আল-কাসসাম ব্রিগেডের হামলায় ‘ঘুম হারাম’ ইসরায়েলের 

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৫ মে ২০২১, ০৯:৫২ |  আপডেট  : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১:৫২

গত কয়েকদিন ধরে ইসরায়েলের প্লেন হামলায় শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনে হামলার প্রতিবাদে হামাসের পাল্টা দেড় সহস্রাধিক রকেট হামলায় দিশেহারা ইসরায়েল। এ অবস্থায় ফিলিস্তিনের গাজা সীমান্তে বিপুল পরিমাণ সেনা ও ট্যাঙ্ক মোতায়েন করেছে ইসরায়েল।

২০১৪ সালের পর চলতি বছরে ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগঠন হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সংঘর্ষে এ পর্যন্ত ইসরায়েলে দেড় হাজারের বেশি রকেট ছুঁড়েছে হামাস। সেই সঙ্গে আরও হামলার হুমকি দিয়েছে তারা।  

হামাসের রয়েছে শক্তিশালী সেনা সংগঠন। আর এর মূলে রয়েছে যে ব্রিগেড তার নাম ‘আল-কাসসাম’। ১৯৯০ সালের আগে হামাসের সামরিক শাখা সবার কাছে অপরিচিত ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে সে বছরে এ সামরিক শাখার কার্যক্রম উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায়।

১৯৩৫ সালে ফিলিস্তিনের শহর ইয়া’বাদে ব্রিটিশ সৈন্যদের গুলিতে নিহত সিরিয়ান মুক্তি আন্দোলনের নেতা ‘এজ্জেদিন-আল-কাসসাম’। তার নাম অনুসারে এ সামরিক শাখার নাম দেওয়া হয় ‘আল-কাসসাম’ ব্রিগেড। আল-কাসসাম ব্রিগেডেন আগে এবং হামাস প্রতিষ্ঠার অনেক আগে থেকেই ভিন্ন নামে চলে আসছিল, যার মধ্যে রয়েছে- ‘ফিলিস্তিন মুজাহেদিন’ এবং ‘মাজদ’ এর মতো গ্রুপ।

১ জানুয়ারি ১৯৯২ সালে তাদের প্রথম অপারেশনের ঘোষণা দিয়ে আত্মপ্রকাশ করে ‘আল-কাসসাম ব্রিগেড’। এ ব্রিগেডের একটি অংশ দরনসশান নামে একজন ইসরায়েলি রাবাইকে (ইসরায়েলি ধর্মযাজক) হত্যা করে। এক ঘোষণার মাধ্যমে হামাস আল-কাসসাম ব্রিগেডকে তাদের মিলিটারি শাখা হিসেবে ঘোষণা করে। শুরুতে সীমিত সংখ্যক সৈন্য নিয়ে শুরু করা এ ব্রিগেড এখন গাজার একটা বড় অংশ জুড়ে আছে।  

নিজেদের ২০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে এক বুলেটিনে তারা জানায়, কেবল গাজাতেই তাদের সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি। এটি একটি সত্যিকারের সেনাদল, যেটিতে সেনাদের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে কোম্পানি, ব্যাটালিয়ন এবং ব্রিগেড।

বুলেটিনে জানানো হয়, নর্দার্ন গাজা ব্রিগেড, গাজা ব্রিগেড, সেন্ট্রাল গাজা ব্রিগেড এবং সাউর্দার্ন গাজা ব্রিগেড নামে আল-কাসাসামের চারটি ব্রিগেড আছে; যার মূল সৈন্য সংখ্যা অন্তত ৫০-৬০ হাজার।  

একটি পিস্তল নিয়ে শুরু হয় এ সামরিক শাখা, এরপর অস্ত্রাগারে যোগ হয় একটি রাইফেল এবং এরপরে নিজেদের তৈরি মেশিন গান। ধীরে ধীরে ‘হোয়াজ’ এর মতো বিস্ফোরক যন্ত্র, আত্মঘাতী হামলার জন্য বেল্ট এবং দূর থেকে হামলার জন্য বিস্ফোরক যন্ত্র যোগ হয়।

২০০১ সালের ২৬ অক্টোবর আল-কাসসাম ব্রিগেড স্থানীয়ভাবে তৈরি রকেট দিয়ে ইসরায়েলে হামলা চালায়। এ রকেটের নাম ছিল ‘কাসসাম-১’। এ ঘটনা উল্লেখ করে টাইমস ম্যাগাজিন ‘একটি পুরোনো রকেট যেটি মধ্যপ্রাচ্যকে বদলে দিতে পারে’ নামে শিরোনাম করে। ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ব্যবহার করা হয় ‘কাসসাম-২’। এর মধ্যে ২০১২ সালের এক যুদ্ধে তারা এম-৭৫ ব্যবহার করে। এ সময় যুদ্ধে তারা ইসরায়েলের হাইফা শহরকে লক্ষ্য করে আর-১৬৯ রকেট ব্যবহার করে।  

বিশ্বের অন্যান্য দেশের সেনাবাহিনীর মতো আল-কাসসাম ব্রিগেডের ইঞ্জিনিয়ারিং, এরিয়াল, আর্টিলারি এবং আত্মঘাতী স্কোয়াড রয়েছে। ইসরায়েলের সামরিক আগ্রাসন মোকাবিলার জন্য আল কাসসাম বিভিন্ন প্রযুক্তিগত উন্নতি সাধন করেছে। আল-কাসসামের মিলিটারি শাখা ‘আল-বাত্তার’, ‘আল-ইয়াসিন’ নামের কামান বিধ্বংসী গোলা তৈরি করে, যেটি ইসরাইলের সবচেয়ে শক্তিশালী মেরকাভা কামান ধ্বংস করতে সক্ষম।

এছাড়া তারা ইসরায়েলের কিছু সেনাকে আটক করতে সক্ষম হয়, যার মধ্যে একজন ছিল গিলাত শালিত। ২০০৫ সালে কর্তব্য পালনরত অবস্থায় তারা তাকে আটক করে। ২০১১ সালে ১০৫০ জন বন্দি ফিলিস্তিনির বিনিময়ে তাকে মুক্তি দেয়। এই ব্রিগেড ২০০৮ এবং ২০১২ সালে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ইসরায়েলের অনেক ক্ষতি করে।  

আল-কাসসাম ব্রিগেডের বর্তমান প্রধানের মান মোহাম্মদ-আল-দেইফ। ইসরায়েল একাধিক বার তাকে হত্যার চেষ্টা করেছে। তার নেতৃত্বেই আরও শক্তিশালী হয়ে ইসরায়েলের ঘুম হারাম করে দিচ্ছে আল-কাসসাম ব্রিগেড।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত