আমি আর কত বলব: প্রধান বিচারপতি
প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২১, ১৯:০৬ | আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩:৩২
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, বিচার বিভাগ পৃথককরণ হয়েছে ২০০৭ সালে, আজকে ২০২১। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট ভবনের জন্য সব জায়গা এখনো অধিগ্রহণ হয়নি, তারপরে বিল্ডিং করতে হবে। আমি আর কত বলব ?
আপিল বিভাগের ভার্চুয়াল কোর্টে বিচারিক কার্যক্রমের শেষ পর্যায়ে আজ রোববার প্রধান বিচারপতি এ কথা বলেন। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের ভার্চুয়াল আপিল বেঞ্চে আজ বিচারিক কার্যক্রম চলে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, আমাদের জুডিশিয়াল অফিসার (বিচারিক কর্মকর্তা) দরকার দ্বিগুণ ও তিন গুন। আইনজীবীরা যদি ভার্চুয়াল কোর্ট করেন, তাহলে একমাত্র উত্তরণের পথ আছে। তা না হলে ত্রিশ লাখ মামলা কোনো দিন শেষ হবে না।
এ সময় আইনজীবী সমিতির সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘ভার্চ্যুয়াল কোর্টের সংখ্যা বাড়িয়ে দেন মাই লর্ড।’ তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচারক নিয়োগ, বিচারক ডাবল-ট্রিপল করা দরকার। বিচার বিভাগ পৃথককরণ হয়েছে ২০০৭ সালে, এখনো চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট বিল্ডিংয়ের জন্য সব জায়গা অধিগ্রহণ হয়নি। গাজীপুরের মতো জায়গায়…মন্ত্রী সাহেবকে বারবার বলি এটি তাড়াতাড়ি শেষ করেন।
জায়গা নিয়ে গোলমাল, দুই-তিন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে—এটি সুরাহা হয় না। ২০০৭ বিচার বিভাগ পৃথক হয়েছে, আজকে ২০২১। এখনো জায়গা অধিগ্রহণ হয়নি, তারপরে বিল্ডিং করতে হবে। আমি আর কত বলব ?
আদালতে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এফ হাসান আরিফ বলেন, বহুতলবিশিষ্ট ভবনের জন্য নির্দেশনা দিতে পারেন। এ ছাড়া উপায় নেই, কেননা আমাদের জমিও কম। তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, যেভাবে মামলা বিচারাধীন, দরকার হচ্ছে দুই থেকে তিন গুন বেশি জজ।
ভার্চ্যুয়ালি উপস্থিত অপর আইনজীবী মো. ওজি উল্লাহ বলেন, মামলা দায়েরের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। আগের চেয়ে এখন মামলা দায়েরের হারও বেশি। তাকে উদ্দেশ্যে করে প্রধান বিচারপতি বলেন, নিম্ন আদালতে দুইটার পরে আইনজীবীরা সব বাসায় গিয়ে ঘুমিয়ে যায়। আইনজীবী ওজি উল্লাহ বলেন, দেওয়ানি মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবীরা এটি করে থাকেন।
প্রথমে জীবন, তারপর জীবিকা
এই পর্যায়ে সমিতির সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস বলেন, রোজা, সামনে ঈদ—হাইকোর্টের বেঞ্চ বাড়ানোর বিষয়টি যদি একটু বিবেচনা করতেন।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, আমি পুরো আদালত বন্ধ করি নাই। এ অবস্থায় পুরো আদালত বন্ধ থাকা উচিত ছিল, তাও কোর্ট চলছে। ধন্যবাদ জানাবেন সরকারকে যে আইনটি (আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার আইন) করে দিয়েছে। এখনো ভারতে ও পাকিস্তানে আইন হয়নি।
আপিল বিভাগের বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, মি. রুহুল কুদ্দুস সমস্যা হচ্ছে কি—এখন হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগে ১৪০-১৪৫ জন স্টাফ আসেন। যদি হাইকোর্টে এখন ৩০-৪০ কোর্ট বা হাইকোর্ট সব ভার্চ্যুয়ালি খুলে দেওয়া হলে আমাদের যে প্রায় আড়াই হাজার স্টাফ আছে, সব চলে আসতে হবে। তা না হলে কোর্ট চালানো যাবে না।
এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, আপিল বিভাগ চলে মাত্র ৪০ জন স্টাফ দিয়ে। ছয় বিচারপতির জন্য ৪০ জন নয় ৩৬ জন স্টাফ আসে। তাও বয়স্ক ও মহিলা বাদ দিয়ে আপিল বিভাগে ৩৬ জন স্টাফ এবং হাইকোর্টে বিভাগে আসে ১০০ জন। প্রধান বিচারপতি বলেন, আইনজীবীদের অসুবিধা হচ্ছে এটি আমরা বুঝি। কিন্তু জীবনও তো আছে। জীবনের সঙ্গে জীবিকাও লাগবে। দুটি লাগবে একসঙ্গে। জীবন-জীবিকা পাশাপাশি যায়। প্রথম জীবন তারপরে জীবিকা।
সমিতির সম্পাদকের উদ্দেশ্যে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী বলেন, আমাদের যে স্টাফ আছে, তাদের প্রত্যেকের পরিবার আছে। সব স্টাফ যদি আমরা কোর্টে নিয়ে আসি, আক্রান্ত যদি হয়—এর দায়িত্ব কে নেবে ?
প্রধান বিচারপতি বলেন, দশটি বেঞ্চের জন্য স্টাফ আনতে হবে এক হাজার। এখন এক হাজার স্টাফ আনতে আমি সাহস করি না। পরে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘দেখেন আগামী বুধবার কি হয়। সবাই ভালো থাকেন এবং বাসায় থাকেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কথা বলছি-‘স্টে হোম, স্টে সেফ।’
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত