্ট, ২০০৯ সালে ভেনিজুয়েলা, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র ও ২০১০ সালে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া ও ইকুয়েডর ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়।
১৯৮৯ থেকে ১৯৯৯ সালের মধ্যে স্বীকৃতি দিয়েছে যেসব দেশ
১৯৯৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর প্রথম অসলো চুক্তি সই হয়। চুক্তির আওতায় ইসরায়েল-ফিলিস্তিন উভয় পক্ষই কয়েক দশক ধরে চলে আসা দ্বন্দ্বের অবসান ঘটানোর অঙ্গীকার করে। ১৯৯৫ সালে দ্বিতীয় অসলো চুক্তি সই হয়। সেখানে ইসরায়েলের পাশাপাশি ফিলিস্তিনকেও রাষ্ট্র হিসেবে আত্মনিয়ন্ত্রণ আনার কথা বলা হয়।
ইসরায়েলের সঙ্গে নতুন আলোচনা প্রত্যাখ্যান হামাসের
তারও আগে ১৯৮৮ সালের ১৫ নভেম্বর প্রথম ইন্তিফাদার শুরুতে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের চেয়ারম্যান ইয়াসির আরাফাত ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন, যার রাজধানী ছিল জেরুজালেম।
আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্স থেকে ওই ঘোষণা দিয়েছিলেন ইয়াসির আরাফাত। আর প্রথম দেশ হিসেবে আলজেরিয়া-ই আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়।
আলজেরিয়া স্বীকৃতি দেওয়ার পর ওই বছরেই ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় বাহরাইন, ইন্দোনেশিয়া, ইরাক, কুয়েত, লিবিয়া, মালয়েশিয়া, মৌরিতানিয়া, মরক্কো, সোমালিয়া, তিউনিসিয়া, তুরস্ক, ইয়েমেন, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, কিউবা, জর্ডান, মাদাগাস্কার, মাল্টা, নিকারাগুয়া, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, ইউনাইটেড আরব আমিরাত, সার্বিয়া, জাম্বিয়া, আলবেনিয়া, ব্রুনাই, জিবুতি, মরিশাস, সুদান, সাইপ্রাস, চেক প্রজাতন্ত্র, স্লোভাকিয়া, মিশর, গাম্বিয়া, ভারত, নাইজেরিয়া, সেশেলস, শ্রীলঙ্কা, নামিবিয়া, রাশিয়া, বেলারুশ, ইউক্রেন, ভিয়েতনাম, চীন, বুরকিনা ফাসো, কোমোরোস, গিনি, গিনি-বিসাউ, কম্বোডিয়া, মালি, মঙ্গোলিয়া, সেনেগাল, হাঙ্গেরি, কেপ ভার্দে, উত্তর কোরিয়া, নাইজার, রোমানিয়া, তানজানিয়া, বুলগেরিয়া, মালদ্বীপ, ঘানা, টোগো, জিম্বাবুয়ে, চাদ, লাওস, সিয়েরা লিওন, উগান্ডা, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, অ্যাঙ্গোলা, মোজাম্বিক, সাও টোমে এবং প্রিন্সেপ, গ্যাবন, ওমান, পোল্যান্ড, গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, বতসোয়ানা, নেপাল, বুরুন্ডি, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, ভুটান, পশ্চিম সাহারা।
তাছাড়া ১৯৮৯ সালে রুয়ান্ডা, ইথিওপিয়া, ইরান, বেনিন, কেনিয়া, নিরক্ষীয় গিনি, ভানুয়াতু, ফিলিপাইন, ১৯৯১ সালে ইসোয়াতিনি, ১৯৯২ সালে কাজাখিস্তান, আজারবাইজান, তুর্কমেনিস্তান, জর্জিয়া, বসনিয়া এবং হার্জেগোভিনা, ১৯৯৪ সালে তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, পাপুয়া নিউ গিনি, ১৯৯৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা, কিরগিজস্তান ও ১৯৯৮ সালে মালাউই ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত