আ.লীগের আমলে গুম-নিখোঁজদের ফিরিয়ে দিতে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম
প্রকাশ: ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫:৫৪ | আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭:৫৫
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিখোঁজ ও গুম ব্যক্তিদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া এবং ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে বাংলাদেশ গুম পরিবার।
সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে গুম পরিবারের স্বজনরা এ দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ গুম পরিবারের প্রধান সমন্বয়ক ও লেক্সাস গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ বেল্লাল হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৬ সালে ১০ অক্টোবর র্যাব-১ আমাকে ধরে নিয়ে যায়। এক মাস ১০ দিন আমার ওপর লোমহর্ষক নির্যাতন চালিয়েছে। মানুষ মানুষকে এভাবে নির্যাতন করতে পারে না। আমি যতদিন সেখানে ছিলাম, শুধু কান্নার আওয়াজ পেয়েছি। আর মাঝেমধ্যে ঝিঁঝি পোকার শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দ ছিল না। সেখানে ছোট ছোট ঘর। বাইরের কোনো আওয়াজ আসতো না। তাদের নির্যাতনের প্রভাবে মা-বাবা বলে শুধু চিৎকার করত সবাই। অনেক শর্ত দিয়ে কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে আমাকে ছাড়া হয়েছিল।
লিখিত বক্তব্য তুলে ধরে মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, গত ২৭ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে। সেই গেজেটে ৪৫ দিনের মধ্যে তদন্ত করে মন্ত্রণালয়ে একটি তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, ১৫ দিন পরও তারা কোথায় বসবে, কীভাবে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করবে আমরা কিছুই জানতে পারিনি। একাধিকবার যোগাযোগ করার পরও তাদের থেকে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, জল্লাদের আয়নাঘর কোথায় কোথায় বানানো হয়েছে, বাংলাদেশে কতটি আয়নাঘর আছে? তা আমরা জানতে পারিনি। বাংলাদেশে যদি বন্দিশালা থাকে তাহলে বিচার বিভাগ, আদালত ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থাকার কোনো প্রয়োজন নেই। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এসব বন্দিশালা উন্মোচন না করা হলে ডিজিএফআই ও র্যাবসহ সন্দেহভাজন সব বন্দিশালা ঘেরাও কর্মসূচি দেওয়া হবে। এবং সব বন্দিশালা ভেঙে গুড়োগুড়ো করে দেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০১০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত যতগুলো গুম, খুন, অপহরণ হয়েছে তার শতকরা ৭০-৮০ শতাংশ র্যাব করেছে। ক্রসফায়ারের নামে নাটক সাজিয়ে বিচারবহির্ভূতভাবে মানুষ মারা হয়েছে। ২০১০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত র্যাবে দায়িত্বে থাকা ডিজি, এডিশনাল ডিজি, ডিবির প্রধান ও ডিজিএফআই প্রধান, সবাইকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানানো হয়।
মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, মেজর (অব.) সাজ্জাদ আহম্মেদ র্যাবের সোর্স হিসেবে কাজ করতেন। প্রতিটি সোর্সের আমরা বিচার চাই। র্যাবকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে নতুন বাহিনী হিসেবে করা হোক। বাংলার মানুষ র্যাবকে দেখতে চায় না। তারা একটি সন্ত্রাসী বাহিনী হিসেবে বিশ্বের দরবারে পরিচিত।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানকে উদ্দেশ্য করে বিল্লাল বলেন, শিক্ষার্থী ভাইবোনরা তাদের বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে নতুন করে এই দেশ স্বাধীন করেছে। তবে এখনো ২০ ভাগ বাকি আছে পুরোপুরিভাবে স্বাধীন হতে। আশা করি, আবারো ছাত্র বিপ্লবের মাধ্যমে বাকি ২০ ভাগও স্বাধীন হয়ে যাবে।
গুম অপহরণ হওয়া প্রতিটি ব্যক্তিকে অতিদ্রুত তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। স্বজনহারা বা প্রতিটি পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। মাসিক ভাতা অতিদ্রুত চালু করতে হবে। যারা গুম, খুন, অপহরণের সঙ্গে জড়িত তাদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে র্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক আটকের পর গুম ও নিখোঁজ হওয়া অর্ধশতাধিক পরিবারের স্বজনরা।
সান
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত