ইরান ও পাকিস্তান সংঘাত কি যুদ্ধে রূপ নেবে?
প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০২৪, ১৪:০৪ | আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮:০০
পাকিস্তানের ভেতরে ‘জঙ্গি গোষ্ঠীর ঘাঁটি’ লক্ষ্য করে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় অনেকেই ‘বিস্মিত’ হয়েছেন। এর একটি বড় কারণ হচ্ছে, এ দুটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিবেশী দেশকে আপাতদৃষ্টিতে পরস্পরের ‘ভ্রাতৃপ্রতিম ও বন্ধু’ বলেই মনে হয়। কিন্তু বিষয়টি পুরোপুরি সেরকম নয়। পাকিস্তানের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক সব সময় চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে গেছে। যদিও ২০২১ সাল থেকে এই সম্পর্ক অনেকটাই স্থিতিশীল।
পাকিস্তান ও ইরানের মধ্যে ঐতিহাসিক কিছু বিরোধ রয়েছে। এর একটি বড় কারণ হচ্ছে ধর্ম। ইরান মূলত শিয়া মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র। অন্যদিকে পাকিস্তান হচ্ছে সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠ। বিভিন্ন সময় শিয়া-সুন্নি উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে নানা হত্যাকাণ্ডও ঘটেছে। উদ্বেগ রয়েছে সীমান্ত অঞ্চলে জঙ্গি কর্মকাণ্ড নিয়েও। ইরান-পাকিস্তান উভয়ে দীর্ঘদিন ধরে একে অপরের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ করে আসছে। ইরানের একটি প্রদেশ সিস্তান-বেলুচিস্তান। এর ঠিক পাশেই রয়েছে পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশ। ব্রিটিশ শাসনামলের শেষের দিকে পাকিস্তানের বেলুচিস্তানকে দুটি অংশে ভাগ করা হয়, যার একটি অংশ ইরানের অধীনে চলে যায়।
তেহরান মনে করে, পাকিস্তানের বেলুচিস্তান থেকে জঙ্গিরা এসে ইরানের সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশে হামলা করছে। অন্যদিকে পাকিস্তানও মনে করে, বালুচ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন জোগাচ্ছে ইরানের গোয়েন্দারা। পাকিস্তান অংশে বালুচরা আলাদা একটি রাষ্ট্র গঠন করতে চায়। গত বছর ইরানের ভেতরে বেশ কয়েকটি জঙ্গি হামলা হয়। সবশেষ গত ডিসেম্বরে একটি পুলিশ স্টেশনে অতর্কিত হামলায় ১১ নিরাপত্তাকর্মী নিহত হন। ইরানের কর্মকর্তারা দাবি করেছিলেন, এসব হামলাকারী পাকিস্তান থেকে এসেছিল। একইভাবে, পাকিস্তানের ভেতরেও গত বছর দুটি আক্রমণ হয়, যেখানে বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা মারা যান। এই হামলার উত্পত্তিস্থল ইরানের ভেতরে ছিল বলে দাবি করে পাকিস্তান। ফলে পাকিস্তান ও ইরানের সীমান্তের ভেতরে ‘জঙ্গি কর্মকাণ্ড’ দেশ দুটির জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে শিয়া-সুন্নি বিরোধ। পাকিস্তানে বিভিন্ন সময় শিয়াদের লক্ষ্য করে হামলা কারা হয়। এটি ইরানের মধ্যে একটি চাপা ক্ষোভ তৈরি করেছে বহু দিন ধরে।
কুয়ালালামপুরে মালয় ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও সমর বিশেষজ্ঞ সৈয়দ মাহমুদ আলী মনে করেন, নানা চাপের কারণে পাকিস্তান ও ইরানের মধ্যে সম্পর্ক দৃশ্যত ভালো মনে হতো। কিন্তু ভেতরের পরিস্থিতি আসলে সেরকম নয়। তিনি বলেন, ইরান ও পাকিস্তান পরস্পরের মধ্যে একটি ‘রাজনৈতিক সম্পর্ক’ বজায় রেখে চলেছে।
সম্প্রতি ইসরাইলের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের ‘গোপন আস্তানা’ টার্গেট করে সিরিয়ার ইদলিব এবং ইরাকের কুর্দিস্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। এছাড়া, লোহিতসাগরে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্কিত জাহাজে হুতি বিদ্রোহীরা সেসব হামলা চালাচ্ছে, তাতে ইরানের সংযোগ রয়েছে বলে মনে করে পশ্চিমারা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, গত কয়েক দিনে ইরান একাধিক হামলায় জড়িয়েছে কেন? কয়েক বছর যাবত্ ইরানের বিরুদ্ধে নানা তত্পরতা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্র ইসরাইল। ইরানের ভেতরে-বাইরে অনেক আক্রমণ হয়েছে। ইরানের শীর্ষ কমান্ডার কাশেম সোলাইমানিকে যুক্তরাষ্ট্র হত্যা করেছে ইরাকের মাটিতে।
অন্যদিকে, ইরানের ভেতরে দেশটির শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী আহমেদ ফখরেজাদেকে হত্যা করা হয়। এজন্য ইরান অভিযুক্ত করে ইসরাইলকে। তাছাড়া পাকিস্তান সীমান্তেও ইরানবিরোধী নানা তত্পরতা চলছে। মাহমুদ আলীর মতে, ইরান মূলত একটি বার্তা দিতে চাচ্ছে। তারা তাদের সাধ্যমতো লড়াই করবে।
ই
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত