ইউরোপযাত্রার নেপথ্যে দালাল এজেন্সিদের দৌড়াত্ম বন্ধ করা প্রয়োজন
প্রকাশ: ২৮ মে ২০২১, ০৯:৪৬ | আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৪
প্রতি বছর ভূমধ্যসাগরে সমুদ্রপথে অবৈধভাবে ইউরোপ ভ্রমনের সময় প্রচুর অভিবাসির সলিল সমাধি ঘটে। ইউরোপের স্বপ্নে বিভোর এইসব প্রবাসিরা মৃত্যুকে ভয় করে না। ইউরোপের প্রবেশের জন্য মরিয়া বাংলাদেশি অভিবাসিরা ভয়ংকর সাগরপথ পাড়ি দেন।
অনেক নাম না বাংলাদেশি অভিবাসি এই সাগরপথে মৃত্যুবরন করেছেন। কিন্ত কারা তাদেরকে এই মৃত্যুমুখে ঠেলে দিচ্ছেন? অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঢালাওভাবে বাংলাদেশি অভিবাসিদের দায়ী করেন। যারা এই দালালির ব্যবসা সফলভাবে বাংলাদেশ থেকে করে যাচ্ছেন তাদের কোন ধরনের বিচারের কাঠগড়ায় নিতে পেরেছেন?
মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি পয়েন্ট থেকে সাগরপথে আফ্রিকা এশিয়ার অভিবাসিরা অবৈধভাবে ইউরোপ প্রবেশের চেষ্টা করেন।
প্রচুর বাংলাদেশি অভিবাসি এই তালিকায় রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে দালালচক্রের বৃহৎ একটি নেটওয়ার্ক রয়েছে। এই নেটওয়ার্ক অনেক শক্তিশালি সেটি নিশ্চিত। কিন্ত আমার প্রশ্ন হচ্ছে এই দালাল নেটওয়ার্ক কি বাংলাদেশ সরকার থেকেও অনেক শক্তিধর? বাংলাদেশ থেকে যারা এই দালালি করেন তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে সমস্যা কোথায়?
দাসপ্রথার কথা শুনেছিলাম প্রাচীনকালে কিন্ত আধুনিক যুগেও যুদ্ধবিধ্বস্ত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের দাসপ্রথার মতো কেনাবেচা করা হয়। কিন্ত বাংলাদেশের দালালরা কোম্পানিতে চাকুরির কথা বলে প্রতারনা করেন। এই বিষয় নিয়ে কোন ধরনের তদন্ত তদারকি করার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কর্মকাণ্ড চোখে পরে না।
ধার দেনা করে জমি বেচে একজন নিরীহ প্রবাসি দালাল এবং এজেন্সির দেওয়া মিথ্যা স্বপ্নে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে পাড়ি জমান। কিন্ত আসার পর তাদেরকে দাস বানিয়ে দেওয়া হয়। অসহায় প্রবাসিরা আর্থিক স্বচ্ছলতা এবং ধার দেনা পরিশোধের জন্য সকল নির্যাতন সহ্য করেও থেকে যান। কিন্ত দিনশেষে যে দালাল এজেন্সিগুলো প্রতারণা করলো তারা কোটিপতি হন।
অনেকেই বাংলাদেশ থেকে যুদ্ধবিধ্বস্ত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে আসেন অবৈধভাবে ইউরোপ প্রবেশের জন্য। বাংলাদেশ থেকেই দালাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে নিরীহ প্রবাসিদের মধ্যপ্রাচ্যে অন্য দালালের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই অসহায় প্রবাসিদের জিম্মি করে মোটা অংকের টাকা আদায় করেন দালালরা। লিবিয়ায় বাংলাদেশিদের উপর নির্মম হত্যাকাণ্ডের কথা আপনারা সবাই অবগত আছেন।
লিবিয়ার ঘটনার পর বাংলাদেশ সরকার কতটুকু সর্তকতা অবলম্বন করেছেন? কিছুই না হয়তবা বাংলাদেশে গ্রেফতার দালালগুলো ইতিমধ্যে জামিনও পেয়ে গিয়েছেন।
প্রবাসিদের রেমিট্যান্স নিয়ে খুব গর্ব করা হয়। কষ্ট লাগে যখন প্রবাসিদের অবৈধযাত্রায় সাগরপথে সলিল সমাধি হলে উলটো তাদেরকেই দোষারোপ করা হয়। অথচ যে দালালরা গ্রামের এইসব নিরীহ সহজ সরল মানুষগুলোকে মৃত্যুমুখে ঠেলে দিচ্ছেন তাদের সঠিক বিচার হচ্ছে না।
রেমিট্যান্স অর্জনের জন্য গর্ববোধ না করে অবৈধ দালালদের নেটওয়ার্ক ধ্বংস করুন। সারাদিন খালি প্রবাসিবান্ধব বলে গলা ফাটিয়ে কিছু হবে না। লেখক-প্রবাসী সাংবাদিক
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত